কমিটির চেয়ারপারসন প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ১৯তম অনলাইন সভায় এ পরামর্শ দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) কমিটির চেয়ারপারসন প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত ও পরামর্শগুলো হলো-
১. সভায় করোনার ভ্যাকসিন বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক ইতোমধ্যে গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে অলোচনা করা হয়। দ্রুত ভ্যাকসিন সংগ্রহের ও বিতরণের প্রস্তুতিতে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার জন্য পরামর্শক কমিটি সরকারকে সাধুবাদ জানাচ্ছে। সে সঙ্গে দ্রুত ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও বিতরণ নিশ্চিত করার জন্য কয়েকটি দিকে লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দেয়া হয়। সেগুলো হলো-
ক. পৃথিবীর সকল দেশ ভ্যাকসিন সংগ্রহ নিয়ে এক ধরনের প্রতিযোগিতায় রয়েছে। কয়েকটি দেশ ভ্যাকসিন কেনার জন্য অগ্রিম টাকাও জমা দিয়েছে। এছাড়া গ্যাভির ভ্যাকসিন পেতে বেশ দেরি হওয়ার আশংকা রয়েছে। এ অবস্থায় আমাদেরও অগ্রিম টাকা জমা দিয়ে ভ্যাকসিন বুকিং করা প্রয়োজন।
খ. কোনো কোনো টিকার জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রার কোল্ড চেইন ব্যবস্থা আমাদের নেই। ভ্যাকসিন নির্বাচনের ক্ষেত্রে সে বিষয়টির দিকে লক্ষ্য রাখা যেতে পারে। অথবা উল্লেখিত তাপমাত্রার কোল্ড চেইন ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
গ. কোনো একটি ভ্যাকসিনের জন্য কাজ না করে একাধিক উৎসের সাথে যোগাযোগ ও ভ্যাকসিন সংগ্রহের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। বিশেষ করে যেসব দেশে ভ্যাকসিন তৈরিতে সে দেশের সরকারের সম্পৃক্ততা আছে তাদের সাথে যোগাযোগ করা প্রয়োজন।
ঘ. ভ্যাকসিন পাওয়ার পর ভ্যাকসিন প্রদানের কার্যক্রম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে করতে হবে এবং এখনই ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট প্ল্যান চূড়ান্ত করা প্রয়োজন। ভ্যাকসিন প্রদানের পরবর্তী সময়ে ভ্যাকসিনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ফলোআপ করার ব্যবস্থাও থাকতে হবে।
ঙ. ভ্যাকসিন বিষয়ক বিশেষ কমিটিতে নাইট্যাগ (ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি গ্রুপ) ও জাতীয় পরামর্শক কমিটির প্রতিনিধি রাখার পরামর্শ দেয়া হয়।
চ. ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে যেসব প্রতিষ্ঠান ট্রায়াল কার্যক্রমের উপযুক্ত ও দক্ষ তাদের অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। আইসিডিডিআরবি’র সাথে সরকারি প্রতিষ্ঠান, যেমন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, আইইডিসিআর ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানসমূহকে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।
২. বর্তমানে পিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হচ্ছে, যার পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। কোভিড-১৯ পরীক্ষার পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারলে আরও বেরি এর সংক্রমণ শনাক্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে। এ উদ্দেশ্যে জাতীয় পরামর্শক কমিটি এন্টিজেন ও এন্টিবডি টেস্টেও জন্য একাধিকবার পরামর্শ দিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতোমধ্যে রোগ নির্ণয়ে এন্টিজেন টেস্টেও নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এন্টিজেন ও এন্টিবডি টেস্টের ব্যাপারে একটি নীতিমালাও বাস্তবায়ন পরিকল্পনা অনুমোদনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে যেসব জেলায় পিসিআর পরীক্ষার সুবিধা নেই এবং বিশেষায়িত হাসপাতালে এন্টিজেন টেস্টের পরিকল্পনা দাখিল করা হয়েছে। এন্টিজেন টেস্ট কিটের যাচাইকরণ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
তবে একটি সাবধানতার বিষয়ও এখানে রয়েছে যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ধরনের কিটের এখনও অনুমোদন দেয়নি। জাতীয় পরামর্শক কমিটি মনে করে তিন পদ্ধতিতে (পিসিআর, এন্টিজেন ও এন্টিবডি টেস্ট) কোভিড-১৯ পরীক্ষা কার্যক্রম পাশাপাশি থাকলে তা এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এখন সেরোসার্ভিল্যান্স নিয়ে কাজ করার সময় এসে গেছে, যার জন্য এন্টিবডি টেস্ট চালু করাও প্রয়োজন। যেসব কারণে কোভিড-১৯ পরীক্ষা কমে গেছে সেগুলো দূর করে পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়ানো দরকার। করোনা পরীক্ষা বাড়ানোর জন্য জনগণের মাঝে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। নমুনা সংগ্রহের বুথের তালিকা প্রকাশ্য স্থানে প্রদর্শন (ডিসপ্লে) করা প্রয়োজন। এছাড়া নমুনা সংগ্রহেরও পরীক্ষার মান বৃদ্ধিও জন্য সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন।পরীক্ষা দ্রুত করার জন্য অটোএক্সট্রাকশনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। সকল বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও দ্রুত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের ল্যাবরেটরি ব্যবস্থাপনা কমিটি/দলের সাথে জাতীয় পরামর্শক কমিটির ল্যাবরেটরি সাব-কমিটির একটি যৌথ সভার প্রস্তাব করছে।
৩. হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের কারণে স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি তাদের পরিবার পরিজনও করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়ছে। এ সভা মনে করে স্বাস্থ্যকর্মীদেও হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের পর কোয়ারেন্টাইনের উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করা আবশ্যক।
৪. স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের অনুদান প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য সঠিক তালিকা প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ের কাছে দাখিল করা প্রয়োজন। তালিকাটি জাতীয় কারিগরি পরামশর্ক কমিটির সভাপতির নেতৃত্বে একটি সাবকমিটি গঠন করে এবং ডাক্তার, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সংশ্লিষ্ট দফতরকে সম্পৃক্ত করে প্রস্তুত করার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
৫. যেসব মেডিকেল টেকনোলজিস্ট করোনা নমুনা পরীক্ষায় কাজ করেছে সরকার ইতোমধ্যে প্রমার্জনার মাধ্যমে তাদের নিয়োগ প্রদান করেছে। এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবক মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অন্তর্ভুক্ত হননি। তাদের নিয়োগের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার জন্য জাতীয় কারিগরি পরামশর্ক কমিটি সরকারের কাছে সুপারিশ করছে।
৬. করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে জনসাধারণের মধ্যে এক ধরনের শৈথিল্য দেখা যাচ্ছে। জনসাধারণকে আরও সচেতন ও কোভিড-১৯ প্রতিরোধে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাস্ক বিষয়ক ক্যাম্পেইন দ্রুত বাস্তবায়নের পরামর্শ দেয়া হয়। জনপ্রচারণার উদ্দেশ্যে তৈরি ভিডিওতে বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিত্বদেরকে উপস্থাপন প্রয়োজন বলে সভায় মত প্রকাশ করা হয়।
৭. দুর্গাপূজা হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব, যা আগামী অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। করোনা মহামারির পরিস্থিতিতে সীমিত পরিসরে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য সভায় পরামর্শ দেয়া হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহযোগিতায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দুর্গাপূজার আচরণ বিধি প্রস্তুত করে দেয়া প্রয়োজন।