জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাত বার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস-২০২৩ উদযাপন উপলক্ষ্যে শোক সভা এবং দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি (সিএসই)।
সোমবার (১৪ আগস্ট) সিএসইর হেড অফ ট্রেনিং এন্ড অ্যাওয়ারনেস এম এ সাদেকের সঞ্চালনায় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার ড. মিজানুর রহমান। এতে সভাপতিত্ব করেন সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম।
অনুষ্ঠানের অন্যান্য আলোচকরা হলেন- সিএসইর পরিচালক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. গোলাম ফারুক। এসময় সিএসইর পরিচালক মো. সিদ্দিকুর রহমান এবং মোহাম্মাদ নাসির উদ্দিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এতে আরো অংশগ্রহণ করেন সিএসইর ট্রেক হোল্ডারগণ এবং সিএসইর সকল কর্মকর্তাবৃন্দ।
প্রধান আলোচক কমিশনার ড. মিজানুর রহমান বলেন, দেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি গড়ে দিয়ে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার সংক্ষিপ্ত শাসনকালে অর্থনীতির প্রতিটি খাতের জন্যই দূরদৃষ্টিসম্পন্ন দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন তিনি। গত ১৪ বছরে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে সেই নির্দেশনা অনুযায়ী সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। অর্থনৈতিক বা সামাজিক অবস্থানের আজকের যে উন্নয়ন তাঁর সবটুকুই বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যার নেতৃত্ত্বের কৃতিত্ব। বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্ন ছিল একটি স্বচ্ছ, স্বাধীন, পরিশীলিত জাতি হিসেবে অর্থনৈতিকভাবে বলিষ্ঠ হওয়া এবং বিশ্ব নীতির সাথে ইন্টিগ্রেটেড হয়ে এগিয়ে যাওয়া। আজ আমরা দেখতে পাই যে, এই লক্ষ্য অর্জনে প্রধানমন্ত্রীর যে ডেডিকেশন তা সত্যিই প্রশংসনীয় এবং আমরা ক্রমান্বয়ে সে দিকে সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছি।
সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম তাঁর আলোচনায় বলেন, দেশ গঠনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের আত্মত্যাগ বিশ্বে অদ্বিতীয়। আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরন করছি তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপকে এবং তাঁর ও তাঁর পরিবারের সবার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ইতিহাস মানে, স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস। তাঁকে নিয়ে এই সীমিত সময়ে আলোচনায় করে শেষ করা যাবে না। তাঁর ক্ষণস্থায়ী জীবনে যাই করেছেন তার সবই দেশের জন্য করেছেন। বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছর শাসনামল উন্নয়নের এক বিস্ময়। ১৯৭২ সালে অর্থনীতির আকার মাত্র আট বিলিয়ন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শূন্য। সঞ্চয় জিডিপির মাত্র ৩ শতাংশ। বিনিয়োগ জিডিপির ৯ শতাংশ। পুরো অবকাঠামো ধ্বংসপ্রাপ্ত। এক কোটি শরণার্থীর পুনর্বাসন, দেশের ভেতরে ধ্বংসপ্রাপ্ত ২০ লাখ মানুষের ঘরবাড়ির ব্যবস্থা করার চ্যালেঞ্জ। তবু তিনি অল্প সময়েই প্রণয়ন করেছেন সংবিধান, প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও শিক্ষা কমিশন। স্থাপন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক। করেছেন ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সমান গুরুত্ব দিয়েছেন কৃষি ও শিল্পের উন্নয়নের ওপর। আমরা এখন যে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রনয়নের কাজ করছি যার ভিত্তি হল বঙ্গবন্ধুর সেই প্রথম পরিকল্পনার অংশ, এমনকি শিল্প ক্ষেত্রে ও যে পরিবর্তন তাও তাঁর দূরদর্শী চিন্তার অংশ।
পরিচালক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হলো আমাদের স্বাধীন দেশের সংবিধান রচনা করা। আর সে কাজটি বঙ্গবন্ধু করে গেছেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে তিনি এত সব প্রতিকূলতা পায়ে দলে ঠিকই সোনার বাংলা অর্জনের পথেই হাঁটছিলেন । কিন্তু তাকে হত্যার মাধ্যমে আমাদের আগ্রযাত্রা বন্ধ হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে তাঁর সুযোগ্য কন্যার নেতৃত্ত্বে তা আবার প্রাণ পায় এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার প্রচলিত আইনে হয়েছে। এই শোক দিবসে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি মহান এই নেতার কথা, যিনি আমাদের একটি স্বাধীন দেশ দিয়েছেন। সেই সাথে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দিয়ে গেছেন পথ রেখা আর সেই পথ রেখার উপর ভিত্তি করেই দেশনেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাছিনা আজ দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু এবং তার সাথে নিহত পরিবারের সব সদস্য ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. গোলাম ফারুক বলেন, বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের সাধনা ছিল শোষণহীন সমাজ গঠন। যেখানে ধনী-দরিদ্রের মধ্যে কোনো ব্যবধান থাকবে না, যেখানে প্রতিটি মানুষ জীবনের ন্যূনতম প্রয়োজন আহার, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষার সুযোগ পাবে এমন সাধনা ছিল বঙ্গবন্ধুর। সারাবিশ্বে বাঙালি জাতির স্বাধীন সত্তাকে তিনি সম্মানের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শন আজও গুরুত্বপূর্ণ। সমৃদ্ধিশালী জাতি গঠনে তিনি রেখে গেছেন অনন্য, অতুলনীয় অর্থনৈতিক দর্শন। তিনি ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া নতুন রাষ্ট্রের সংবিধানে দারিদ্র্য মুক্তির চমৎকার পথনির্দেশনা দিয়েছেন। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূর করতে বলিষ্ঠ কণ্ঠে ব্যক্ত করেছেন প্রতিশ্রুতি। গরিব-দুঃখী সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, গ্রামের পরিশ্রমী কৃষক যারা রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে অনেক খেটে ফসল ফলান তাদের সবার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য নিজের দেওয়া অঙ্গীকার বাস্তবায়নে জাতির পিতা ছিলেন নির্ভীক। আজ এত বছর পরও বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনকে ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক মনে হয়। এ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং স্বয়ম্ভরতা অর্জন ছিল তার চিন্তা- চেতনার মূল কেন্দ্রবিন্দু। বঙ্গবন্ধু যে ধারণাটি পোষণ করতেন তা হলো, দেশের মানুষ যদি হতদরিদ্র থাকে তবে দেশও হতদরিদ্র থাকবে। কাজেই মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের মাধ্যমে যখন মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর করে তোলা যাবে তখন দেশও সমৃদ্ধিশালী হয়ে উঠবে। বঙ্গবন্ধু তাঁর অর্থনীতির ধারণায় সম্পদের সুষম বণ্টন ও সম্পদ সৃষ্টির বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এ দুটি উপাদানই মানবিক উন্নয়নের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে যুক্ত।
পরিশেষে বঙ্গবন্ধু এবং তার সাথে নিহত পরিবারের সব সদস্যদের জন্য বিশেষ দোয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয় ।
অর্থসংবাদ/এসএম