সব দেশ বাংলাদেশের সাথে ব্যবসা বাড়াতে চায় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বুধবার (২৯ মার্চ) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাকিদকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভূ-রাজনৈতিক কারণে আমাদের ইমেজ বেড়েছে। সবাই এখন আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে চায়, ব্যবসা বাড়াতে চায়। আমরা চাই স্বচ্ছ ও সুন্দর নির্বাচন হোক। যুক্তরাষ্ট্রও চায়। তাদের দেশে গণতন্ত্র নিয়ে সমস্যা। গত নির্বাচনে (মার্কিন নির্বাচন) তাদের দেশের অন্য দল বিশ্বাসই করেনি, আমেরিকার নির্বাচন স্বচ্ছ হয়েছে।
মোমেন বলেন, তাদের দেশে গণতন্ত্র দুর্বল। তাই তারা গণতন্ত্রকে আরও সোচ্চার করতে দেশে-বিদেশে চেষ্টা করছে। আমরাও চেষ্টা করছি। এসব যদি তারা বলেন, নাথিং রং। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়ার জন্য আমরা স্বচ্ছ ইনস্টিটিউশন তৈরে করেছি। স্বচ্ছ ব্যালেট বাক্স তৈরি করেছি, ছবিযুক্ত ভোটার আইডি করেছি।
গণতন্ত্রের জন্য বাংলাদেশের অন্যের কাছ থেকে সবক নিতে হবে না বলেও মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের জন্য আমাদের অন্যের কাছ থেকে সবক নিতে হবে না। কারণ, আমরাই একমাত্র দেশ যারা গণতন্ত্রের জন্য, ন্যায় বিচারের জন্য মানবিকতার জন্যে ৩০ লাখ লোক প্রাণ দিয়েছি। এটা অনেকে ভুলে যান, অন্য কেউ এত প্রাণ দেয় নাই।
‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র অত্যন্ত পরিপক্ব। শেখ হাসিনার কারণে বাংলাদেশের গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হয়েছে।’ বক্তব্যে যোগ করেন মোমেন।
এ সময় মন্ত্রী বিএনপি সরকারের আমল তথা ২০০১-০৬ শাসন আমলে দেশে গণতন্ত্র ছিল না বলেও অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ২০০১-০৬ সালে গণতন্ত্র ছিল না। তখন জিহাদী ছিল, সন্ত্রাসী ছিল।
আগামী নির্বাচন স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার বার্তা দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, গত ১৪ বছরে শেখ হাসিনা সরকারে অধীনে অনেক নির্বাচন হয়েছে, সেগুলো স্বচ্ছ হয়েছে। এক হাজারের মধ্যে পাঁচটা হয়তো প্রশ্নবিদ্ধ, আর সব স্বচ্ছ হয়েছে। আমরা আশা করি, আগামীতেও আমাদের নির্বাচন স্বচ্ছ, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য হবে। শেখ হাসিনা সরকার সুন্দর ও স্বচ্ছ নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর।
তবে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সরকারের একার পক্ষে করা সম্ভব নয় বলেও মনে করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সরকারের একার দায়িত্ব নয়। যারা ভোটার তাদের দায়িত্ব, বিভিন্ন সরকারি কর্মচারী যারা নেতৃত্বে থাকবেন তাদের দায়িত্ব। আরও বড় দায়িত্ব হলো রাজনৈতিক দলের।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্বাধীনতা দিবসে পাওয়া শুভেচ্ছা বার্তা গণতন্ত্র কিংবা নির্বাচন প্রসঙ্গের উল্লেখে সরকার চাপ অনুভব করছে কী না? -এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা চাপ অনুভব করি না। আপনারা মিডিয়া চাপ অনুভব করতে পারেন। আমরা দেশের মানুষের জন্য যেটা ভালো, সেটাই করি। দেশি মানুষকে বিশ্বাস কির, বিদেশি কে মাতব্বরি করল, সেটা আমাদের…।
সৌদি আরবে ওমরা পালন করতে গিয়ে বাস দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া বাংলাদেশিদের মরদেহ দেশে ফেরানো নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, সরকারতো সবার মরদেহ নিয়ে আসে। যারা অস্বচ্ছল তাদের মরদেহ সরকার দেশে নিয়ে আসে।
ওমরা পালন করতে গিয়ে মারা যাওয়াদের মরদেহ সরকারি ব্যবস্থায় ফেরানোর প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা আমি এখন বলতে পারব না। আমাকে জেনে জানাতে হবে। সাধারণত বিদেশে মারা গেলে অস্বচ্ছলদের সরকারি পয়সায় মরদেহ নিয়ে আসি।
এর আগে, জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠান শেষে কানাডার ‘বেগম পাড়ায়’ সম্পদের পাহাড় গড়াদের তালিকা প্রকাশ করা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বিদেশি সরকারদের একটি আইন আছে, প্রাইভেসি অ্যাক্ট। এ আইনের মাধ্যমে তারা আমাদের দেশের লোকেরা যারা টাকা নিয়ে গেছে, তাদের তথ্য দিতে নারাজ। ইনডিরেক্টলি তারা এটা নিরুৎসাহিত করে।
তিনি বলেন, টাকা নিয়ে ওইদেশে যারা যায় তাদের তথ্য বিদেশি সরকার আমাদের দেয় না। সরকারি তথ্য না হলে… আমরা যে তথ্য পেয়েছি, সেগুলো বেসরকারি তথ্য। বেসরকারি তথ্যের বেসিসে আপনি খুব একটা অ্যাকশন নিতে পারবেন না।
বিদেশি সরকারের কাছ থেকে বাংলাদেশ সরকার তথ্য চেয়েছে কী না? -জানতে চাইলে মোমেন বলেন, আমরা চেয়েছি, তারা তাল বাহানা করে। তারা একটা না একটা আইন দেখায়। তবে এটার দায়িত্ব কিন্তু দুদকের। তারা এগুলো দেখবে। তারা বড় সংস্থা, তাদের টাকা পয়সা আছে।