২০২২ সালে টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কের স্টক অ্যাওয়ার্ড আগের বছরের চেয়ে কমেছে প্রায় ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি ডলার। একইভাবে এক্সপেডিয়ার প্রধান নির্বাহী পিটার কার্নের বেতন-ভাতা কমেছে ২৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার এবং আমাজন ডটকমের প্রধান নির্বাহী অ্যান্ডি জেসির বেতন-ভাতা কমেছে ১৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। খবর ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের।
আবার অনেক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী ঘোষিত বেতন-ভাতার চেয়ে বেশি পেয়েছেন। রিজেনেরন ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান নির্বাহী লিওনার্ড শ্লেইফারের বার্ষিক বেতন-ভাতা ছিল মোট ৭০ লাখ ডলার, কিন্তু বছর শেষে তিনি কার্যত পেয়েছেন ১০ কোটি ডলার।
টি মোবাইলের প্রধান নির্বাহী মাইকেল সিয়েভার্টের পাওয়ার কথা ছিল ২ কোটি ৯০ লাখ ডলার। বছরে শেষে সেটা প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। অক্সিডেন্টাল পেট্রোলিয়ামের প্রধান নির্বাহী ভিকি হোলার বেতন–ভাতা নির্ধারিত হয়েছিল ১ কোটি ১৫ লাখ ডলার, বছর শেষে তা প্রায় চার গুণ বেড়েছে।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নতুন নিয়ম মেনে ওয়াল স্ট্রিটের কোম্পানিগুলো এই প্রথম প্রধান নির্বাহীদের দেওয়া স্টক অ্যাওয়ার্ড কত কমল বা বাড়ল, তার হিসাব আলাদাভাবে প্রকাশ করছে। প্রধান নির্বাহীদের বেতন–ভাতার বড় একটি অংশ আসে এই খাত থেকে। ঐতিহাসিকভাবে যেটা হয়েছে, সেটা হলো, প্রধান নির্বাহীরা কার্যত যখন বেতন–ভাতা পেয়েছেন, তখনই তার হিসাব করা হয়েছে। নতুন পদ্ধতিতে শেয়ারের মূল্য পরিবর্তনের বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়েছে। বছর শেষে স্টকের দাম বাড়তেও পারে আবার কমতেও পারে, তাতে বেতন-ভাতা কমবেশি হতে পারে।
তবে এতে আবার নতুন ঘটনাও ঘটেছে। পুরোনো পদ্ধতিতে যেখানে প্রযুক্তি কোম্পানির প্রধান নির্বাহীরা সবচেয়ে বেশি বেতন-ভাতা পেতেন, নতুন পদ্ধতিতে তাদের জায়গায় চলে এসেছেন জ্বালানি কোম্পানির নির্বাহীরা, যেমন এক্সন-মবিল ও শেভরন, যেসব কোম্পানির শেয়ারদর গত বছর বেড়েছে।
ওয়াল স্ট্রিটের হিসাবমতে, ২০২২ সালে সনাতনী পদ্ধতিতে গুগলের প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাইয়ের বেতন–ভাতা ছিল ২৫ কোটি ৯৯ লাখ ডলার, নতুন পদ্ধতিতে যা নেমে এসেছে ১১ কোটি ৫৮ লাখ ডলারে। অথচ জ্বালানি কোম্পানি এক্সন-মবিলের প্রধান নির্বাহী ড্যারেল উডসের বেতন-ভাতা নতুন পদ্ধতিতে বেড়েছে। পুরোনো পদ্ধতিতে গত বছরে তাঁর বেতন-ভাতা ছিল ৩ কোটি ৫৯ লাখ ডলার, নতুন পদ্ধতিতে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৯৭ লাখ ডলার।
পুরোনো পদ্ধতিতে আরেক বড় জ্বালানি কোম্পানি শেভরনের প্রধান নির্বাহী মাইকেল উইয়ার্থের বেতন-ভাতা ছিল ২ কোটি ৩৫ লাখ ডলার, নতুন পদ্ধতিতে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৬৭ লাখ ডলার।
২০২২ সালে ওয়াল স্ট্রিটের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলোর দুই-তৃতীয়াংশ প্রধান নির্বাহী কাগজে-কলমে প্রতিশ্রুত বেতন-ভাতার চেয়ে বছর শেষে কার্যত কম অর্থ পেয়েছেন। আবার ১৪০ জন প্রধান নির্বাহী প্রতিশ্রুত অর্থের চেয়ে বেশি বেতন-ভাতা পেয়েছেন। অন্তত ৪৬টি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী প্রতিশ্রুত বেতন-ভাতার দ্বিগুণ পেয়েছেন। মাইলগ আইকিউয়ের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এ সংবাদ দিয়েছে।
এতে বোঝা যাচ্ছে, প্রধান নির্বাহীদের বেতন-ভাতা কতটা ওঠানামা করতে পারে।
২০২০ সাল থেকেই টেসলা জানিয়ে আসছে, ইলন মাস্ক কোনো আনুষ্ঠানিক বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। তবে তাঁর অর্থ পাওয়ার বিষয়টি কর্মনৈপুণ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। এ ক্ষেত্রে ২০১৮ সালের সাপেক্ষে মাস্কের বেতন-ভাতা কমেছে ৯৭০ কোটি ডলার। তাঁর বেতন-ভাতা যা কমেছে, তা ১০ বছর মেয়াদে টেসলার স্টকের দাম ওঠানামার সঙ্গে সম্পর্কিত, এর সঙ্গে তাঁর বর্তমান বেতন-ভাতার সম্পর্ক নেই।
এক্সপেডিয়ার প্রধান নির্বাহীর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য—২০২১ সালের ইকুইটি ভাতা বিতরণের পর তাঁর প্রকৃত বেতন-ভাতা কমে যায়, যার জের চলবে অন্তত ২০২৬ সাল পর্যন্ত।
২০২২ সালে পুরোনো পদ্ধতিতে প্রধান নির্বাহীদের বেতন-ভাতার ৭০ শতাংশ এসেছে স্টক বা এ–সংক্রান্ত খাত থেকে। শীর্ষ বেতন-ভাতাপ্রাপ্ত ২৫ প্রধান নির্বাহীর বেতন–ভাতার ৭৭ শতাংশ এসেছে ইকুইটি থেকে, যাঁদের বার্ষিক বেতন-ভাতা ৩ কোটি ১০ লাখের বেশি।ৃ