গতকাল রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসি মিউচুয়াল ফান্ডের আর্থিক তথ্য প্রকাশ সংক্রান্ত বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপন অনুসারে, প্রত্যেক মিউচুয়াল ফান্ডের প্রান্তিক শেষ হওয়ার ৩০ দিন আগে ওই ফান্ডের পোর্টফোলিওতে কী কী শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট আছে, সেগুলোর ক্রয় মূল্য কত- সে তথ্য প্রকাশ করতে হবে। ফান্ডের ইউনিটধারীদের কাছে ই-মেইলে এই তথ্য পাঠানোর পাশাপাশি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করতে হবে। অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোকে ফান্ডের প্রান্তিক, অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
বিএসইসির এই নির্দেশনা স্বাগত জানিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মোঃ রকিবুর রহমান অর্থসংবাদকে বলেন, এই নির্দেশনা যুগান্তকারী। বিএসইসির এসব নির্দেশনার ফলে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ছে। রোববারের নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়িত হলে মিউচুয়াল ফান্ডে স্বচ্ছতা বাড়বে।এতদিন মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো যা খুশি তাই করেছে, এখন আর সেটা পারবে না। বিএসইসি যতগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছে সবগুলোই বাজারক উন্ ন্য়নে ভুমিকা রাখবে। বিএসইসির কঠোর ভুমিাকার ফলেই বেক্সিমকো সিনথেটিকস এর মত কোম্পানিও জনগনের টাকা ফেরত দিয়ে তালিকাচ্যুত হতে চায়।
এ বিষয়ে শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হাসান বলেন, বিএসইসির নির্দেশনা মিউচুয়াল ফান্ড ইন্ডাস্ট্রির গুণগত মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে। যদি যে ধরনের রিপোর্টিংয়ের কথা বলা হয়েছে, তার অনেকগুলো আগে থেকেই কার্যকর ছিল। কিন্তু কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান সেগুলো সঠিকভাবে পরিপালন করেনি। এবারের নির্দেশনার ফলে সেটির পরিপালন নিশ্চিত হবে।
আইডিএলসি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মাশুক হক বলেন, বিএসইসির বর্তমান কমিশন পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা বাড়ানোর জন্য নানামুখী যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, মিউচুয়াল ফান্ড সংক্রান্ত নির্দেশনা তারই ধারাবাহিকতা। এটি খুবই তাৎপর্যময়। যেসব রিপোর্টিংয়ের কথা বলা হয়েছে, তার অনেকগুলো আগে থেকে প্রযোজ্য হলেও পরিপালনের ক্ষেত্রে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে কিছুটা বিচ্যুতি ছিল। এবারের নির্দেশনার ফলে সেটির অবসান হবে আশা করা যায়।
তিনি আরও বলেন, ফান্ডের পোর্টফোলিও প্রকাশ হলে বিনিয়োগকারীরা বুঝতে পারবেন কোন কোম্পানির শেয়ার ও ফান্ডের ইউনিটে বিনিয়োগ করেছে ওই ফান্ড। ওই বিনিয়োগ কতটা যৌক্তিক এবং তা থেকে ফান্ডের রিটার্নের সম্ভাবনা কেমন সে সম্পর্কে কিছুটা অনুমান করতে পারবেন। তাছাড়া কোনো ফান্ড যদি প্রাইভেট ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ করে তাহলে সে তথ্য জেনে বিনিয়োগকারী সতর্কতামূলক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
মাশুক হক বলেন, একটি অভিন্ন ছকে তথ্য প্রকাশ করতে হবে বলে আগামী দিনে বিভিন্ন ফান্ডের তথ্য উপস্থাপন হবে একই ধরনের। তাতে সহজেই বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন ফান্ডের প্রকৃত অবস্থা এবং এগুলোর তুলনা করতে পারবেন।
তিনি বিএসইসির এসব সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি অনুরোধ করেন, বিএসইসিতে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে রিপোর্ট জমা দেওয়ার সুযোগ দেওয়ার। তাতে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোর রিপোর্টিং আরও সহজ হবে যা তাদের সময় ও খরচ সাশ্রয় করবে। পাশাপাশি একটি প্ল্যাটফরমে সব ফান্ডের আর্থিক তথ্য প্রকাশ করা যায় কি-না সেটি বিবেচনারও অনুরোধ জানান তিনি। তাতে বিনিয়োগকারীদেরকে বিভিন্ন ফান্ডের তথ্য জানতে একাধিক ওয়েবসাইট ঘাটতে হবে না। একসাথে সব তথ্য দেখে তারা ফান্ডগুলোর তুলনামুলক অবস্থান বুঝতে পারবেন, যা তাদের বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে।