শনিবার (১৩ মে) রাতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন অডিটোরিয়ামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এক্স-ক্যাডেট এসোসিয়েশনের ২য় পুনর্মিলনী ও মেয়র আতিকুল ইসলামের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মেয়র বলেন, আমার জীবনে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আজ এখানে এসেছি। বিজেএমই'র প্রেসিডেন্ট হয়েছি। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে এসেছি এর পেছনে মূল কাজটি করেছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর। ক্যাডেট কোর আমাদের শিখিয়েছে কিভাবে লাইফে ডিসিপ্লিন হতে হয়, অসহায় মানুষের পাশে দাড়াতে হয়। ক্যাডেটের ট্রেনিংই সবচেয়ে বড় সম্পদ। ক্যাডেট অলয়েজ দেয়ার বি ক্যাডেট। আমরা শিখেছি সিনিয়রকে কিভাবে সম্মান করতে হয়। জুনিয়রকে ভালোবাসতে হয়। আমরা শিখেছি বলেই আমরা মানুষকে সম্মান দিতে পারি। মানুষকে সম্মান দিলে কোনদিন সম্মান চলে যায় না বরং সম্মান বাড়ে।
তিনি বলেন, আমি যখন ব্যবসা শুরু করি তখন ৪৮ টি মেশিন দিয়ে ব্যবসার যাত্রা শুরু হয় আমার। সেইসময় আমাকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সাহস যুগিয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর। ক্যাডেটদের যারা প্রশিক্ষণ দিয়েছেন এবং এখনও দিচ্ছেন তাদের সবাইকে সম্মান করতে হবে যদি আমরা সম্মান দিতে পারি তাহলে সত্যিকারে ক্যাডেট হবো।
মেয়র বলেন, আমরা বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কাজ করে থাকি। যেমন কয়েকদিন আগে সামাজিক বনায়ন ঘোষণা দিয়েছি যে দুই লক্ষ গাছ লাগানো হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এক্স ক্যাডেট কোর থেকে সবাই মিলে ৫০ টি করে গাছ লাগানোর দায়িত্ব নিতে পারি তাহলে বিরাট বড় একটা মেসেজ পৌঁছে যাবে সবার কাছে।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে ডিজিটাল ম্যাপিং করেছি কোথায় কি গাছ লাগানো যায়। আমাদের স্লোগান ছিল ক্লিনিং, গ্রিনিং এবং ফ্রিটিং। ফ্রিটিং টা হল আমরা খালের পাড়ে যে গাছগুলো লাগাবো যেমন আম, জাম ইত্যাদি গাছগুলো আর ফুটপাতে জন্য যেটা লাগাবো ছায়া দিবে এবং পাখি যেন আসে এবং খেতে পারে তার জন্য ফিটিং এর ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। আমরা চাই ঢাকাটা যেন আবার সেই আগের অবস্থায় ফিরে আসুক।
মেয়র বলেন, এডিশ মশার জন্য আমাদের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা উচিৎ। আমরা যেন ময়লা না ফেলি অযথা গাছ না কাটি এর জন্য আমরা সামাজিক আন্দোলনের সবাইকে যোগ দেওয়ার জন্য আহবান করি।জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নতুন ক্যাম্পাসের জন্য ২০০ একর জমি বরাদ্দ দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিএনসিসি ক্যাডেটদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানা।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বক্তব্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, প্রায় তিনবছর করোনা মহামারি আমাদের জীবন থেকে গুরুত্বপূর্ণ সময় কেড়ে নিয়েছে। ঠিক সে সময় নিজের জীবনকে বাজি রেখে মেয়র আতিকুল ইসলাম কয়েকবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকা উত্তর সিটিকে করোনামুক্ত রাখার যে প্রয়াস চালিয়ে গেছেন এজন্য আপনার নিকট আমরা কৃতজ্ঞ।
তিনি বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেছি ২০২১ সালের ৩ জুন। আগামী মাসের ৩ তারিখে আল্লাহ যদি বাঁচিয়ে রাখে তাহলে আমার মেয়াদের দুই বছর পূর্ণ হবে।আমি যোগদানের পর থেকেই চেষ্টা করছি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালকে একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করতে।
উপাচার্য বলেন, আমি যোগদানের সময় এখানে বিজ্ঞান বিভাগের কোন ল্যাবরেটরি সুবিধা ছিল না। আমি যোগদানের পরে, বাইরের বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে আমরা সেই সুবিধা নিশ্চিত করতে পেরেছি। এইতো কিছুদিন আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় এর সাথে শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক একটি চুক্তি করেছি, যাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ৩০% ছাড় পাবেন। এবং দেশের আরও স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানর সাথ সমঝোতামূলক চুক্তির ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা- গবেষণার এক নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি একটা লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি, যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা কোন দিক থেকে পিছিয়ে না পড়ে। ইতিমধ্যেই, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা কেরানীগঞ্জে ২০০ একর জমি দিয়েছেন নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য যা হবে বিশ্বের আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে একটি।
এসময় তিনি আরও বলেন, আমি জগন্নাথে যোগদানের আগে এমন কোন দিন নাই যে, পত্রিকার পাতায় জগন্নাথের মারামারি, গ্যাঞ্জাম, এবং নেতিবাচক খবরের লেখা পড়ি নাই। আমি আসার পর কঠোরভাবে চেষ্টা করলাম, কিভাবে শিক্ষার্থীদের এক্সট্রা কারিকুলাম এর সাথে যুক্ত করা যায়? এসব এক্সট্রা কারিকুলাম এর সাথে যুক্ত থাকে তাহলে, তারা ওসব পথ থেকে বিরত থাকবে। আর ওসব সংস্থার মধ্যে বিএনসিসি এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। দে আর সো ডিসিপ্লিন। বিশেষ করে জাতীয় উৎসব গুলোতে তাদের কার্যক্রম চোখে পড়ার মতো।
বিশেষ অতিথি বক্তব্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, আমরা এই বিশ্বিদ্যালয়টিকে উন্নত মানসম্পন্ন করার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। আজকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আমাদের ২০০ একর জায়গা প্রদান করেছেন অত্যন্ত সুন্দর দৃষ্টিনন্দন একটি জায়গা। ইতোমধ্যে বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে, লেক খনন কাজ চলছে।আমরা চেষ্টা করছি শুধু অবকাঠামো নয় একাডেমিক শিক্ষায় গুরুত্ব প্রদান করবো। আমাদের উপচার্য মহাদয় দায়িত্ব গ্রহণের পর পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমন্বয় রেখে গবেষণা এবং মান উন্নয় লক্ষে কাজ করছেন।