আইনের তোয়াক্কা করছে না এমারেল্ড অয়েল!

আইনের তোয়াক্কা করছে না এমারেল্ড অয়েল!
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড আইনের কোন তোয়াক্কা করছে না। বছরের পর বছর কোম্পানিটি বিভিন্ন আইন লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। এছাড়াও কোম্পানিটির আর্থিক বিবৃতেও নীরিক্ষক গরমিল খুঁজে পেয়েছেন। প্রায় ২০ কোটি টাকার বিনিয়োগ পেলেও সেই অর্থ কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে জমা দেওয়া হয়নি। এছাড়াও ১৫৫ কোটি টাকার বেশি পণ্য বিক্রি করলেও এখনো গ্রাহকদের কাছ থেকে এ টাকা পায়নি এমারেল্ড অয়েল। কয়েক বছর ধরে কোম্পানিটি আয়কর রিটার্নও জমা দেয়নি। সর্বশেষ হিসাববছরের (৩০ জুন,২০২২) ওপর এমারেল্ড অয়েলের নিরীক্ষক মতামতে এসব তথ্য তুলে ধরেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক খাতের কোম্পানিটির কোম্পানি আইন-১৯৯৪, শ্রম আইন-২০০৬ এবং আয়কর অধ্যাদেশ-১৯৮৪ সহ বিভিন্ন আইন লঙ্ঘন করছে বলে নিরীক্ষক মতামতে জানিয়েছে।

সূত্র মতে, মিনোরি বাংলাদেশ লিমিটেড সর্বশেষ হিসাববছরে শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসেবে এমারেল্ড অয়েলে ২৩ কোটি ২৭ লাখ ৩৫ হাজার ৪৪ টাকা বিনিয়োগ করেছে। এ সময়ে মিনোরি থেকে কোম্পানিটি ১৯ কোটি ৯৮ লাখ ৬৪ হাজার ৯৪৪ টাকা পেয়েছে। তবে এই অর্থ কোম্পানিটির ব্যাংক হিসাবে জমা করা হয়নি। ব্যাংক হিসাবে অর্থ জমা না দেওয়ার কারণ হিসেবে কোম্পানিটি নিরীক্ষককে বলেছে- এমারেল্ড অয়েলের আগের ম্যানেজমেন্ট টিমের অসদাচরণের কারণে ব্যাংক থেকে কোম্পানিটি কোন সহযোগিতা পাচ্ছে না। আগের ম্যানেজমেন্ট টিমের খোলা ব্যাংক হিসাবও এখন ব্যবহার করতে পারছে না কোম্পানিটি।

নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ৩০ জুন, ২০২২ হিসাববছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির ৪৮ কোটি ৭৩ লাখ ৩২ হাজার টাকার সম্পদ, প্লান্ট ও সরঞ্জাম রয়েছে। তবে এগুলোর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও আইএএস-১৬ অনুযায়ী সর্বশেষ হিসাববছরে সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন করেনি এমারেল্ড অয়েল।

এমারেল্ড অয়েলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ হাসিবুল গনি গালিব ১৫৫ কোটি ৬৬ লাখ ৫৩ হাজার ৬৭৫ টাকা পণ্য বিক্রি করেছেন। বিপুল পরিমাণ এই পণ্যে বিক্রির অর্থ এখনো বুঝে পায়নি এমারেল্ড অয়েল। এই অর্থ কিভাবে পুণরুদ্ধার করবে সে বিষয়ে নিরীক্ষককে কিছুই জানায়নি কোম্পানিটি। ফলে এই ১৫৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা এখন কোম্পানির আয়ের পরিবর্তে লোকসানে পরিণত হয়েছে।

কোম্পানি আইন ১৯৯৪ এর ৮১ ধারা অনুযায়ী, প্রত্যেক কোম্পানি বছরে একটি বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) করবে। যদি কোম্পানির এজিএম না করে তবে কোম্পানি আইনের ৮২ ধারা অনুযায়ী কোম্পানি এবং এর কর্মকর্তারা শাস্তির আওতায় আসবেন। যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে (আরজেএসসি) এজিএমের ২১ দিনের মধ্যে কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদন, শেয়ারহোল্ডার এবং পরিচালকদের তথ্য জানানোর বিধান রয়েছে। তবে কয়েক বছর ধরে এজিএম করতে না পারায় আরজেএসসিতে এসব তথ্য জানাতে পারেনি এমারেল্ড অয়েল। কোম্পানিটির নিরীক্ষক তার মতামতে জানিয়েছে, এমারেল্ড অয়েল কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ লঙ্ঘন করেছে।

