ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় নিরাপত্তা ও দেশীয় ব্যবসা বৃদ্ধির কথা বলে কম্পিউটার, ল্যাপটপসহ আইটি হার্ডওয়্যার আমদানি সীমিত করেছে। মূলত চীনকে লক্ষ্য করে এই আমদানি সীমিত করার নির্দেশ দেওয়া হলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি পণ্য নির্মাণকারী কোম্পানিগুলো এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
অ্যাপল, ইনটেল, গুগল, লেনোভো, ডেল ও এইচপির মতো কোম্পানিগুলো মার্কিন সরকারের কাছে পীড়াপীড়ি করছে, তারা যেন যত দ্রুত সম্ভব ভারতকে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানায়। শিল্পের অভ্যন্তরীণ তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্যে এই কোম্পানিগুলো এমনকি আনুষ্ঠানিক সংলাপের প্রয়োজনের কথাও বলেছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড ট্যাবলেট, ল্যাপটপ, অল ইন ওয়ান পার্সোনাল কম্পিউটারসহ বেশ কিছু সামগ্রী আমদানি সীমিত করেছে। এসব আমদানি করতে কেন্দ্রীয় সরকারের বাড়তি অনুমতি বা লাইসেন্স লাগবে। তবে সরকারের এই নীতি ভারতেও সমালোচনার মুখে পড়েছে। সেখানে অনেকেই বলছেন, ভারত কি আবার লাইসেন্স রাজের যুগে ফেরত গেল, নাকি সেই যুগের এখনো অবসান হয়নি। বিভিন্ন মহলের সমালোচনার মুখে অবশ্য নভেম্বর পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছে।
১৫ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ১৫টি বাণিজ্য সংগঠন যেমন কনজ্যুমার টেকনোলজি অ্যাসোসিয়েশন, ইনফরমেশন টেকনোলজি ইন্ডাস্ট্রি কাউন্সিল, সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন, ইউনাইটেড স্টেটস কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস প্রভৃতি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি ও বাণিজ্যমন্ত্রীকে আহ্বান জানিয়েছে, মার্কিন সরকার যেন সব ফোরামে ভারত সরকারকে জানায়, আইসিটি খাতে তারা যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তা যেন দেশটির আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অঙ্গীকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
এসব সংগঠনের আরও দাবি, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে ভারতের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
ভারতে অবস্থিত বৈশ্বিক আইটি কোম্পানির প্রতিনিধিরা সরকারের সঙ্গে আলোচনায় এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার সময় ৯ মাস থেকে ১ বছরের জন্য পিছিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। তাঁদের জোর বক্তব্য, ভারতে উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু করতে সময় লাগবে এবং লাইসেন্সের বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পেতেও সময় প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সংগঠনগুলো ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। তারা বলেছে, হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি বিশ্ব বাণিজ্যে ভারতের অন্তর্ভুক্তি ব্যাহত হতে পারে। এতে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
বাণিজ্য সংগঠনগুলোর হুঁশিয়ারি, এ ধরনের বাণিজ্য বাধার কারণে আন্তর্জাতিক সরবরাহব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটতে পারে, এমনকি বাণিজ্যের প্রক্রিয়াও ব্যাহত হতে পারে। তারা আরও বলেছে, এসব বিষয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিজস্ব নিয়মকানুন আছে। তা উদ্ধৃত করে মার্কিন সরকারের প্রতি তাদের আহ্বান, তারা যেন সেসব নিয়মকানুনের আলোকে ভারত সরকারকে এসব বাণিজ্য সীমিতকরণ পদক্ষেপ নিতে নিরুৎসাহিত করে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারত প্রায় ৫৩০ কোটি ডলার মূল্যের ব্যক্তিগত কম্পিউটার, ল্যাপটপসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি আমদানি করেছে, যার সিংহভাগই আসে চীন থেকে। ফলে এই পদক্ষেপের নিশানা যে চীন, তা বলাই বাহুল্য। তবে চীন থেকে এলেও এগুলো মূলত মার্কিন কোম্পানিগুলোর পণ্য, উৎপাদিত হয় চীনে। পাশাপাশি এসব ক্ষেত্রে তথ্য নিরাপত্তার বিষয়টিও উল্লিখিত হয়েছে। যদিও পরে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আরও স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা দেয় যে সরকার এমন প্রযুক্তি ও হার্ডওয়্যার আমদানিতে আগ্রহী, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরির আশঙ্কা একেবারেই কম, ন্যূনতম।
ভারতের বিশ্লেষকেরাই বলছেন, এসব লক্ষ্য পূরণ করা জরুরি। সরকার যদি প্রযুক্তির নিরাপত্তার ঝুঁকির বিষয়ে এতটাই উদ্বিগ্ন হয়, তাহলে হাতে গোনা কয়েকটি দেশ থেকে প্রযুক্তি আমদানি বন্ধ রাখলেই চলে, কিন্তু সে জন্য লাইসেন্স নীতি পুনরায় চালুর প্রয়োজন ছিল না। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য বলছে যে এই লাইসেন্স প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে চালু করা হবে। কিন্তু তা চালু হলেও ভারত আবার পুরোনো লাইসেন্স রাজের যুগে ফেরত যাবে বলে আশঙ্কা। ফলে পণ্যের প্রাপ্তি ও দামে প্রভাব পড়বে।
এ ছাড়া আশঙ্কা, লাইসেন্স নীতি চালু হলে লালফিতার দৌরাত্ম্য আবার বাড়বে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে অন্যান্য ক্ষেত্রেও যে এমন ‘লাইসেন্স নীতি’ চালু হবে না, সেই আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
অর্থসংবাদ/এসএম