আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থার ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি মঙ্গলবার থেকে আগামী ১৭ জুলাই পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, প্রতিনিধি দলের সদস্যরা অর্থমন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী স্থানীয় মুদ্রার বন্ড বাজার প্রতিষ্ঠা করতে বিভিন্ন কৌশল ও ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। এটি প্রতিষ্ঠা হলে তা দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের সহজ উৎস হবে এবং স্বল্পমেয়াদী ব্যাংক ঋণের ওপর থেকে নির্ভরতা কমে আসবে।
তারা আরও বলছেন, বন্ড বাজার উন্নত হওয়ার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সামনে বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলো আরও বিস্তৃত হবে। সেইসঙ্গে সরকারও অবকাঠামো প্রকল্প এবং অন্যান্য উন্নয়নমূলক প্রকল্পে অর্থায়ন করতে পারবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আইএমএফ-এর দক্ষতা ও নির্দেশনাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের বন্ড বাজার গড়ে তোলা সম্ভব।
জানা গেছে, আইএমএফ প্রতিনিধি দল দুই সপ্তাহের এই সফরে এলসিবিএম, ক্লাইমেট রিলেটেড বন্ড, মিডিয়াম-টার্ম ফিসক্যাল ফ্রেমওয়ার্ক, ডোমেস্টিক সেভিংস, কন্ট্রাকচুয়াল সেভিংস, সোশ্যাল সেফটি নেট এবং ডেট সাস্টেইনেবিলিটি সম্পর্কে তথ্য উপাত্ত নেবে।
এছাড়া ডেট অ্যান্ড ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট (ঋণ ও অর্থ ব্যবস্থাপনা) বিষয়েও বিস্তারিত তথ্য নেবে তারা। সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা, পরিচালন কাঠামো ও নীতি বিষয়ক তথ্য থাকবে। এছাড়া ইআরডি, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে এসব বিষয়ে কীভাবে সমন্বয় হচ্ছে, তাও রয়েছে আইএমএফের প্রতিনিধি দলের আলোচনার সূচিতে।
মিশন সফরের শেষ দিনে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে বন্ড মার্কেট বিষয়ে একটি সারাংশ তুলে ধরার পাশাপাশি তাদের সুপারিশগুলোও জানাবে প্রতিনিধি দল।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, বন্ড মার্কেট উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে অনেকদিন ধরে চেষ্টা করেও সেটি করা সম্ভব হয়নি।
"এর অন্যতম কারণ হলো বিনিয়োগকারী না থাকা; আবার যেসব বিনিয়োগকারী আছেন, তাদের উপযোগী প্রডাক্ট না থাকাও এর পিছনে আরেকটি কারণ," বলেন তিনি।
পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ বলেন, "হাউজিং, অবকাঠামো, টেকনোলজিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারিং প্রজেক্ট, লজিস্টিকস উদ্যোগ, গ্রিন প্রজেক্টগুলোর অর্থায়নের জন্য অবশ্যই বন্ড মার্কেট দরকার। নতুবা ব্যাংকগুলোর ওপর অহেতুক চাপ তৈরি হচ্ছে। যে কারণে তারল্য ব্যবস্থাপনাও অনেক সময় জটিল হয়ে পড়ে।"
তিনি বলেন, "বন্ড মার্কেট উন্নয়নে কর্পোরেট বন্ড আসার সুযোগ দিতে হবে। লিস্টিং সহজ করতে হবে। ট্যাক্স ট্রিটমেন্ট ইস্যুয়ার ও ইনভেস্টর উভয়ের অনুকূলে থাকতে হবে। ইন্সুরেন্স ফান্ড ও নব গঠিত সর্বজনীন পেনশন ফান্ডকে বন্ড মার্কেটে বিনিয়োগের সুযোগ রাখতে হবে।"
"আগামী দিনে গ্রিন গ্রোথ দরকার হবে। আর গ্রিন গ্রোথে যেতে হলে বন্ড মার্কেট লাগবেই," যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশের জন্য আইএমএফ এ বছরের ৩০ জানুয়ারি ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে। অনুমোদনের পরপরই এই ঋণের প্রথম কিস্তি বাবদ ৪৭৬ দশমিক ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড় করেছে সংস্থাটি। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে ৩ বছরে ৭টি কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ ছাড় করা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আইএমএফ সাধারণত প্রতিটি কিস্তি ছাড়ের আগে ঋণের শর্তের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে। সে অনুযায়ী, আইএমএফের একটি দল আগামী সেপ্টেম্বরে আসবে দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে।
এখনকার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ঋণের কিস্তি পর্যালোচনার কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানান তিনি।