সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে রাজস্ব আহরণে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। বন্দর থেকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৪২৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা। বন্দর দিয়ে অধিক শুল্কযুক্ত পণ্যের আমদানি কমায় রাজস্ব আহরণে ঘাটতি বলে দাবি কাস্টমস কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দরের রাস্তাঘাটের বেহাল দশা ও কাস্টমসের কিছু বৈষম্যের কারণে রাজস্ব আহরণে ঘাটতি হয়েছে দাবি ব্যবসায়ীদের।
হিলি স্থল শুল্ক স্টেশন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রথম মাসে (জুলাই) ৪২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, আগস্টে ৪৯ কোটি ৬ লাখের বিপরীতে ৩৮ কোটি ৭৫ লাখ, সেপ্টেম্বরে ৪২ কোটি ১৪ লাখের বিপরীতে ৩৬ কোটি ৯৯ লাখ, অক্টোবরে ৫৩ কোটি ৪৪ লাখের বিপরীতে ৩৭ কোটি ৪৩ লাখ, নভেম্বরে ৫৬ কোটি ৩৫ লাখের বিপরীতে ৪৭ কোটি ২৫ লাখ এবং ডিসেম্বরে ৫০ কোটি ৩৩ লাখের বিপরীতে ২৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। জানুয়ারিতে ৪৯ কোটি ৭১ লাখ টাকার বিপরীতে ২৪ কোটি ১৭ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ৪৭ কোটি ৮৮ লাখের বিপরীতে ২৫ কোটি ৭৭ লাখ। মার্চে ৪৮ কোটি ৪০ লাখের বিপরীতে ৫৭ কোটি ৯৭ লাখ, এপ্রিলে ৬২ কোটি ৩৭ লাখের বিপরীতে ৩৪ কোটি ১২ লাখ, মে মাসে ৪১ কোটি ২৫ লাখের বিপরীতে ২৮ কোটি ৭৫ লাখ ও জুনে ৬২ কোটি ৬১ লাখ টাকার বিপরীতে ৪০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা রাজস্ব আহরণ করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। সব মিলিয়ে ৬০৬ কোটি ২৮ লাখ টাকার বিপরীতে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ৪২৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ বলেন, ‘ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো আমদানিকারকদের ঠিকমতো এলসি দিতে পারেনি। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য ছাড়া যেসব পণ্যের ওপর অধিক শুল্ক রয়েছে যেমন পাথর, জিরাসহ এ জাতীয় পণ্যের কোনো এলসি দিতে পারেনি ব্যাংক। যার কারণে ওসব পণ্য বন্দর দিয়ে তেমন একটা আমদানি হয়নি। সেই সঙ্গে আগে প্রচুর পরিমাণে চাল আমদানি হলেও বর্তমানে সেটি বন্ধ রয়েছে। যার কারণে বন্দর থেকে রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এছাড়া হিলি স্থলবন্দরের রাস্তাঘাট জরাজীর্ণ, ভাঙাচোরা ও সরু। ফোর লেনে উন্নীতকরণের কাজ চললেও সেটি খুব ধীরগতিতে চলছে। যার কারণে এ সড়ক দিয়ে আমদানীকৃত পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরে আসতেই ট্রাক উল্টে যাওয়া, চাকা ও এক্সেলের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সেই সঙ্গে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়ে বন্দরে পৌঁছতে বেশ সময় লেগে যায়। যার কারণে ভারতীয় ট্রাকগুলো আসতে চায় না। যেখানে প্রতিদিন ভারত থেকে ২০০-৩০০ পণ্যবাহী ট্রাক রফতানি হওয়ার কথা, সেখানে ৮০-১৫০ ট্রাকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। এসব কারণে রাজস্ব আহরণে বেশ ঘাটতি দেখা দিয়েছে।’
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, ‘পণ্য আমদানি কমার ফলে সরকারি রাজস্ব আহরণ যেমন কমেছে, তেমনি বন্দর কর্তৃপক্ষের দৈনন্দিন আয়ও কমে গেছে। সেই সঙ্গে বন্দরে কর্মরত শ্রমিকদের আয় কমে যাওয়ায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।’
হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এলসি সংকটের কারণে আমদানি কমে যাওয়া ও অধিক শুল্কযুক্ত পণ্যের আমদানি কম হওয়ার কারণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হয়নি। অধিক শুল্কযুক্ত পণ্যের আমদানি বাড়লে এ বন্দর থেকে রাজস্ব আহরণ বাড়ত।’
অর্থসংবাদ/এসএম