বৃহস্পতিবার মেটার কর্মকর্তারা বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনের সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের জানান যে নির্বাচনকে সামনে রেখে অপপ্রচার বন্ধ করার বিষয়ে ‘প্রাথমিক আলোচনা’ হয়েছে মেটা কর্মকর্তাদের সাথে।
“ফেসবুকে যে ধরনের অপপ্রচার হয়, সেগুলো কীভাবে রোধ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বা ফেসবুকের নীতি বহির্ভূত কোনো প্রচারণা থাকলে তারা তা ডিলিট, রিমুভ, ব্লক করবে”, মেটা কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন মি. দেবনাথ।
অশোক দেবনাথ জানান নির্বাচন কেন্দ্রিক কোনো প্রচারণা নিয়ে নির্বাচন কমিশন মেটা কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা সেটি ফেসবুক থেকে সরিয়ে নেবে।
নির্বাচন কমিশনের এই দাবির পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে যে, মেটা কর্তৃপক্ষ কি বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের কথামত তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে কোন কন্টেন্ট আদৌ সরিয়ে দেবে?
মেটা কর্তৃপক্ষ যা বলছে
নির্বাচন কমিশনের সচিবের মন্তব্যের জের ধরে বিবিসি বাংলার তরফ থেকে মেটা কর্তৃপক্ষের কাছে ই-মেইল করে জানতে চাওয়া হয় যে তারা নির্বাচন কমিশনের কথা শুনবে কী না?
মেটার মুখপাত্রের বরাত দিয়ে মেইলের জবাবে প্রতিষ্ঠানটি জানায় যে তাদের সব প্ল্যাটফর্মে ‘নির্বাচনের বিশুদ্ধতা’ যেন বজায় থাকে, তা নিশ্চিত করতে তারা নির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে।
নির্বাচনের স্বকীয়তা যেন বজায় থাকে, সে লক্ষ্যে তারা সরকার, বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন ও এনজিওগুলোর সাথে ‘গঠনমূলক সংলাপ ও নিয়মিত যোগাযোগ’ বজায় রাখে বলে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।
মেটার ‘গুজব, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও ক্ষতিকর কন্টেন্ট’ সম্পর্কিত বৈশ্বিক নীতিমালার অংশ এটি।
এছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার স্বার্থে, গুজব মোকাবেলা করতে ও ক্ষতিকর কন্টেন্টের বিরুদ্ধে ফেসবুকসহ মেটার প্ল্যাটফর্মগুলোতে কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, সেটিও উল্লেখ করা হয় মেইলে।
যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়
বিবৃতিতে দাবি করা হয় যে কোনো নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয়, ত নিশ্চিত করা মেটার অন্যতম উদ্দেশ্যগুলোর একটি। এর জন্য গত কয়েক বছরে কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি তৈরির পেছনে অর্থ বিনিয়োগ করেছে মেটা।
তারা বাংলাদেশের নির্বাচনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মরত ব্যক্তিদের প্রস্তুত করছে।
প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মেটার সাথে থাকা অনলাইন নিরাপত্তা, রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন ও কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও দেয়া হয়েছে।
এছাড়া মানুষের পাশাপাশি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পেছনেও বিনিয়োগ করেছে তারা, যা আগের চেয়ে দ্রুততার সাথে আসন্ন হুমকি অনুমান করতে ও পদক্ষেপ নিতে সক্ষম।
মেটা বলছে নির্বাচনকে ঘিরে ছড়ানো যেসব গুজব মানুষের ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, সে ধরনের গুজব তারা সরিয়ে ফেলে।
কারা ভোট দিতে পারবেন, প্রদত্ত ভোট বিবেচনায় নেয়া হবে কি না বা ভোট দেয়ার সময় কী নিয়ে যেতে হবে – এই ধরনের তথ্যকে কেন্দ্র করে তৈরি করা ভুয়া খবরকে মেটা ‘গুজব’ হিসেবে চিহ্নিত করে।
এছাড়া কোনো প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন কী না, সে সংক্রান্ত কোনো ভুয়া খবরকেও গুজব হিসেবে ধরা হয়।
মেটা কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে কোনো কন্টেন্টের কারণে কেউ শারীরিক ক্ষতির শিকার হতে পারে, তাহলে সে ধরনের কন্টেন্ট সরিয়ে দেয়া হয়।
একইভাবে, যেসব কন্টেন্টের মাধ্যমে সহিংসতাকে উস্কানি দেয়া হয়, বেআইনি কোনো কাজে প্ররোচনা দেয়া হয় বা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্থ করার আহ্বান জানানো হয়, সে ধরনের কন্টেন্টও তারা সরিয়ে দেয়।
এসব কন্টেন্টের মধ্যে রয়েছে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে তৈরি করা মিডিয়া রিপোর্ট ও ‘ডিপ ফেক’ নিউজ। এছাড়া নির্বাচনের তারিখ, সময়, স্থান বা নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে তৈরি করা ভুয়া খবরও রয়েছে এই তালিকায়।
যেভাবে কন্টেন্ট অপসারণ করা হয়
মেটা বলছে, গুজব ঠেকাতে সারা বিশ্বে ৯০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করে তারা। বাংলাদেশে তারা যেসব প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করে, এর মধ্যে রয়েছে ফ্যাক্টওয়াচ, এএফপি ও বুম বাংলাদেশ।
গুজব ছড়ানো কন্টেন্টের পাশাপাশি যেসব অ্যাকাউন্ট থেকে গুজব ছড়ানো হয়, সেগুলোও ডিলিট করা হয় বলে বলছে মেটা। তাদের দাবি অনুযায়ী, দৈনিক অন্তত ১০ লাখ অ্যাকাউন্ট তারা ডিলিট করে থাকে।
আর কোনো বিষয়ে গুজব ছড়িয়ে যাওয়ার পর সেই ঘটনা সংক্রান্ত সঠিক খবর বা পোস্টের লিংক বেশি করে প্রচার করা হয় যেন ব্যবহারকারীরা ঐ নির্দিষ্ট বিষয়ে সঠিক তথ্য জানতে পারে।
মেটা জানায়, তাদের প্ল্যাটফর্মের নিয়মকে ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে অনেকে কন্টেন্ট তৈরি করে থাকে, যে বিষয়ে তারা ওয়াকিবহাল।
এরকম ঘটনা ঠেকাতে তারা নিয়মিত তাদের আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সিস্টেমের উন্নয়ন করছে এবং সুশীল সমাজ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনের সাথে কাজ করছে বলে উঠে আসে মেটার বিবৃতিতে।
অর্থসংবাদ/এমআই