এসব বিধান রেখে 'রিপ্রেজেনটেশন অব দ্য পিপল অর্ডার,১৯৭২' অধিকতর সংশোধনকল্পে একটি বিল বিল সোমবার জাতীয় সংসদে তুলেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
প্রস্তাব করে আইনের সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে এমন অভিযোগ করে বিলটি উত্থাপনে আপত্তি জানান জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। তবে তার আপত্তি কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে আইনমন্ত্রী বিলটি সংসদে তোলেন। পরে বিলটি পরীক্ষা করে ১৫ দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
জাতীয় নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯১(এ) ধারায় বলা আছে, ‘নির্বাচন কমিশন যদি সন্তুষ্ট হয় যে, নির্বাচনে বলপ্রয়োগ, ভীতি প্রদর্শন এবং চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিরাজমান অপকর্মের কারণে যুক্তিযুক্ত, ন্যায়সঙ্গত এবং আইনানুগভাবে নির্বাচন পরিচালনা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে না, তাহলে যেকোনো ভোটকেন্দ্র বা ক্ষেত্রমতো সম্পূর্ণ নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনের যেকোনো পর্যায়ে ভোট গ্রহণসহ নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে।’
তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা ফলাফল ঘোষণা করার পর ইসি ওই ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করতে পারে কি না, তা নিয়ে মতদ্বৈততা আছে। এ কারণে বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য ইসি এই বিধানের সঙ্গে আরেকটি উপধারা যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিল ইসি। তারা প্রস্তাবে বলেছিল, কোনো অনিয়ম, ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ এলে নির্বাচন কমিশন কোনো ভোটকেন্দ্র বা পুরো আসনের ভোটের ফলাফল স্থগিত করতে পারবে। এরপর অভিযোগ দ্রুত তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে কোনো কেন্দ্র বা পুরো আসনের ভোট বাতিল করে নতুন করে নির্বাচন করতে পারবে।
তবে ইসিকে পুরো আসনের ফলাফল স্থগিত বা বাতিলের ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে না। সংশোধনীতে বলা হয়েছে, যেসব ভোটকেন্দ্রে (এক বা একাধিক) অভিযোগ থাকবে ইসি শুধু সেসব কেন্দ্রে ভোটের ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করে প্রয়োজনে নতুন নির্বাচন করতে পারবে।
এর পাশাপাশি ৯১ (এ) ধারায়ও সংশোধনী আনা হচ্ছে। সংশোধনীতে আরপিওর ৯১ ধারার এ উপধারায় ‘ইলেকশন’ শব্দের বদলে ‘পোলিং’ শব্দ প্রতিস্থাপন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
আইনে নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহে দায়িত্বে থাকা গণমাধ্যম কর্মী এবং পর্যবেক্ষকদের কাজে বাধা দিলে তার শাস্তির বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এ ধরনের অপরাধে সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
বিলটি উত্থাপনে আপত্তি জানিয়ে সংসদে বক্তব্য দেন জাতীয় পাটির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। তিনি বলেন, ‘সংবিধানে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনতা দেয়া হচ্ছে। আমরা ৫২ বছর পর হলেও নির্বাচন কমিশন (গঠন) আইন করেছি। নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনে স্বাধীন থাকবে। আমরা আইন করতে যাচ্ছি। আইন করে যদি স্বাধীনতাটাকে ক্যানসেল করে দেই। তাহলে কমিশন কীভাবে স্বাধীন থাকবে?’
ফখরুল ইমাম বলেন, ‘আমরা আশা করি আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হবে। সেখানে আরপিওতে দেখলাম, আমরা দেখেছি গাইবান্ধার নির্বাচন খারাপ হয়েছিল বলে কমিশন বন্ধ করে দিয়েছে। জানি না কী কারণে আইনমন্ত্রী আবার এখন আনলেন নির্বাচন কমিশন পুরো নির্বাচন বন্ধ করতে পারবে না। ভোট কেন্দ্র বন্ধ করতে পারবে। যেখানে গণ্ডগোল হয়েছে সেটা বন্ধ করতে পারবে। মানে সেখানে স্বাধীনতার হস্তক্ষেপ। এই স্বাধীনতা খর্বের বিষয়টি সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক।’
ফখরুল ইমাম বলেন, এই সংশোধনী সংবিধানের চেতনা ও গণতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। নির্বাচনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আমরা নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে দেখতে চাই। কমিশন যা পাঠাবে তা সংসদে পাশ করা উচিত।
ফখরুল ইমামের বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, এই সংশোধনী সংবিধান বা গণতন্ত্রের পরিপন্থী নয়। আইনের ৯১ (এ) ধারায় বলা আছে- নির্বাচন কমিশন যদি দেখে কোনো নির্বাচনী এলাকায় যদি সমস্যা হয়, কোয়ার্শন, গন্ডগোল, ভোট দিতে বাধা দান এটা দেখা গেলে পুরো নির্বাচনী এলাকার নির্বাচন ইলেকশন কমিশন বন্ধ করে দিতে পারে।
আইনমন্ত্রী বলেন, এখানের সংশোধনী হলো- কোনো একটি পোলিং সেন্টারে যদি গণ্ডগোল দেখা দেয়। ধরেন আমার নির্বাচনী এলাকায় ১১৪টি পোলিং সেন্টার আছে। এর দুটো কী তিনটায় যদি গণ্ডগোল, কোয়ার্শন, ভায়োলেন্স এগুলো হয় তাহলে এই দুটো তিনটায় নির্বাচন বন্ধ করে দিতে পারবে। কিন্তু এই দুটো তিনটার কারণে ১১১টির নির্বাচন বন্ধ করার ক্ষমতাটা (এখন যেটা খর্ব হচ্ছে খর্ব করা হচ্ছে) তা দেয়া হচ্ছে না। এর মানে হচ্ছে যে এটা গণতন্ত্রের পরিপন্থী নয়। কারণ যে ১১১টায় সঠিকভাবে নির্বাচন হয়েছে যেখানে গণতান্ত্রিকভাবে জনগণ তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে সেটা নির্বাচন কমিশন কমিশন বন্ধ করতে পারবে না। যদি বন্ধ করতে পারতো সেটা হতো অগণতান্ত্রিক হতো।
আইনমন্ত্রী দাবি করেন, এটি জনগণের কোনো অধিকার খর্ব করে না। এটা শূন্যভাগও গণতন্ত্র ব্যাহত করে না। এটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অত্যন্ত শক্ত ভীত স্থাপন করে।