রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানির তীব্র সংকট

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানির তীব্র সংকট
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। প্রচণ্ড দাবদাহে পানির অভাবে সাধারণ মানুষ হন্যে হয়ে ঘুরছে। সামর্থ্যবানরা পানি কিনে চাহিদা মেটালেও সাধারণ মানুষ পড়ছে বিপাকে। তাদের একমাত্র ভরসা ঢাকা ওয়াসার গাড়িতে সরবরাহ করা পানি।

তবে সংস্থাটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, পানির কোনো সংকট নেই। তীব্র যানজটের কারণে পানি সরবরাহ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে আগামীকাল থেকে আবার আগের মতো পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।

রাজধানীর মাতুয়াইল, জুরাইন, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও, উত্তর বাড্ডা, মধ্য বাড্ডা, কুড়িল, ভাটারা, রূপনগর, কালাচাঁদপুর, মিরপুর, আগারগাঁও, রায়েরবাজারসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়েকদিন ধরেই এসব এলাকায় পানির সংকট রয়েছে। কিছু এলাকার পানিতে দুর্গন্ধও পাচ্ছেন এলাকাবাসী।

ঢাকা ওয়াসার জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তফা তারেক বলেন, পানির কোনো সংকট আপাতত নেই। তবে গাড়িতে পানি সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় কোনো কোনো এলাকায় পানির সাময়িক সংকট চলছে। তবে আগামীকালের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।

এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন, ধীরে ধীরে শহর ফাঁকা হচ্ছে। যানজট কমে গেছে। পানি সরবরাহে বাধা দূর হবে। তাই পানির সরবরাহে কোনো সমস্যা থাকবে না। নগরবাসী পানি পাবেন। তিনি আরও জানান, ওয়াসা দৈনিক ২৭০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করে। চাহিদা হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ কোটি লিটার।

ওয়াসা ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে উৎপাদনের ৬৬ ভাগ পানি আহরণ করে। বাকি ৩৪ ভাগ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে সংগ্রহ করে তা নগরবাসীর জন্য সরবরাহ করে ওয়াসা। জানা গেছে দৈনিক ১ হাজার ৪৯২ গাড়িতে করে সমস্যাগ্রস্ত এলাকায় পানি সরবরাহ করে ওয়াসা। মোস্তফা তারেক জানান, ভূগর্ভস্থ পানির উৎসে পানি স্বল্পতা রয়েছে। বৃষ্টি হলে পানি আহরণ ও সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে। বৃষ্টি না থাকায় পানির স্তর আরও নিচে নেমে গেছে বলে জানান তিনি।

রাজধানীর মাতুয়াইলের ডগাইর এলাকার মাজার রোডের বাসিন্দা শমসের আলী। গত কয়েকদিন ধরে এ এলাকায় ওয়াসার পানি সরবরাহ নেই। ওয়াসার লাইনের পাইপ ফেটে যাওয়ায় এমনটা হয়েছে বলে জানান তিনি। তাই বাধ্য হয়ে পানি কিনে এবং যেসব স্থানে গভীর নলকূপ বসানো আছে সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করে তাদের দৈনন্দিন কাজ সম্পন্ন করছেন।

নগরবাসী জানান, প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেল বিভিন্ন স্থানে ওয়াসার লাইনে পানি নেই। এ ব্যাপারে অভিযোগ জানানো হলেও অদ্যাবধি তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। লাইনের পাইপ ফেটে যাওয়ার বিষয়টি অজুহাত হিসাবে দেখাচ্ছে। মাতুয়াইল এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, এলাকায় বরাবরই ওয়াসার পানিতে সমস্যা। নির্দিষ্ট সময়ে পানি ধরে রাখতে হয়, আবার ২-১ দিন পানি থাকেই না। পানিতে গন্ধ তো আছেই।

তাই আমরা কয়েকজন বাড়িওয়ালা মিলে গভীর নলকূপ বসিয়ে নিয়েছি। অনুমোদন নেই বলে চুরি করে চালাতে হয়। পানির এত সমস্যা থাকলে মানুষ তো একটা না একটা পন্থা বের করে নেবেই। সেটার অনুমোদন আছে কি নেই সেটি ভাববার সময় কোথায়-সমস্যা সমাধান করাটাই জরুরি-মন্তব্য করেন তিনি। শুধু মাতুয়াইল এলাকায়ই নয়, বেশ কয়েকদিন ধরে রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় ওয়াসার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

রাজধানীর বাড্ডার কুমিল্লাপাড়া এলাকায় গত ৩-৪ দিন ধরে পানির সংকট। তাই বাধ্য হয়ে অনেকেই ওয়াসার গাড়ির পানি কিনে ব্যবহার করছেন। এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা সুরুজ আলী বলেন, দিনে দু-একবার করে পানি আসে। তা দিয়েই সব কাজ করতে হয়।

