ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে বিদেশ ভ্রমণ ও চিকিৎসার খরচ বেড়ে যাওয়ায় কার্ডের মাধ্যমে এই লেনদেন বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের মে মাসে এ ধরনের লেনদেন হয়েছিল ৩৫৮ কোটি টাকা।
দেশে ডলার সংকটের কারণে ভ্রমণকারীরা বিদেশে কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনেকে বেশি সুবিধাজনক বলে মনে করছেন। এতে কার্ডের ব্যবহার বেড়েছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-মে পর্যন্ত কার্ডভিত্তিক বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬,৩৪৯ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ২,৫৪৬ কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা বলছেন, বিদেশ ভ্রমণকালে মানুষ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহার করে থাকেন।
কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন ভ্রমণকারীদের জন্য তুলনামূলক সুবিধাজনক। কারণ এতে নগদ অর্থ বহনের ঝামেলা এড়ানো যায়।
পাশাপাশি দেশের ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোতে ডলারের ঘাটতি চলছে। ফলে ভ্রমণকারীরা বিদেশে খরচ মেটাতে কার্ডের ব্যবহার বাড়িয়েছেন।
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের মহাসচিব আবদুস সালাম আরেফবলেন, "রোজার ঈদের আগে ওমরার যাত্রী ছিল অনেক। তারা বিদেশে গিয়ে কার্ডের মাধ্যমে খরচ করেছেন, যার কারণে লেনদেন বেড়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "সধারণত মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ট্রাভেল হয়ে থাকে বেশি, কারণ এই সময়ে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকে। বর্তমানে ভারত, মালেয়েশিয়া ও দুবাইয়ের যাত্রী অনেক।"
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্কমর্তা বলেন, বিশ্ববাজারে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে, যার কারণে ভ্রমণ ও চিকিৎসা খরচ আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, "এক বছরে আগে সৌদিতে যে খাবার ১৫ ডলারে খেয়েছি, সেটি এ বছর ৩০ ডলার লেগেছে, যার কারণে লেনেদেনের পরিমাণটাও বেড়ে গেছে।"
ভিসা বা মাস্টারকার্ডের মতো আন্তর্জাতিক পেমেন্ট নেটওয়ার্ক দ্বারা ইস্যুকৃত কার্ডগুলো সারাবিশ্বে ব্যাপকভাবে গৃহীত ও জনপ্রিয়।
ভ্রমণকারীরা মূলত বিমান ভাড়া, ভ্রমণ খরচ, হোটেল বুকিংসহ কেনাকাটার খরচ মেটাতে এ ধরনের কার্ড ব্যবহার করে থাকেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্যেক কার্ডধারী ব্যক্তিগত এনটাইটেলমেন্ট হিসেবে বছরে ১২,০০০ ডলার পর্যন্ত খরচ করতে পারেন।
তবে ব্যাংকাররা বলছেন, কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন বৃদ্ধি দেশের মুদ্রা বাজারে চাপ সৃষ্টি করছে।
৯ জুলাই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যা ২০২১ সালের আগস্টে ছিল রেকর্ড ৪৮.৬ বিলিয়ন ডলার।
আমদানি বিল পরিশোধের চাপে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমাগত কমে এসেছে।
যদিও এই চাপ কিছুটা কমিয়ে আনতে ২০২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক সাড়ে ১৩ বিলিয়নেরও বেশি ডলার দেশের আর্থিক ব্যবস্থায় ছেড়েছে।
২০২৩ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে, দেশের আমদানি বিল পরিশোধের পরিমাণ ৬৪.৭৬ বিলিয়ন ডলার এবং বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় ১৭.১৬ বিলিয়ন ডলারে। সম্প্রতি দেশে ডলারের আন্তঃব্যাংক হার (এক্সচেঞ্জ রেট) ১০৯ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
এদিকে, চলতি ২০২৩ সালের মে মাসে কার্ডের মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রার লেনদেন এপ্রিলের তুলনায় ৫,২৬৪ কোটি টাকা বা ১১ শতাংশ কমেছে। এই সময়ে স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেন হয়েছে ৪২,১২১ কোটি টাকা, যা আগের মাস এপ্রিলে ছিল ৪৭,৩৮৫ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে ব্যাংকাররা বলছেন, মে মাস রোজার ঈদের পরের মাস ও কোরবানি ঈদের আগের মাস হওয়ায় এই সময়ে গ্রাহকদের লেনদেন কম হয়েছে।