শনিবার সকালে ব্রিটেনে প্রজাতন্ত্রের পক্ষে বিক্ষোভ থেকে কয়েকডজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ।
রাজতন্ত্রবিরোধী এসব ব্যক্তিরা ‘নট মাই কিং’ প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় নামেন, সেগুলোও জব্দ করে নিয়ে যায় পুলিশ।
ব্রিটিশ সংবাদপত্র গার্ডিয়ান জানিয়েছে, গ্রেপ্তারদের মধ্যে ‘রিপাবলিক’ ক্যাম্পেইনের প্রধান নির্বাহী গ্রাহাম স্মিথও রয়েছেন। ট্রাফালগার স্কয়ারে বিক্ষোভের মূল জায়গায় অন্য বিক্ষোভকারীদের জন্য পানীয় ও প্ল্যাকার্ড সংগ্রহ করার সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশের পক্ষ থেকে এর আগে বলা হয়েছিল, তারা রাজতন্ত্রবিরোধী বিক্ষোভের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে, যদি না বিক্ষোভকারীরা বিদ্যমান আইন ভঙ্গ করে গুরুতর ব্যাঘাত সৃষ্টি না করে।
কিন্তু শনিবার ‘রিপাবলিক’ গ্রুপ টুইটারে জানায়, “সকালে গ্রাহাম স্মিথ ও আমাদের টিমের পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। শত শত প্ল্যাকার্ড জব্দ করা হয়েছে। এটা কী গণতন্ত্র?”
ব্রিটিশ সংবাদপত্র ইন্ডিপেন্ডেন্ট জানিয়েছে, ট্রাফালগার স্কয়ার থেকে প্রজাতন্ত্র আন্দোলনের নেতা স্মিথকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেখানে মিছিল করার জন্য স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের কাছ থেকে অনুমতি চেয়েছিলেন রিপাবলিকের সমর্থকেরা।
গ্রেপ্তারের এই ঘটনায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ ও অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠনগুলো উদ্বেগ জানিয়েছে। তারা বলছে, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ আন্তর্জাতিক আইনে ‘স্পষ্টভাবে সুরক্ষিত’।
বিষয়টি নিয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন মুখপাত্র জানান, উৎপাত সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করার সন্দেহে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বিক্ষোভে ব্যবহৃত সরঞ্জামগুলো জব্দ করা হয়েছে। এর বেশি কিছু তিনি জানাননি।
ভিডিও ফুটেজগুলোতে দেখা যায়, ‘নট মাই কিং’ লেখা হলুদ টিশার্ট পরে সমর্থকেরা বিক্ষোভে নামেন। সেইসঙ্গে ওই লেখাযুক্ত হলুদ প্ল্যাকার্ডও পুলিশ কর্মকর্তারা জব্দ করে নিয়ে যান।
এক ভিডিওতে গ্রেপ্তারের সময় এক পুলিশ কর্মকর্তাকে বলতে শোনা যায়, “আমি এ নিয়ে কোনো কথোপকথনে যাচ্ছি না। তারা গ্রেপ্তার, এটাই শেষ।”
৩০ বছর বয়সী হ্যারি স্ট্র্যাটন নামের এক বিক্ষোভকারী বলেন, এমন একজনের প্যারেডের জন্য জনগণের অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে…যখন ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে গৃহহীন লোকেরা বসে আছে।
“সকালে তারা প্রধান ছয়জন সংগঠককে গ্রেপ্তার করে এবং প্ল্যাকার্ড জব্দ করে। তারা আমাদের বলেনি কেন গ্রেপ্তার করেছে। তারা বলেনি, গ্রেপ্তারদের কোথায় রাখা হয়েছে।”
অন্যদিকে পরিবেশবাদী গ্রুপ ‘জাস্ট স্টপ ওয়েল’ জানায়, তাদের প্রায় ২০ জন বিক্ষোভকারী গ্রেপ্তার হয়েছেন। একটি ছবিতে দেখা যায়, হোয়াইটহলে এক ব্যক্তিকে ঘিরে ধরেছে পুলিশ। তার পরনে সাদা টিশার্ট, যাতে লেখা ‘জাস্ট স্টপ ওয়েল’।
গ্রুপটি বলছে, ৩৩ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি পেশায় চিকিৎসক। তিনি রাজার অভিষেক অনুষ্ঠান ঘিরে ভিড়ের মধ্যে ‘জাস্ট স্টপ ওয়েল’ স্লোগান তুলে ধরার পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু অন্য ২০ জনের সঙ্গে তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
ধর্মীয় অনুশাসন আর ব্রিটিশ কেতা মেনে লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে অভ্যাগত ও রাজপারিষদদের সামনে ব্রিটেনের রাজা হিসেবে আনুষ্ঠানিক অভিষেক হয় তৃতীয় চার্লসের।
শনিবার সাত দশকের মধ্যে ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মাথায় রাজমুকুট পরেন চার্লস (৭৪) ।
এই অভিষেক অনুষ্ঠান উপলক্ষে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে কয়েক হাজার অতিথির পাশাপাশি আশপাশে সেন্ট্রাল লন্ডনের রাস্তাগুলোতে উপস্থিত থাকবেন প্রজারা। ফলে ব্রিটেনে নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা।