শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল টিউবস লিমিটেড লোকসানে রয়েছে। তবে লোকসানে থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি অন্য একটি কোম্পানির কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করছে। ন্যাশনাল টিউবসের নিরীক্ষক কোম্পানিটির আর্থিক বিবরণীর ওপর দেওয়া মতামতে এমন তথ্য জানিয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, ন্যাশনাল টিউবস লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ব্লেড ফ্যাক্টরি ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। ন্যাশনাল টিউবসের নমিনেশন অ্যান্ড রিমুনারেশন (এনআরসি) কমিটির ৫ম সভায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে এসব কর্মচারীকে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিয়েছেন। অপরদিকে ন্যাশনাল টিউবসে কর্মচারীর প্রয়োজন না থাকা স্বত্ত্বেও এসব কর্মচারী বাংলাদেশ ব্লেড ফ্যাক্টরি থেকে আনা হয়েছে। কোন অনুমোদন ছাড়াই ৬ মাস এসব কর্মচারীর বেতন-ভাতা পরিশোধ করেছে ন্যাশনাল টিউবস। পরবর্তীতে নিরীক্ষকের প্রতিবেদনের পর তাদের ন্যাশনাল টিউবসে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই অতিরিক্ত জনবলের বেতন-ভাতা পরিশোধ করে যাচ্ছে ন্যাশনাল টিউবস।
কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্লেড ফ্যাক্টরি বন্ধ থাকার কারণে শ্রমিকদেরকে ন্যাশনাল টিউব থেকে বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে। তবে অডিটরের আপত্তির আগে ৬ মাস বেতন-ভাতা পরিশোধ করলেও তারা ন্যাশনাল টিউবসের কারখানায় কোন কাজ করেনি।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্লেড ফ্যাক্টরি ন্যাশনাল টিউবসে বদলি দেখানো জনবলের মধ্যে একজন ম্যানেজার, তিনজন কর্মচারী ও ১০ জন শ্রমিক রয়েছেন। এসব কর্মচারী অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করলেও কিভাবে ন্যাশনাল টিউবস তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করছে সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ন্যাশনাল টিউবসের কোম্পানি সচিব তাদের নিয়োগের বিরোধিতা করার কথা থাকলেও সেটি করেনি। ফলে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির সাধারণ বিনিয়োগকারীরাই প্রকৃতপক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র মতে, ন্যাশনাল টিউবস লিমিটেড বাংলাদেশ ব্লেডস ফ্যাক্টরি লিমিটেডের ১৪ জন কর্মচারীর বেতন-ভাতা পরিশোধ করছে। নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে এসব কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ সর্বশেষ হিসাববছরে (২০২২ সাল) ৪ লাখ ৫০ হাজার ৫৫৭ টাকা পরিশোধ করেছে ন্যাশনাল টিউবস। এখন পর্যন্ত এই ১৪ জন কর্মচারীর বেতন পরিশোধ করতে হচ্ছে ন্যাশনাল টিউবসকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আল আমিন অর্থসংবাদকে বলেন, ন্যাশনাল টিউবস এবং বাংলাদেশ ব্লেড ফ্যাক্টরি সরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও দুটি আলাদা স্বত্ত্বা। একটি আরেকটির সহযোগী প্রতিষ্ঠানও না। এখন একটি কোম্পানি থেকে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হলে একটি নির্দিষ্ট নিয়ম থাকতে হবে বা চুক্তি থাকা লাগবে। এ ধরণের কোন চুক্তি না থাকলে তো এক কোম্পানির সমস্যা আরেক কোম্পানি নিচ্ছে। ন্যাশনাল টিউবসে যদি কর্মচারীর প্রয়োজন না থাকে তাহলে এটি অডিটরের কোয়ালিফাইড অপিনিয়ন দেওয়ার কথা। এটি আসলে বিনিয়োগকারীদের জন্য ক্ষতি।
জানতে চাইলে ন্যাশনাল টিউবসের কোম্পানি সচিব প্রাণজিৎ পাল অর্থসংবাদকে বলেন, এসব কর্মচারী এখন বাংলাদেশ ব্লেড ফ্যাক্টরির জনবল নয়। প্রথমে তারা ব্লেড ফ্যাক্টরির জনবল ছিল। পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে তাদের প্রধান কার্যালয় (বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশন) থেকে থেকে আমাদের এখানে (ন্যাশনাল টিউবস) বদলি করা হয়েছে। এখন তারা আমাদের এখানে দক্ষতার সাথে কাজ করছে। নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান যদি অনুরোধ করে এবং আমরা যদি বোর্ডে পাস করিয়ে নিতে পারি তাহলে বদলি হতে পারে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম অর্থসংবাদকে বলেন, অডিট রিপোর্ট পর্যালোচনার পর যদি দেখা যায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে এসব কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাহলে কমিশন বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এসব কর্মচারী আগে কোন প্রতিষ্ঠানে ছিল, এখন কোন প্রতিষ্ঠানে কেন এসেছে এসব বিষয় কমিশন খতিয়ে দেখবে।
এদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ হিসাববছরে ন্যাশনাল টিউবস লিমিটেডের শেয়ার প্রতি ২ টাকা ৩৮ পয়সা লোকসান হয়েছে। এর আগের দুই বছর (২০২০ ও ২০২১ সাল) শেয়ার প্রতি কোম্পানিটির আয় (ইপিএস) হয়েছিল ৬ পয়সা করে। এছাড়াও ২০১৮ সালে ২ টাকা ০৫ পয়সা এবং ২০১৯ সালে শেয়ার প্রতি ১৬ পয়সা করে লোকসান দিয়েছিল কোম্পানিটি।
বেশিরভাগ সময় লোকসানে থাকা কোম্পানিটি সর্বশেষ হিসাববছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য কোন লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। ১৯৮৯ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের জন্য মাত্র দুই বার নামমাত্র লভ্যাংশ দিয়েছিল ন্যাশনাল টিউবস।
ডিএসইর তথ্য মতে, চলতি বছরের মে পর্যন্ত ন্যশনাল টিউবসের ৫১ শতাংশ শেয়ার সরকারের হাতে রয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটির ৩২ দশমিক ৭৭ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন। ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। আর উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে ন্যাশনাল টিউবসের ০ দশমিক ০৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে