সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) মোট লক্ষ্যমাত্রার ৯৫ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, গেল ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩০ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। তাতে প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) কৃষি খাতে ২৯ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা বা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯৫ শতাংশ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছিল ২৫ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। সে হিসাবে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এ ঋণ বিতরণ বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ।
কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। করোনা মহামারি ও বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কৃষির গুরুত্ব ব্যাপকহারে পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাই কৃষি খাতে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের মাধ্যমে সহায়তা করতে বাংলাদেশ ব্যাংক সচেষ্ট রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো যদি কৃষি খাতে গুরুত্ব দেয় তাহলে খাদ্য সংকট মোকাবেলা সহজ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ব্যাংকগুলো গত অর্থবছরের ১১ মাসে বিতরণ করেছে ১১ হাজার ৭৭৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। পুরো অর্থবছরে এসব ব্যাংকের ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। সে হিসাবে এ খাতের ব্যাংকঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। আবার ৪৮ দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক বিতরণ করেছে ১৭ হাজার ৫২১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। যদিও এসব ব্যাংকের ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে।
এদিকে নিজস্ব লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা ব্যাংকও রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে কম কৃষিঋণ বিতরণ করেছে মধুমতি ব্যাংক। ব্যাংকটি গত অর্থবছরের ১১ মাসে কৃষিঋণ বিতরণ করেছে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যা ৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। অন্যদিকে সর্বোচ্চ কৃষিঋণ বিতরণ করেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঋণ বিতরণ করেছে ইসলামী ব্যাংক। বড় এই বেসরকারি ব্যাংকটির বিতরণ করা কৃষিঋণের পরিমাণ ২ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের ২ শতাংশ কৃষিঋণ হিসেবে বিতরণ করতে হয়। এর বাইরে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বিতরণ করা ঋণের পুরোটাই কৃষিঋণ হিসেবে বিতরণ করে। তাছাড়া ক্ষুদ্রঋণ বিতরণী সংস্থার (এনজিও) নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (এমআরএ) নিবন্ধিত এনজিও কৃষিঋণের বড় একটি অংশ বিতরণ করে। যেসব বাণিজ্যিক ব্যাংকের পল্লী অঞ্চলে ঋণ বিতরণে যথেষ্ট অবকঠামো নেই, সেসব ব্যাংক এনজিওর মাধ্যমে বিতরণ করে।
এর আগে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ২৮ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। তখন ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি বিতরণ করেছিলো। যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ১০২ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ৩০ হাজার ৯১১ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। যার মধ্যে অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসেই লক্ষ্যমাত্রার ৯৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো।
গত বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝিতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কৃষি খাতের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই তহবিলের আওতায় ধান চাষ, মৎস্য চাষ, কৃষি ও পল্লিঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচিতে উল্লিখিত শাকসবজি, ফল ও ফুল চাষ, প্রাণিসম্পদ খাতের আওতায় পোল্ট্রি ও দুগ্ধ উৎপাদন খাতে কৃষক পর্যায়ে ৪ শতাংশ সুদ হারে ঋণ বিতরণ করা হবে বলে জানানো হয়। তাছাড়া নীতিমালা শিথিল করে এক পরিবারের একাধিক ব্যক্তিকে ঋণ দেওয়ার বিধান করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
অর্থসংবাদ/এসএম