বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে আরো ঋণ দিতে আগ্রহী জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা (জাইকা)।
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির সরকারি সংস্থাটি ঢাকার কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে একটি পরিকল্পনা তৈরি করে উন্নয়ন সহযোগীর কাছে পাঠাতে বলেছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে সফররত জাইকার নির্বাহী সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়ামাদা জুনিচি'র সঙ্গে বৈঠক শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
তিনি বলেন, "জাইকা অবকাঠামো প্রকল্পে অগ্রাধিকার দিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায়। এছাড়া মানবসম্পদ উন্নয়ন বিশেষ করে স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং গ্রামীণ অবকাঠামোতে ঋণ দিতে আগ্রহী।"
তিনি বলেন, "তাদের সম্পদ আছে তারা দিতে চায় কিন্ত অনুমোদন প্রক্রিয়ার কারণে ঋণ নেওয়া বিলম্বিত হয়। এ কারণে জাইকা প্রকল্পের প্রক্রিয়ার ধীরগতিতে সন্তুষ্ট নয়।"
অর্থনৈতিক সম্পদ বিভাগের (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ জাপানের সঙ্গে ২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, "আমাদের প্রকল্প প্রক্রিয়ায় যে সময় লাগে তাতে তাদের মাঝেমধ্যে অসুবিধা হয়। একই ধরনের কাজ তাদের দেশে দ্রুত হয়ে যায়।"
"তাদের মতো আমরা করতে পারি না। আমরা তাদের বুঝিয়েছি, আমাদের নিয়ম-কানুন আছে, এগুলো মানতে হয়। সংসদে জবাব দিতে হয়। আমরা এর মধ্যেও চেষ্টা করবো প্রকল্পের কাজ দ্রুত করতে," বলেন তিনি।
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাইকার নির্বাহী সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশ সব সময় জাইকার কাছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
"আমি কয়েকটি প্রকল্পে পরিদর্শন করেছি, তা দেখে আমি নিজে সন্তুষ্ট। বিশেষ করে ঢাকায় এমআরটি প্রকল্প, আড়াইহাজারে এসইজেড প্রকল্প, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প পরিদর্শন করেছি," বলেন ইয়ামাদা জুনিচি।
তিনি আরো বলেন, অবকাঠামো উন্নয়ন এদেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জাইকা বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়নে আরও সহায়তা করতে চায়।
জাইকার সুদের হার বাড়ানো প্রসঙ্গে এ কর্মকর্তা বলেন, জাইকার সুদের হার বাড়ানো হয়েছে জাপান সরকারের সিদ্ধান্তে।
"আমার মতে, সুদের হার বাড়ানো হয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারের বিবেচনায়। শুধু বাংলাদেশ নয়, সব দেশের জন্যই সুদের বাড়িয়েছে জাইকা। আর সুদের হারটি ঠিক করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বিবেচনায়," বলেন তিনি।
জাইকার নতুন প্রস্তাবে ১.৬% সুদের হার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মার্চে বাস্তবায়িত বৃদ্ধি থেকে ৪০ বেসিস পয়েন্ট বেশি।
ইয়ামাদা জুনিচি গতকাল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার জাতীয় সংসদ ভবন কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইয়ামাদা জুনিচিকে কক্সবাজারের প্রকল্প এলাকায় স্থানীয় জনগণের লবণ উৎপাদনের পর সমুদ্রের বর্জ্য পানি থেকে পানীয় জল উৎপাদনের সুযোগ অন্বেষণের অনুরোধ জানান।
বাসসের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জাইকার কর্মকর্তা এই প্রস্তাবের প্রশংসা করে বলেন, "এটি সম্ভব।"
জুনিচি মেগা প্রকল্পের অগ্রগতির প্রশংসা করেন এবং আশা করেন মাতারবাড়ি পাওয়ার প্ল্যান্ট আগামী বছরের শুরুতে উদ্বোধন করা হবে। প্ল্যান্টের ৯৫% কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান তিনি।
অর্থসংবাদ/এসএম