এ ব্যাপারে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণায় সূত্রে জানা গেছে, এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এখন থেকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঠানো হবে। উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে দেশের আট বিভাগের আট ইউনিয়নে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে সমাজসেবা অধিদফতর। পরীক্ষামূলক কার্যক্রমে সফল হলে পর্যায়ক্রমে সারাদেশে উপকারভোগীদের কাছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেই পৌঁছে দেওয়া হবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা।
মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যানুযায়ী, বয়স্ক-বিধবা ও প্রতিবন্ধী মিলিয়ে বর্তমানে দেশে ভাতাভোগীর সংখ্যা সাড়ে ৮৭ লাখ। এদের মধ্যে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন ৪৯ লাখ মানুষ, বিধবা ভাতা পাচ্ছেন ২০ লাখ ৫০ হাজার জন নারী। এর বাইরেও ১৮ লাখ প্রতিবন্ধীকে ভাতা দেয় সরকার। বয়স্ক ও বিধবারা প্রতি মাসে পাঁচশ টাকা এবং প্রতিবন্ধীরা মাসে পান ৭৫০ টাকা করে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সারাদেশে প্রতিবছরই ভাতাপ্রাপ্তদের সংখ্যা বাড়ছে। আর এর সঙ্গে সঙ্গে সঠিক সুবিধাভোগী চিহ্নিত করা এবং সুবিধাভোগীদের হাতে টাকা সঠিকভাবে পৌঁছানোর মতো কার্যক্রমগুলোতে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির অভিযোগও বেশি বেশি আসছে। তাই সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির এই কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনতে চায়। একইসঙ্গে ভাতাভোগীরা যেন নিজ নিজ অ্যাকাউন্টে টাকা কোনো ঝামেলা ছাড়াই টাকা পান, সেটিও নিশ্চিত করতে চায় সরকার।
কর্মকর্তারা আরও বলছেন,অনেকেই আবার ভাতা পাওয়ার উপযোগী না হয়েও ভাতা নিচ্ছেন। এতে সরকারের অর্থের অপচয় হচ্ছে। অন্যদিকে যার প্রয়োজন, তিনি পাচ্ছেন না। ফলে তিনি বঞ্চিত হচ্ছেন। আবার ব্যাংকের মাধ্যমে ভাতা সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধীরা নানা সমস্যায় পড়ছেন। সার্বিক বিষয় চিন্তা করেই সরকার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এসব ভাতার অর্থ পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
এই পরিকল্পনা অনুযায়ী নগদ, বিকাশ, রকেট ও শিওর ক্যাশের মাধ্যমে এ সুবিধা পাঠানো হবে। প্রতিটি কোম্পানি দুইটি করে ইউনিয়নে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ভাতাভোগীকে কোনো ধরনের ফি পরিশোধ করতে হবে না। উল্টো মোবাইল অ্যাকাউন্ট থেকে নগদ ক্যাশ হাতে পেতে যে চার্জ দরকার হয়, তা ভাতার সঙ্গে দিয়ে দেওয়া হবে। নগদ, রকেট, বিকাশ ও শিওর ক্যাশে টাকা তুলতে কোম্পানি ভেদে সাড়ে ১৭ টাকা থেকে সাড়ে ১৮ টাকা খরচ হয়। এর মধ্যে সরকার প্রতি হাজারে সাত টাকা দেবে। বাকি খরচ বহন করবে ফোন কোম্পানিগুলো।
এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, এ সংক্রান্ত একটি পাইলট প্রকল্পের কাজ চলছে। ডেমোর মাধ্যমে দেখা হবে ভাতার সুবিধাভোগীরা ঠিকমতো ভাতা নিতে পারছেন কি না। সবার নিজস্ব মোবাইল আছে কি না, যদি না থাকে তবে অন্যের মোবাইল ব্যবহার করে নিতে পারছেন কি না— এই বিষয়গুলো নিবিড়ভাবে মনিটরিং করা হবে। যদি দেখা যায় উপকারভোগীরা সহজে ভাতা সংগ্রহ করতে পারছেন, তাহলে পর্যায়ক্রমে সারাদেশে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্প পরিচালক জানান, এরই মধ্যে দেশের চারটি মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমাজসেবা অধিদফতর বৈঠক করেছে। তাতে ইতিবাচক সাড়া মিলেছ।
প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়া কান্দি ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লা জেলার লাইমাই উপজেলার বাগমারা ইউনিয়ন, সিলেট বিভাগের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালাবাজার ইউনিয়ন, রংপুর বিভাগের লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়ন, রাজশাহী বিভাগের নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজিপুর ইউনিয়ন, খুলনার দাকোপ উপজেলার কামারখোলা ইউনিয়ন, বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলার লর্ড হার্ডিঞ্জ ইউনিয়ন এবং ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নে পরীক্ষামূলকভভাবে মোবাইল ফোনে সামাজিক সুরক্ষা ভাতা বিতরণের কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই আট ইউনিয়নের মোট ১৩ হাজার ৮৮৫ জন ভাতাভোগীর মাঝে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ভাতা দেওয়ার এই পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালানো হবে। এদের মধ্যে ৭ হাজার ৫৮৭ জন বয়স্ক ভাতা, ৮১৮ জন বিধবা ভাতা এবং ৪৪০ জন প্রতিবন্ধী ভাতা পান। এ উদ্যোগে সফল হলে সারাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীরা নিজের মোবাইল ব্যাংক থেকেই সহজে টাকা তুলতে পারবেন।