আজ মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) শীতকালে করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণের আশঙ্কা নিয়ে সচিবালয়ে সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
এদিন বিকেল ৪টার দিকে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে এই সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ছাড়াও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সচিবরা অংশ নেন।
সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান, পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘যদি আসে (দ্বিতীয় ওয়েভ) আমরা টোটাল প্রোগ্রামকে ভাগ করে নিলাম। ওয়ার্ক প্ল্যান রেডি করে নিতে হবে।
ক্লিনিক্যাল সাইটটা আমাদের অভিজ্ঞরা তৈরি করবেন, যদি রোগটা বিস্তার করে কীভাবে তার চিকিৎসা পরিকল্পনা হবে। সাপ্লিমেন্টারি ক্লিনিক্যাল সাইট, যেহেতু শীতের সময় অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা বেশি থাকবে, সেটাকেও ইমিডিয়েটলি সবাইকে সচেতন করে দেওয়া এবং তারও একটা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান রেডি করা। ’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘ব্যাপক প্রোমোশনাল ক্যাম্পেইন চালাতে হবে সবাই যাতে মাস্ক পরে। সবাই যাতে দূরত্বটা বজায় রাখে। স্বাস্থ্য নির্দেশিকা সবাই যাতে মেনে চলে। এনফোর্সমেন্ট সাইট মাঠ প্রশাসন, স্থানীয় সরকার, পুলিশ, সেনাবাহিনী— এটা কীভাবে করবে, সেই ওয়ার্ক প্ল্যান করা হবে। ’
আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দেশে ব্যাপক লোকজন বাইরে থেকে আসছে ও যাচ্ছে। তাদের কীভাবে প্রিকোশনারিভাবে (সর্তকতা) ট্রিটমেন্ট করব যাতে বাইরে থেকে আর ভাইরাস না আসে। বিমানবন্দরে সেনাবাহিনীর বড় টিম আছে, তারা দেখাশোনা করছে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা বসে সভা করে ওয়ার্কপ্ল্যান করে ওপেন করে দেব। ’
অভিযান বাড়ানো হবে কি না- প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘না, সিনারির ওপর ডিপেন্ড করবে। যদি কোনো রকম ইমপ্যাক্ট না হয়।
আমাদের মূল কথা থাকবে আমরা ইকনমিকে সচল রাখব ইনশাল্লাহ। ’
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা- প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয় সিদ্ধান্ত নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়ের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারা তাদের অধিক্ষেত্রের অফিসগুলো কীভাবে চালাবে তারা সেই ব্যবস্থা নেবে।
তথ্য মন্ত্রণালয় পিআইডির মাধ্যমে, স্থানীয় সরকার বিভাগ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মসজিদগুলোকে ব্যবহার করে মানুষকে আরও সচেতন করা হবে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিভাগের ইউনিয়ন পর্যন্ত কর্মচারী আছে, তারা এ বিষয়ে কাজ করবেন। গণমাধ্যমেরও একটা বড় ভূমিকা আছে। ৭ থেকে ১০ দিন সময় দিয়েছি এ সময়ে তারা ওয়ার্ক প্ল্যান রেডি করবে। ’
সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখন যেটা করছি, কোলাবরেশন উইথ সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং ফরেন মিনিস্ট্রির সাথে, এয়ারপোর্টে এবং বিভিন্ন এন্ট্রিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের লোকজন থাকে। অনেকে সার্টিফিকেট নিয়ে আসে তারা কোভিড ফ্রি। যারা নিয়ে আসেননি তারা কতদিন সেখানে হোম কোয়ারেন্টিনে ছিলেন, সেই সার্টিফিকেট নিয়ে আসেন।
যাদের এ রকম কোন সার্টিফিকেট নেই এবং যাদের সন্দেহ হয় তাদের আমরা ইনস্টিটিউশনাল কোয়ারেন্টিনে নিয়ে যাই। ঢাকার দিয়াবাড়ি ও হাজী ক্যাম্পে (কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা) আছে। করোনা যখন পিকে ছিল তখন সাড়ে তিন হাজারের মতো ইনস্টিটিউশনাল কোয়ারেন্টিনের ক্যাপাসিটি ছিল। সেখানে ১৫শোর উপরে উঠে নাই। এজন্য আমরা এটাকে কমিয়ে দুই হাজারের মতো রেখেছি। এতে আমাদের সাশ্রয় হচ্ছে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি আবার রিভাইভ করে, সিচ্যুয়েশন খারাপ হয়ে যায় তাহলে আমরা কোয়ারেন্টিন সুবিধা আবার সাড়ে তিন হাজারে নিয়ে যাব। যারা কোভিড ফ্রি ও ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন করে এসেছেন তাদের কোয়ারেন্টিনে নেয়া লাগে না। ’
আবার লকডাউনের মতো কোন ঘটনা ঘটছে কি না- প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমরা ওটা (লকডাউন) এখনও চিন্তা করিনি। অনেক দেশেই বিশেষ করে শীত প্রধান দেশে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নভেম্বরের শেষ থেকে দ্বিতীয় ওয়েভ আসে কি না সেই প্রস্তুতি রাখতে হবে। দ্বিতীয় ওয়েভ ঠেকাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে হবে।