নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন পুঁজিবাজারে সুশাসন নিশ্চিতে অনেকগুলো সাহসী পদক্ষেপ নিলেও এখন পর্যন্ত মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।অথচ বিনিয়োগকারীদের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে।বেশকিছু কারণে বাংলাদেশে মিউচ্যুয়াল ফান্ড জনপ্রিয় হতে পারেনি। অথচ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে মিউচুয়াল ফান্ড খুবই জনপ্রিয়।কিন্তু আমাদের দেশে মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। একদিকে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো বিনিয়োগকারীদের ভালো মুনাফা দিতে পারছে না, অন্যদিকে শেয়ারবাজারকে সাপোর্টের ক্ষেত্রেও কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। ফলে মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে আস্থাহীনতা। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সার্বিক পুঁজিবাজারেও।
বাজার বিশ্লেষনে দেখা গেছে, অধিকাংশ মিউচুয়াল ফান্ডের দর অভিহিত মূল্যের নিচে।বর্তমানে তালিকাভুক্ত ৩৭ টি মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে।এর মধ্যে ৩৪ টি মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট দর অভিহিত মূল্যের নিচে অবস্থান করছে।আর মাত্র তিনটি মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট দর অভিহিত মূল্যের সামান্য উপরে রয়েছে।এ চিত্র থেকেই প্রমান হয় এ খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের কতটা অনাগ্রহ রয়েছে।মিউচুয়াল ফান্ডের (মেয়াদী এবং বে-মেয়াদী) উদ্যোক্তাদের ১০ শতাংশ ইউনিট ধারন করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা শুধু কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ রয়েছে মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানগুলো তথ্য গোপন করে থাকে। শেয়ারবাজারের বাহিরে কোথাও বিনিয়োগ থাকলে সেটা সুনির্দিষ্টভাবে বিস্তারিত জানানো হয় না।এমনকি পোর্টফলিওতে যেসব শেয়ারে বিনিয়োগের কথা বলা হয়, সেসব শেয়ারে বিনিয়োগ থাকে কি না সেটা নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে তদন্ত করার দাবি জানিয়ে আসছে বিনিয়োগকারীরা।
শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এ খাতে স্বচ্ছতা বাড়ানো জরুরি। সে জন্য এ খাতের কিছু সংস্কার করা দরকার। বর্তমানে মোট ফান্ডের ২.৫ শতাংশ কমিশন দেয়া হয় ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানকে। সেখানে ওই ফান্ডের লাভ-ক্ষতির কোনো শর্ত নেই। ফলে ফান্ড ব্যবস্থাপনা কোম্পানির দায়বদ্ধতা অনেক কম থাকে। এখানে প্রয়োজনে তাদের কমিশন দেয়ার ক্ষেত্রে শর্ত হিসাবে লাভ-ক্ষতির হিসাব রাখা যেতে পারে। আবার ফান্ড ব্যবস্থাপকদের কে তদারকি করবে সেটাও ঠিক করা নেই। তারা শুধু এক এক প্রান্তিকে তাদের এনএভি প্রকাশ করে। আর বিএসইসিতে রিপোর্ট জমা করে। এর বাইরে কোনো ধরনের তদারকি নেই।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ফান্ড ম্যানেজারদের ব্যর্থতার কারণে মিউচুয়াল ফান্ডের এ অবস্থা। ফান্ড ম্যানেজারের দায়িত্বে যারা আছেন তাদের অধিকাংশই অদক্ষ অথবা অসৎ। বিনিয়োগকারীদের কথা চিন্তা না করে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য তারা অনৈতিকভাবে ব্যক্তিগত ঋণ দিচ্ছেন।ভারতে মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগের ক্ষেত্রে খুবই জনপ্রিয়।ফলে শক্তিশালী পুঁজিবাজার গঠনে মিউচুয়াল ফান্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অথচ আমাদের দেশে তার উল্টো। মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে আরো বেশি শক্তিশালি করা দরকার বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে অর্থসংবাদকে বলেন, মিউচুয়াল ফান্ডের মূল্য অভিহিত মূল্যের নিচে নামার প্রধান কারণ হতে পরে তারা বিনিয়োগকারীদের ঠিকমতো মুনাফা দিতে পারছে না। ঠিকমতো মুনাফা দিতে না পারায় নতুন বিনিয়োগকারীরা মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন না।মিউচুয়াল ফান্ডের এ অবস্থার জন্য ফান্ড ম্যানেজারদের ব্যর্থতা একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। মিউচুয়াল ফান্ডের উদ্দেশ্য হলো তারা একটি পোর্টফোলিও তৈরি করবে, যাতে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি কমে যাবে। কিন্তু তাদের পোর্টফোলিও নির্বাচন যদি সঠিক না হয়, তাহলে তো বিনিয়োগকারীদের মুনাফা দিতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা হুজুগে মাতে।৩৭টি মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে। যা সংখ্যায় অনেক বেশি।আমাদের দেশের মত ছোট অর্থনীতির দেশে এত মিউচুয়াল ফান্ডের দরকার ছিল না। আমার সময়ে দুটির মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছিলাম। যেসব মিউচুয়াল ফান্ড দেয়া হয়েছে, তাদের ব্যবসায়িক ভলিউম কম। যে কারণে তারা যথাযথ বিনিয়োগ করতে পারছেন না।