কেজিতে ৫০ টাকা কমে গরুর মাংস বিক্রি করবেন খামারিরা

কেজিতে ৫০ টাকা কমে গরুর মাংস বিক্রি করবেন খামারিরা
ঢাকার বাজারে এখন যে দামে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে তা থেকে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা কম দামে গরুর মাংস বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে গো-খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ)।

রবিবার বিডিএফএ'র সহযোগিতায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ভোক্তা অধিদপ্তর গো-মাংসের দাম ক্রয়সীমার মধ্যে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের বিষয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করে। এই কর্মশালা শেষে খামারিরা গরুর মাংসের দাম কমানোর ঘোষণা দেন। এ সময় মূল বক্তব্য প্রদান করেন এসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ ইমরান হোসেন।

ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার বিশ্লেষণের তথ্য বলছে, বর্তমানে ঢাকায় গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৭৮০ টাকা কেজি দরে।

অনুষ্ঠানে বিডিএফএ সভাপতি মোঃ ইমরান হোসেন বলেন, 'আমরা গরুর মাংসের দাম কমাতে চাই। এর অংশ হিসেবে খামারিরা যে দামে গরুর মাংস বিক্রি করছে আগামীকাল (সোমবার) থেকে তার চেয়ে ৫০ টাকা কমে বিক্রি করবে।'

তিনি বলেন, 'গরুর মাংসের দাম ভোক্তার নাগালের মধ্যে আনতে চাই। এরই পদক্ষেপ হিসেবে এই এসোসিয়েশনের খামারিরা প্রাথমিক পর্যায়ে ৫০ টাকা কমে গরুর মাংস বিক্রি করবে।'

পরে অবশ্য এই দাম নিয়ে কিছুটা হট্টগোল তৈরি হয়, কারণ প্রথম অবস্থায় খামারিরা গরুর মাংস ৭৫০ টাকায় বিক্রির ঘোষণা দেন। কিন্তু বাজারে এই দামে এখনই বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে এমন কথা ওঠার পর বর্তমান মূল্য থেকে ৫০ টাকা কমে বিক্রির ঘোষণা আসে।

জানা যায়, খামারিরা সাধারণত অনলাইনের মাধ্যমেই বেশিরভাগ গরুর মাংস বিক্রি করে থাকে, যেখানে ৮০০-৮৫০ টাকাতেও বিক্রি হয়। তাদের ঘোষিত এই দাম ঢাকার খুচরা বাজারের মাংস বিক্রেতাদের জন্য নয়। তবে খামারিরা বলছেন, খামার পর্যায়ে মাংসের দাম কমলে সেটা খুচরা পর্যায়েও কমাতে বাধ্য করবে।

স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে ৭টি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে গরুর মাংসের দাম ৫০০-৫৫০ টাকায় নামিয়ে আনা সম্ভব বলে একটি সুপারিশ তুলে ধরেন বিডিএফএ'র সভাপতি মোঃ ইমরান হোসেন।

প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে জাত উন্নয়নের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। জাত উন্নয়নের মাধ্যমেই গরুর মাংসের দাম ২০-২৫ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব বলে দাবি করা হয়।

কি-নোট পেপারে বলা হয়, দুই বছর বয়সী একটা দেশি গরু আরসিসি, নর্থ বেঙ্গল, গ্রে, শাহীওয়াল থেকে সর্বোচ্চ ১২০-১৫০ কেজি পর্যন্ত মাংস পাওয়া যায়। যেখানে মাংসের জাত হিসেবে পরিচিত ব্রাহমাতে যেতে পারলে একই সময়ে ২৫০-৩০০ কেজি পর্যন্ত মাংস পাওয়া সম্ভব, যেটা উৎপাদন খরচকেও কমিয়ে আনবে।

কারণ দেশি জাতের এক কেজি মাংস উৎপাদনে ১২-১৩ কেজি খাবার দরকার, যেখানে ব্রাহমার এক কেজি মাংস উৎপাদনে ৫-৬ কেজি খাবার প্রয়োজন।

