শনিবার (১২ আগস্ট) আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
টেকসই বাংলাদেশ বিনির্মাণে তারুণ্যের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে, বিশেষ করে প্রতিযোগিতামূলক শ্রমবাজারে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার জন্য তরুণদের সবুজ-দক্ষতায় পারদর্শী করে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০৪১ ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আলোকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রম-চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে ‘জাতীয় সবুজ-দক্ষতা কৌশল’ প্রণয়নের আহ্বান জানাচ্ছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
এ ব্যাপারে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বৈশ্বিক ও দেশীয় প্রেক্ষাপটে টেকসই বাংলাদেশ বিনির্মাণে তারুণ্যের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে, বিশেষ করে দেশের প্রাণ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ ও প্রতিবেশ সুরক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও প্রক্রিয়া ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষণ করতে তরুণদের সবুজ-দক্ষতায় পারদর্শী হওয়া অপরিহার্য। তাই সময়ের চাহিদা বিবেচনায় ‘জাতীয় সবুজ-দক্ষতা কৌশল’ প্রণয়ন ও তার কার্যকর বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব ঘুচিয়ে, তরুণ সমাজের কাঙ্ক্ষিত কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তিনি বলেন, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০৪১ ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। তাই দেশের শ্রমশক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানবসম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে তরুণদের সবুজ-দক্ষতায় পারদর্শী করে তুলতে পারলে, প্রতিযোগিতামূলক শ্রমবাজারে এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথেও এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
দেশের জনগোষ্ঠীর এক-পঞ্চমাংশ তরুণ। বিপুল জনমিতিক সম্ভাবনাময় এই শক্তিকে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী সবুজ-দক্ষতায় পারদর্শী করে তোলা ও তাদের অবাধ কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত করতে সহায়ক হিসেবে আট দফা সুপারিশ প্রস্তাব করছে সংস্থাটি। সুপারিশসমূহ হলো:
১. সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে সুপরিকল্পিত ও সুনির্দিষ্ট ‘জাতীয় সবুজ-দক্ষতা কৌশল’ প্রণয়ন করতে হবে এবং যথাযথ প্রাধান্যের সঙ্গে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
২. সবুজ-দক্ষতা কৌশল অনুযায়ী শিক্ষাব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হবে, বিশেষ করে নবায়নযোগ্য শক্তি, টেকসই কৃষি, পরিবেশবান্ধব নগর পরিকল্পনা এমন বিষয়সমূহ যুক্ত করতে হবে এবং শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।
৩. আন্তর্জাতিক শ্রম চাহিদা অনুযায়ী তরুণ জনগোষ্ঠীকে কর্মমুখী ও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত ও সবুজ দক্ষতায় পারদর্শী করে তুলতে হবে।
৪. আর্থিকভাবে অসচ্ছল ও নারী শিক্ষার্থীদের বিশেষ প্রণোদনার মাধ্যমে সবুজ-দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক শিক্ষাগ্রহণ নিশ্চিত করাসহ প্রতিবন্ধী, আদিবাসী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৫. জাতিসংঘের সুপারিশ অনুয়ায়ী শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়ার পাশাপাশি কারিগরি ও সবুজ শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে।
৬. স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। বিশেষ প্রণোদনার মাধ্যমে যেসব ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাত থেকে তরুণরা কর্মহীন হয়েছে, সেগুলো চালুর উদ্যোগ নিতে হবে।
৭. তরুণদের মধ্যে সবুজ উদ্যোক্তা বিকাশের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিকল্প পেশার (যেমন: সবুজ-দক্ষতানির্ভর আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিং) জন্য কর্মহীন তরুণ বা সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের প্রস্তুত করার উদ্যোগ নিতে হবে।
৮. সরকারি ও বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে জনবল কাঠামোতে সবুজ-দক্ষতার আলোকে প্রযোজ্য পরিবর্তন আনতে হবে এবং সকল চাকুরিতে নিয়োগ-প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত এবং মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সমান প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।
অর্থসংবাদ/এমআই