কিন্তু নতুন একটি গবেষণা বলছে, ফিট এবং সুস্থ থাকতে প্রতিদিন চার হাজার কদম হাঁটাই যথেষ্ট। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
ইউরোপীয় জার্নাল অব প্রিভেন্টিভ কার্ডিওলজিতে প্রকাশিত ওই গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে দুই হাজার ৩৩৭ ধাপ হাঁটলে কার্ডিওভাসকুলার রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি অর্ধেকে নেমে আসে। এ ছাড়া দিনে কমপক্ষে তিন হাজার ৯৬৭ কদম হাঁটলে যে কোনো কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি কমতে শুরু করে। সারা বিশ্বে পরিচালিত ১৭টি গবেষণা থেকে দুই লাখ ২৬ হাজার ৮৮৯ জন অংশগ্রহণকারীর কাছ থেকে নতুন তথ্য পাওয়া গেছে।
পোল্যান্ডের মেডিকেল ইউনিভার্সিটি অব লজের গবেষক এবং ম্যাসিয়েজ বানাচের নেতৃত্বে পরিচালিত জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ প্রতিরোধের জন্য সিকারোন সেন্টারের গবেষকেরা এ গবেষণা করেছেন।
গবেষণা বলছে, হাঁটার পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। আপনি প্রতি ৫০০ থেকে এক হাজার কদম হাঁটলে যে কোনো রোগ বা কার্ডিওভাসকুলার রোগ থেকে আপনার মৃত্যুঝুঁকি নাটকীয়ভাবে হ্রাস পায়। আর প্রতিদিন ২০ হাজার কদম বা ৯-১০ মাইল হাঁটলে স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও হ্রাস পায়।
অধ্যাপক বানাচ বলেন, ‘আমাদের গবেষণা থেকে জানতে পেরেছি, আপনি যত হাঁটবেন তত ভালো থাকতে পারবেন। এটি নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বয়স, অঞ্চল ও জলবায়ু—সব ক্ষেত্রেই হাঁটার পরিমাণ একই। এ ছাড়া আমাদের বিশ্লেষণ থেকে ইঙ্গিত পেয়েছি যে, সব ধরণের মৃত্যুঝুঁকি হ্রাস করতে এবং বিশেষ করে কার্ডিওভাসকুলার রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে দিনে চার হাজার কদমের মতো হাঁটা প্রয়োজন।’
বিভিন্ন তথ্য থেকে এটা দেখা গেছে যে, অলস জীবনযাপন কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বাড়ায় এবং আয়ু কমাতে পারে। সমীক্ষা অনুসারে, বিশ্বের জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশেরও বেশি মানুষ পর্যাপ্ত শারীরিক ব্যায়ামের সঙ্গে যুক্ত নয়।
এ ক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় নারীর সংখ্যাই বেশি এবং ধনী দেশগুলোর ব্যক্তিরা উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় কম শারীরিক পরিশ্রম করেন। অলসতা এবং শারীরিক পরিশ্রম না করার কারণে বিভিন্ন রোগে প্রতি বছর ৩২ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।
বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর যেসব সাধারণ কারণ রয়েছে সে ক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত শারীরিক কার্যকলাপের কারণে মৃত্যুকে চতুর্থ স্থানে তালিকাভুক্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। করোনা মহামারির কারণে শারীরিক কার্যকলাপের মাত্রা হ্রাস পেয়েছে এবং এই অবস্থার এখনো কোনো উন্নতি হয়নি।
সর্বপোরি অধ্যাপক বানাচ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে আমাদের সব সময় ডায়েট এবং ব্যায়ামসহ জীবনধারায় পরিবর্তন আনার ওপর জোর দেওয়া উচিত।’
ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের সহযোগী মেডিকেল ডিরেক্টর প্রফেসর জেমস লিপার বলেন, ‘এই গবেষণা আমাদের দেখায় যে হাঁটাচলা করা স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ভালো। এটিকে বিস্ময়কর ওষুধ হিসাবেও প্রশংসা করা যায়।’
অর্থসংবাদ/এমআই