মূল বক্তব্যে বলা হয়, প্রসেসড ফিডের উপাদান বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমদানি নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে স্থানীয়ভাবে উন্নতজাতের ঘাস চাষ ও সাইলেজ তৈরির মাধ্যমে বিকল্প খাদ্যের ব্যবস্থা করতে পারলে দাম কমিয়ে আনা সম্ভব। ফসলের উচ্ছিষ্টাংশ যেমন ধানের খড়, ভুট্টা গাছের কান্ড, বিভিন্ন ডালের গাছ, কলাগাছ সহ অন্যান্য সকল প্রকার ফসলের বাইপ্রোডাক্ট প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে উচ্চমানের গোখাদ্য তৈরী সম্ভব। দানাদার খাদ্যের পরিবর্তে চাষীরা কিভাবে এই খাবার কম খরচে প্রস্তুত করা যায় সে বিষয়ে খামারিদের প্রশিক্ষণ প্রদান করতে পারলে, কম দামে বিকল্প খাদ্য পাওয়া সম্ভব যা মাংসের দামে প্রভাব ফেলবে।

এছাড়া যথাযথ মূল্যে চামড়া বিক্রির ব্যবস্থার কথা বলা হয়। ৪-৫ হাজার টাকা মূল্যের চামড়া এখন মাত্র ৩০০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ চামড়ার সঠিক দাম দিতে পারলে প্রতি কেজি মাংসে ৩০-৪০ টাকার একটা প্রভাব পড়বে।

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম শফিকুজ্জামান বলেন, প্রতি বছর ১০ মিলিয়ন পিস চামড়া উৎপাদন হয়, যেখানে আমরা ব্যবহার করতে পারি মাত্র ১ মিলিয়ন। বাকিটা নিয়ম মেনে রপ্তানি করতে পারলে দাম ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

গরুর হাটের খাজনাও গরুর মাংসের দামে একটা বড় প্রভাব ফেলছে বলে তুলে ধরা হয়। আগে যেখানে লাখ টাকার একটা গরুতে ৫০-১০০ টাকা খাজনা দিতে হতো এখন সেটা ৫% দিতে হয়। অর্থাৎ ১ লাখ টাকার গরুতে ৫ হাজার টাকা খাজনা। এই খাজনার পরিমাণ কমিয়ে আনা গেলে তরিত্ব প্রভাব হিসেবে মাংসের দাম কমানো সম্ভব।

এএইচএম শফিকুজ্জামান বলেন, 'আমাদের কিছু নীতিগত সমস্যা আছে। আমরা দুধ উৎপাদনকে বেশি প্রায়োরিটি প্রদান করছি, মাংস রয়েছে দ্বিতীয় ধাপে। কিন্তু আমাদের উচিত দুধ ও মাংসের উৎপাদন বাড়ানোটাকে সমানতালে নিয়ে যাওয়া।'

তিনি বলেন, 'ভোক্তা পর্যায়ে মাংসের দাম কমানোর জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে যে পদক্ষেপ দরকার সেগুলো আরও পর্যালোচনা করে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে সুপারিশ আকারে তুলে ধরা হবে।'

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

নতুন সুদহার নির্ধারণ করল বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাগেজ রুলের অপব্যবহারে ধ্বংস হচ্ছে জুয়েলারি শিল্প
বছর ঘুরলেও প্রবাসী আয়ে গতি ফিরেনি
বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার
গ্রাহক সংখ্যায় দেশসেরা প্রতিষ্ঠান নগদ
বছরজুড়ে আলোচনায় খেলাপি ঋণ, সুদহার ও বিনিময়হার
প্রথম দিনেই ২ লাখের বেশি পণ্যের অর্ডার পেলো ইভ্যালি
তিন মাসের মধ্যে সব দেনা পরিশোধ শুরু করবো
পোশাকশিল্পকে রাজনৈতিক হাতিয়ার না বানানোর অনুরোধ
এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