সিবিডিসি অনেকটা ক্রিপ্টোকারেন্সির মতোই; পার্থক্য হলো, এর মান কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বারা নির্ধারিত হয় এবং এটি দেশের ফিয়াট কারেন্সির সমতুল্য।
সিবিডিসি'র প্রচলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশ কয়েকটি অনানুষ্ঠানিক সমীক্ষা শেষে এই মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। গতবছর সিবিডিসি নিয়ে সার্কফাইন্যান্স (দ্য গ্রুপ অফ সেন্ট্রাল ব্যাংক গভর্নরস অফ দ্য সার্ক মেম্বার স্টেটস)- এর কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি প্রেজেন্টেশন দেওয়া হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মোঃ সারওয়ার হোসেন বলেন, "২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে ডিজিটাল কারেন্সির ফিজিবিলিটি স্টাডি করার একটি কথা উঠেছিল। তবে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো স্টাডি করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।"
ডিজিটাল কারেন্সি এখনই চালু করা উচিত হবে না উল্লেখ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, "আমরা বেশ কয়েকটি দেশে চালু করা সিবিডিসি নিয়ে অনানুষ্ঠানিক স্টাডি করেছি। আমরা দেখেছি, এই কারেন্সি চালু করা দেশগুলো খুব বেশি ভালো করতে পারছে না।"
"এছাড়া এসব দেশের অধিকাংশই জনসংখ্যা ও আয়তনে অনেক ছোট। সুইডেন বা কানাডার মতো বড় অর্থনীতির কোনো দেশ এটি এখনো চালু করেনি, সবাই চিন্তাভাবনা করছে। আমরা সেসব বিষয়ে গভীরভাবে নজর রাখছি। আগে অন্য দেশগুলো চালু করুক, তাদের জনগণের একটা অংশ ব্যবহারে অভ্যস্ত হোক। আমাদের যদি মনে হয় দেশের জন্য ভালো হবে, তখন আমরা সিবিডিসি চালু করার কথা ভাববো; এর আগে নয়," যোগ করেন তিনি।
সিবিডিসি চালু করা দেশগুলোর একটি বাহামার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, "দেশটি এমনিতে ছোট, তার ওপর প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ। অনেক সময় দুর্যোগে জনগণের ফিজিক্যাল কারেন্সি হারিয়ে যায়। এসব বিষয়কে মাথায় রেখে দেশটিতে সিবিডিসি চালু করা হয়েছিল। তবে তাদের দেশে এখনো এই কারেন্সি ব্যবহারের হার খুবই কম।"
সিবিডিসি চালু করার আগে বাংলাদেশের ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থাকে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে হবে মন্তব্য করে এ কর্মকর্তা বলেন, "আমাদের মতো দেশে এখনও ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থাই শক্তিশালী হয়নি। এখনও জনগণ ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবহারের সুবিধাগুলো ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারছে না। এটি ব্যবহার করলে যে সম্পদের নিরাপত্তা ও চাহিদামতো ব্যবহার নিশ্চিত হয়, সেটি বুঝতে পারছে না। আমাদের আগে ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবহারে অভ্যস্ত হতে হবে, পরে সিবিডিসি নিয়ে ভাবা যাবে।"
ডিজিটাল পেমেন্টে অভ্যস্ত হওয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিবিডিসি চালু হলে এর মাধ্যমে সব ধরনের লেনদেন করার সুবিধা থাকতে হবে। জনগণ যেন দেশের যেকোনো জায়গায় এটি ব্যবহার করতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
"তাই আমাদের ডিজিটাল ট্রান্সেকশন নেটওয়ার্ক ওই পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। আর লোকাল কারেন্সির ডিজিটাল পেমেন্টে অভ্যস্ত না হলে সিবিডিসি ব্যবহারে কীভাবে অভ্যস্ত হবেন জনগণ?," বলেন তিনি।
২০২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ক্রিপ্টো কারেন্সির মতো ভার্চুয়াল মুদ্রার ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবহার বিশ্বব্যাপী ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বের অনেক কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রিপ্টো কারেন্সির বিকল্প হিসাবে তাদের মুদ্রার ডিজিটাল সংস্করণ চালুর জন্য কাজ করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিজিটাল কারেন্সি চালু করার মূল উদ্দেশ্য হল, ভার্চুয়াল লেনদেনকে সহজতর করা এবং স্টার্টআপ ও ই-কমার্স ব্যবসাকে উৎসাহিত করা।
বর্তমান সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে দেশে ইন্টারনেট ও ই-কমার্সের প্রসার হচ্ছে ব্যাপকভাবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে, বাংলাদেশ ব্যাংক দেশে সিডিবিসি চালু করার সম্ভাবনা নিয়ে সম্ভাব্যতাযাচাই সমীক্ষা চালাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।