বুধবার (১৭ মে ২০২৩) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে কমিটির ভার্চুয়াল সভায় ক্রয় প্রস্তাবগুলোতে অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ১৭তম সভা হয়েছে। ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ১০টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ৪টি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৩টি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১টি, স্থানীয় সরকার বিভাগের ১টি এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের ১টি প্রস্তাব ছিল। কমিটির অনুমোদিত ১০টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ১৭৯ কোটি ২৩ লাখ ৮৩ হাজার ৮৮৬ টাকা। মোট অর্থায়নের মধ্যে জিওবি থেকে ব্যয় হবে ১৩৮ কোটি ৩৬ লাখ ৭৪ হাজার ৫০৬ টাকা এবং দেশীয় ব্যাংক ঋণ ১ হাজার ৪০ কোটি ৮৭ লাখ ৯ হাজার ৩৮০ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ ২ কোটি ৮৮ লাখ ৫৩ হাজার মার্কিন ডলার।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১২ হাজার ৫০০ (+৫%) মেট্রিক টন চিনি আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে এই চিনি বিক্রি হবে। চিনি আমদানির জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান যুক্তরাস্ট্র ভিত্তিক অ্যাকসেনচ্যুয়েট টেকনোলজি ইনকরপোরেশন (স্থানীয় এজেন্ট:ওএমসি লিমিটেড, ঢাকা) সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে এই চিনি সরবরাহ করবে। প্রতি মেট্রিক টন ৪৯৫.৫০ মার্কিন ডলার হিসেবে ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চিনি আমদানিতে ব্যয় হবে ৬৬ কোটি ২৭ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকা। প্রতি কেজি চিনির দাম ৮২.৮৫৮ টাকা।
সভায়, ‘বাংলাদেশের ২৩টি পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পে নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের অনেুমোদনক্রমে ‘বাংলাদেশের ২৩টি পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথভাবে (১) রানহিল; (২) ফারহাট এবং (৩) ডিডিসি-কে ২৮ কোটি ৭৭ লাখ ৫৭ হাজার ৩০২ টাকায় নিয়োগ দেওয়া হয় যার মেয়াদ ২২/০৫/২০২২ সালের ২২ মে শেষ হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের পূর্ত কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি হওয়ায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির জন্য ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ১১ কোটি ১৩ লাখ ৮৯ হাজার ২৫৬ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়।
সভায় চট্টগ্রামের টিএসপি কমপ্লেক্স লিমিটেড-এর জন্য ১০ হাজার মেট্রিক টন (+১০%) ফসফরিক এসিড আমদানির একটি প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এই ফসফরিক এসিড সরবরাহ করার জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হলে ২টি দরপ্রস্তাব জমা পড়ে এবং ২টি দরপত্রই কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মেসার্স সান ইন্টারন্যাশনাল এফজেডই, ইউএই (স্থানীয় এজেন্ট: মেসার্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনপুট, ঢাকা) এর নাম সুপারিশ করে। ১০ হাজার মেট্রিক টন ফসফরিক এসিড ক্রয়ে ব্যয় হবে ৬০ কোটি ৯৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকা।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশ এর কাছ থেকে ১৭তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। কাফকোর কাছ থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের জন্য প্রাইস অফার পাঠানোর অনুরোধ করা হলে কাফকো, বাংলাদেশ প্রাইস অফার পাঠায়। কাফকোর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের মূল্য নির্ধারণ করে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার প্রতি মেট্রিক টন ৩৭১.২৫ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২০ কোটি ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৭৫০ টাকা।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় সৌদি আরব থেকে ২২তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন (১০%+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির একটি প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতি মেট্রিক টন ৩২৭.৩৩ মার্কিন ডলার হিসেবে ব্যয় হবে ৯৮ লাখ ১৯ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০৬ কোটি ২৫ লাখ ১৩ হাজার ১৮০ টাকা।
সভায় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় সৌদি আরব থেকে ৩য় লটে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানির একটি প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতি মেট্রিক টন ডিএপি সার বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে প্রতি মেট্রিক টন ডিএপি সার ৫৩২ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ২ কোটি ১২ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ২২৯ কোটি ৩৩ লাখ ৪৫ হাজার ৬০০ টাকা।
সভায় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় মরক্কো থেকে ৩য় লটে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানির প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ডিএপি সার আমদানিতে ব্যয় হবে বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে সর্বমোট ২ কোটি ১৬ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৩৩ কোটি ৪২ লাখ ৯৮ হাজার ২০০ টাকা। প্রতি মেট্রিক টন ডিএপি সার ৫৪১.৫০ মার্কিন ডলার।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় কানাডা থেকে ৪র্থ লটে ৫০ হাজার মেট্রিক টন মিউরেট-অব-পটাশ (এমওপি) সার আমদানির প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। কানাডা থেকে ৪র্থ লটে ৫০ হাজার (+১০%) মেট্রিক টন এমওপি সার আমদানিতে ব্যয় হবে বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে সর্বমোট ২ কোটি ৯ লাখ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ২২৫ কোটি ২৩ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। প্রতি মেট্রিক টন এমওপি সার ৪১৮ মা. ডলার।