চলতি বছরের গত ৬ মাসে (১ জানুয়ারি-৩০ জুন) সারাদেশে কর্মক্ষেত্রে ২৮৭টি দুর্ঘটনায় ৩৮৯ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। ২০২২ সালে একই সময়ে সারাদেশে ২৪১টি কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় ৩৩৩ জন শ্রমিক নিহত হয়েছিল।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত (১৫টি জাতীয় এবং ১১টি স্থানীয়) খবরের ওপর ভিত্তি করে বেসরকারি সংস্থা সেইফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি (এসআরএস) এই জরিপ পরিচালনা করেছে।
জরিপে প্রাপ্ত কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে- সবচেয়ে বেশি শ্রমিক নিহত হয়েছেন পরিবহন খাতে। যাদের সংখ্যা মোট ১২৮ জন, নির্মাণ খাতে নিহত হয়েছেন ৮৬ জন, এর পরেই রয়েছে সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে (যেমন- ওয়ার্কশপ, গ্যাস, বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি) ৮৫ জন, কল-কারখানা ও অন্যান্য উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানে এই সংখ্যা ৫০ জন এবং কৃষি খাতে ৬২ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন।
মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনা করে দেখা যায়- সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭৩ জন, বিস্ফোরণে ৫০ জন; বজ্রপাতে ৪০ জন, মাঁচা বা উপর থেকে পড়ে মারা গেছেন ৩২ জন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩০ জন, শক্ত বা ভারী কোনো বস্তুর দ্বারা আঘাত বা তার নিচে চাপা পড়ে ২২ জন, রাসায়নিক দ্রব্য বা সেপটিক ট্যাঙ্ক বা পানির ট্যাঙ্কের বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে ১২ জন, আগুনে পুড়ে ৮ জন, পানিতে ডুবে ৫ জন, পাহাড় বা মাটি, ব্রিজ, ভবন বা ছাদ, দেয়াল ধসে ৪ জন এবং অন্যান্য কারণে ৮ জন।
সেইফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি বলছে, জরিপের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, অনিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যবস্থা, আইন প্রয়োগে বাধা, বেপরোয়া যান চলাচল ও অদক্ষ চালক ইত্যাদি হলো গত ছয়মাসের পরিবহন দুর্ঘটনার মূল কারণ।
সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন বিস্ফোরণে নিহতের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে এসআরএস দেখেছে ক্যামিকেল সংরক্ষণে অদক্ষতা ও অবহেলা, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকা, কারখানার ভবনে জরুরি বর্হিগমন পথ না থাকা, বহির্গমন পথ তালাবদ্ধ করে দেয়া, কারখানা নির্মাণে সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে অনুমতি না নেয়া, সেইফটি বিষয়ে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ না দেয়া, নিয়মিত অগ্নিনির্বাপণ মহড়া না করা, কোনরকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়েই বৈদ্যুতিক লাইন সংযোগ দেয়া, ভেজা হাতে মটর চালু করা, মাথার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বিদ্যুতের লাইনের নিচে কাজ করা, ভবনের পাশে দিয়ে বয়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক তারের পাশ দিয়ে লোহার রড ওঠানোকে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে দেখা গেছে। তাছাড়া ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার না করার কারণেও কিছু দুর্ঘটনা ঘটছে।
এসআরএস’র নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা বলেন, কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। বিভিন্ন ছোট বড় বিস্ফোরণের ঘটনাও এই ৬ মাসে পরিলক্ষিত হয়েছে।
বজ্রপাতে কৃষি খাতের শ্রমিকদের মৃত্যু বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সেই সঙ্গে নির্মাণখাতের নিরাপত্তা ঘাটতি রয়েছে বলে তিনি জানান। কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি আরও বাড়াতে হবে। তা না হলে দুর্ঘটনা বাড়তেই থাকবে।
উল্লেখ্য, কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম প্রদান, সেইফটি বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রধান দায়িত্ব মালিকের। মালিক কর্তৃক শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে কিনা তা পরিদর্শন করার দায়িত্ব সরকারি প্রতিষ্ঠানের।
শ্রমিকের দায়িত্ব মালিকের নির্দেশনা মেনে কাজ করা। সরকার, মালিক, শ্রমিক সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই কর্মদুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব।
অর্থসংবাদ/এসএম