গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে বাংলাদেশের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ জনঅবহিতকরণ সভায় বক্তারা আরো বলেন, সরকার অনেক সুন্দর সুন্দর পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও কাগজে তৈরি এসব পরিকল্পনা অনেকে পড়েও দেখে না। যেসব পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে সেগুলো বাস্তবায়নেরও তাগিদ দেন তাঁরা।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলমের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ইয়ামিন চৌধুরী, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) জাকির হোসেন আকন্দ, আবুল কালম আজাদ, শামীমা নার্গিসসহ অন্যরা বক্তব্য দেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস বলেন, ‘অনেকে বলেন স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে খরচের জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা বাইরে চলে যায়। আমাদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থা যদি ভালো হতো, উন্নতি হতো, তাহলে এত টাকা বিদেশে চলে যেত না।’
তিনি বলেন, আমাদের দেশের গবেষকদের মধ্যে সব সময় সরকারবিরোধী মনোভাব দেখা যায়, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকার যেসব পরিকল্পনা হাতে নেয়, সেগুলো বাস্তবায়নও করে। বাংলাদেশের অর্জন কম নয়। আমরা পলিথিনমুক্ত হয়েছি, বিশ্বের সর্বপ্রথম আমরাই জলবায়ু তহবিল তৈরি করেছি। এ রকম অনেক অর্জন রয়েছে। সেগুলো মনে রাখতে হবে। করোনার সময়ে ভারতের অর্থনীতি ২৪ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে, বাংলাদেশে তা হয়নি বলেও জানান আহমেদ কায়কাউস।
মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, ভারত ও মিয়ানমার থেকে পাওয়া এক লাখ ১৮ হাজার বর্গকিলোমিটারের বিশাল নীল সমুদ্র অর্থনীতি পেলেও এখান থেকে আমাদের অর্জন শূন্য। নীল সমুদ্র অর্থনীতি থেকে সুফল পেতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে মাত্র ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। আমরা তাদের বলেছি, এই প্রকল্প ৫০ কোটি টাকা নয়, ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প আনতে হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, সরকার অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কিন্তু কেউ পরিকল্পনাটি পড়ে দেখে না, সেখানে কী লেখা আছে। সরকারের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হয় না। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দক্ষতা মন্ত্রণালয়গুলোর আছে কি না তাও দেখার বিষয়। সবাই সঠিকভাবে কাজ করছে কি না তা মূল্যায়ন করতে হবে।
ইআরডি সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন বলেন, থাইল্যান্ডের মতো বাংলাদেশ যাতে মধ্যম আয়ের ফাঁদে না পড়ে সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে। একই মত পোষণ করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ইয়ামিন চৌধুরী।
সভায় পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে অন্যতম একটি পরিকল্পিত দেশ। বাংলাদেশের মতো এত পরিকল্পনা বোধ হয় অন্য কোনো দেশে নেই। আমাদের এখানে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা আছে, ১০ বছর মেয়াদি, ২০ বছর মেয়াদি এমনকি শতবর্ষী পরিকল্পনাও রয়েছে। সরকার এসব পরিকল্পনা তৈরি করে থেমে যায়নি। এগুলো বাস্তবায়নও করা হচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, আগামী ২০৪১ সালে দেশের দারিদ্র্য হার ৩ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে চরম দারিদ্র্য নেমে আসবে ১ শতাংশের নিচে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে এর বাস্তবায়ন শুরু হচ্ছে শিগগিরই।