তাই বাধ্য হয়ে মাঝে মাঝে পানি কিনে খেতে হচ্ছে। শাহজাদপুরের খিলবাড়িরটেক এলাকার বাসিন্দা সাবিনা হক বলেন, এলাকায় গত এক বছর ধরেই পানির সমস্যা। নির্দিষ্ট সময়ে পানি ধরে রাখতে হয়। তবে ইদানীং এ সমস্যা আরও বেড়ে গিয়েছে। দিনে একবার কোনোভাবে পানি আসে, সেটা সংরক্ষণ করে রেখেই কাজ সারতে হয়। মাঝে মাঝে গোসল না করেই থাকতে হয়।

ভাটারা এলাকার বাসিন্দা শিপন শেখ বলেন, পানির সংকটের বিষয়ে বারবার ওয়াসার আঞ্চলিক কার্যালয়ে অভিযোগ জানিয়েও এর প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। পানির সংকটের কারণে এ এলাকার প্রতিটি বাড়িতে মানুষ খুব কষ্টে আছে।

ওয়াসা বলছে, পানির সমস্যা সমাধানে ঢাকায় প্রায় ৯২০টি পাম্পের মধ্যে ১০০টির বেশি পাম্পে বোরিং করাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ওয়াসা বলছে, বোরিং কাজ শেষ হলে পানির সমস্যার সমাধান হবে অনেকটাই। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গন্ধবপুর পানি শোধনাগার চালু হলে ভূগর্ভের পানির ওপর নির্ভরতা অনেকাংশে কমে আসবে।

ভাটারা এলাকার ওয়াসার আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে আমরা বোরিং করে পাম্পগুলোতে আরও পাইপ বসাচ্ছি। এ কাজ শেষ হলে আশা করা যায়, পানির সংকট আর থাকবে না।

এছাড়াও রায়েরবাজারের সুলতানগঞ্জ এলাকায় ছয়টি গলিতে বেশিরভাগ ভবনেই নেই পানি সরবরাহ এবং তাদের এ সমস্যা কুরবানির ঈদের আগে থেকে। মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকায় ১৪ নম্বর সড়কেও একই অবস্থা। এখানেও বেশিরভাগ বাড়িতে রয়েছে পানির সংকট।

ওয়াসা বলছে, ঢাকায় পানির চাহিদা বাড়ার কারণে ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নামছে। আগে যেখানে পাম্প থেকে প্রায় ৩ হাজার লিটার পানি পাওয়া যেত সেখানে এখন এক থেকে দেড় হাজার লিটার পানিও উত্তোলন করা যাচ্ছে না। ওয়াসার প্রায় ৯২০টি পানির পাম্পের মধ্যে ১০০টিরও বেশি পাম্প বিকল হয়ে পড়েছে।

বনশ্রীর দুই হাজার পরিবার পানিবিহীন : ডেমরা প্রতিনিধি জানান, রাজধানী ঢাকার রামপুরা থানাধীন বনশ্রীতে ২ হাজার পরিবার পানিবিহীন অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ওয়াসার এমডিসহ ওয়াসার সাপ্লাই উইংসে বারবার যোগাযোগ করেও কোনো সুরাহা মেলেনি। আর তাতে স্থানীয়রা ফুঁসে উঠেছেন।

জানা যায়, ডিএনসিসির ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বনশ্রী ডি ব্লকের রেডিয়েন্ট কৃষ্ণচূড়া (হাউজ-১, ২ রোড-৮) থেকে আশপাশের এলাকার গত ৩ দিন ধরে ওয়াসার পানি সরবরাহ নেই। এই এলাকায় রয়েছে প্রায় ২ হাজার পরিবার।

গত ৩ দিন ধরে খাওয়া-দাওয়া এবং গোসলের পানি মিলছে না স্থানীয়দের। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্টদের কাছে বারবার অভিযোগ করেও কেউ সাড়া দিচ্ছে না। ওয়াসার সাপ্লাই উইংসের অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি কামরুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করেও কোনো সমাধান হয়নি।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. লিয়াকত আলী মোবাইল ফোনে জানান, পানির সমস্যার বিষয়টি আমরা তিন দিন ধরেই চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে আমাদের জানিয়েছে। তবে রোজার সময় এমন বিষয় খুবই দুঃখজনক।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

রাজধানীতে সন্ধ্যার পর বন্ধ থাকবে যেসব সড়ক
শনিবার রাজধানীর মার্কেট বন্ধ যেসব এলাকায়
শুক্রবার রাজধানীতে যেসব মার্কেট বন্ধ
রাজধানীতে আজ যেসব মার্কেট বন্ধ
বুধবার রাজধানীতে যেসব মার্কেট বন্ধ
আজ ঢাকার বায়ু খুবই অস্বাস্থ্যকর
সোমবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ
গুলিস্তানে বাসে আগুন
রাজধানীতে যেসব মার্কেট বন্ধ শনিবার
রাজধানীতে যেসব মার্কেট বন্ধ বৃহস্পতিবার