২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে চলতি হিসাবের লেনদেন ভারসাম্যের ঘাটতিও কমে হয়েছে ৩৭৭ কোটি ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে এ ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৫৪৯ কোটি ডলার। এ হিসাবে কমেছে ১ হাজার ১৭২ কোটি ডলার।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ও চলতি হিসাবের পরিসংখ্যানের হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে উভয় হিসাবেই আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঘাটতি কমেছে।
হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের গত ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৭৩ কোটি ডলার। এক বছর আগে গত মার্চে এ ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৭৬৯ কোটি ডলার। এ হিসাবে ঘাটতি কমেছে ১ হাজার ১৯৬ কোটি ডলার (১০.৯৬ বিলিয়ন)। শতকারা হিসাবে কমেছে ৪৩ দশমিক ১৯ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে আমদানি বাবদ ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ৮৭৮ কোটি ডলার, যা ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের তুলনায় ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের আলোচিত সময়ে আমদানি খাতে ব্যয় ছিল ৬ হাজার ৮৬৭ কোটি ডলার।
চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত আমদানি ব্যয় ছিল ৫ হাজার ৩৯৪ কোটি ডলার। এ হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ১ হাজার ৪৭৩ কোটি ডলার বা ২৭ দশমিক ৩০ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে রপ্তানি খাতে আয় হয়েছে ৪ হাজার ৯৭ কোটি ডলারের, যা গত অর্থবছরের আলোচিত সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ০৬ শতাংশ বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরের ১০ মাসে রপ্তানি থেকে আয় এসেছিল ৩ হাজার ৯৩১ কোটি ডলার।
চলতি অর্থবছর রেকর্ড ৩৩ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি এবং ১৮ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে ঘাটতি নিয়ে শুরু হয়েছিল। এর পর নানামুখী উদ্যোগে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসার প্রভাবে এ সময়ে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের ঘাটতিও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমেছে। চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা মানে নিয়মিত লেনদেনে কোনো ঋণ করতে হয় না দেশকে। আর ঘাটতি থাকলে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।
রিজার্ভ কমে আসা এবং চলতি হিসাবে রেকর্ড ঘাটতির মধ্যে সরকার বাজেট সহায়তাসহ আন্তর্জাতিক অর্থায়নকারী সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী ও দেশের কাছে অর্থায়নের চেষ্টা শুরু করে। এর অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ নিচ্ছে সরকার। এর প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার গত ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকেই পেয়েছে বাংলাদেশ। কিস্তিতে অবশিষ্ট অর্থ পাওয়া যাবে ২০২৬ সাল পর্যন্ত।
অপরদিকে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে বাজেট সহায়তার অংশ হিসেবে গত বুধবার ৫০ কোটি ৭০ লাখ ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। আগামী জুন নাগাদ আরও কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে ঋণে অর্থ পাওয়ার আশায় রয়েছে বাংলাদেশ। এসব অর্থ ছাড় হলে চলতি হিসাবের ঘাটতি আরও কমে তা ভারসাম্য আনতে সহায়ক হবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এদিকে গত এপ্রিল শেষে সামগ্রিক লেনদেনের (ওভার অল ব্যালান্স) ঘাটতি দেখা দিয়েছে ৮৪০ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫২৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার কম। ২০২১-২২ অর্থবছরের এপ্রিলে ঘাটতির এ পরিমাণ ছিল ৮১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ পরিসংখ্যান বলছে, বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে, এপ্রিল শেষে যা দাঁড়িয়েছে ২১৬ কোটি ডলারে। ২০২১-২২ অর্থবছরের মার্চে এ হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল ১১ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। গত মার্চে এ হিসাবে ঘাটতি ছিল ২২১ কোটি ডলার।
অর্থসংবাদ/এসএম