নিরীক্ষকের মতামত অনুযায়ী, এমারেল্ড অয়েল আয়কর সর্বশেষ ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট স্ট্যাটাস প্রদান করতে পারেনি। ফলে কোম্পানির প্রকৃত ট্যাক্স দায় নির্ধারণ করা যায়নি। ২০১৪-১৫ হিসাববছর থেকে আয়কর রিটার্ন জমা না দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ৭৫ (১) ধারা লঙ্ঘন করেছে। তবে কোম্পানি নিরীক্ষককে শুধুমাত্র ২০১৪-১৫ হিসাববছরের একটি ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট সার্টিফিকেট দিয়েছে। এছাড়াও আয়কর অধ্যাদেশ-১৯৮৪’র ৫২ নং অনুচ্ছেদের ১৬ নং বিধি অনুযায়ী প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উৎসে ভ্যাট এবং ট্যাক্স কর্তন বিধান থাকলেও তা পরিপালন করেনি কোম্পানিটি। ১০ লাখ ৮৫৬ টাকার বিপরীতে উৎসে কর ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা দেখানো হলেও নিরীক্ষক এর প্রমাণ খুঁজে পায়নি।

এছাড়াও শ্রম আইন-২০০৬ অনুযায়ী, বাংলাদেশে কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানকে শ্রমিকদের জন্য লাভের অংশগ্রহণ তহবিল (ডব্লিওপিপিএফ) বাধ্যতামূলকভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হয়। কোম্পানির লাভের ৫ শতাংশ এ তহবিলে জমা দিতে হয়। প্রত্যেক অর্থবছর শেষ হওয়ার ৯ মাসের মধ্যে এ অর্থ জমা দেওয়ার কথা থাকলেও ২০১৫-১৬ হিসাববছর থেকে এ তহবিলে কোন অর্থ জমা দেয়নি এমারেল্ড অয়েল। অথচ কোম্পানিটির আর্থিক বিবরণীতে এ তহবিলের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। ফলে কোম্পানিটি শ্রম আইন-২০০৬ লঙ্ঘন করেছে বলে মতামত দিয়েছে নিরীক্ষক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম অর্থসংবাদকে বলেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থেই এমারেল্ড অয়েলের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছিল। তাদের দায়িত্ব দেওয়ার পর কোম্পানিটির উৎপাদন শুরু হয়েছে। কোম্পানির আগের যে সেল (বিক্রি) ছিল, অ্যাকাউন্ট স্ট্যান্ডার্ড ফলো করে সেটি আদায় করার ব্যবস্থা করা হবে। অডিট রিপোর্ট পাওয়ার পর বিএসইসির চীফ অ্যাকাউন্ট্যান্টস বিভাগ সেটি যাচাই করবে। অ্যাকাউন্ট স্ট্যান্ডার্ড ফলো করা হয়েছে কিনা সেটিও দেখা হবে। কোম্পানির ম্যানেজমেন্টের কোন নন-কমপ্লায়েন্স থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিকিউরিটিজ আইনে সুযোগ থাকলে অন্যান্য আইন ভঙ্গের জন্যেও ব্যবস্থা নেবে কমিশন। বিএসইসি সবসময় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কাজ করছে, এমারেল্ড অয়েলের ক্ষেত্রেও আইন মেনে সব ধরণের ব্যবস্থা নেবে কমিশন।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ফু-ওয়াং সিরামিকের লভ্যাংশ অনুমোদন
এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা
ডিএসইতে মোবাইল গ্রাহক-লেনদেন দুটোই কমেছে
বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে ৯ কোম্পানি
পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আজ
বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪০ শতাংশ
রবিবার পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলেও চলবে দাপ্তরিক কার্যক্রম
লোকসানে ৮ খাতের বিনিয়োগকারীরা
সাপ্তাহিক রিটার্নে মুনাফায় ১০ খাতের বিনিয়োগকারীরা
খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে প্রকৌশল খাত