একটি জুতার কারখানাকে বন্ড লাইসেন্স দিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছেন নরসিংদী-২ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আশরাফ খান দীলিপ। রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্স দিয়ে থাকে রাজস্ব বোর্ডের ‘বন্ড কমিশনারেট’ নামে একটি কর্তৃপক্ষ। কোনো প্রতিষ্ঠান যোগ্য হলে ওই সংস্থা তা যাচাই-বাছাই করে লাইসেন্স ইস্যু করে। এ জন্য এমপির তদবিরকে ‘স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট’ এবং ‘অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ’ বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
অবশ্য সংসদ সদস্য বলছেন, নির্বাচনী এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের স্বার্থেই এটি করেছেন তিনি।
গত ১২ আগস্ট নরসিংদীর পলাশে অবস্থিত দেশবন্ধু গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ফুটওয়্যারের কারখানাকে বন্ড লাইসেন্স দিতে এনবিআর চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন এই সংসদ সদস্য। চিঠিতে তিনি লেখেন, প্রতিষ্ঠানটিতে এ পর্যন্ত বিনিয়োগের পরিমাণ ২৬০ কোটি টাকা এবং প্রায় সাড়ে তিন হাজার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। উৎপাদন ক্ষমতা অনুযায়ী বাৎসরিক রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ৮ কোটি ৬৪ হাজার মার্কিন ডলার। আমি যতটুকু জেনেছি সঠিকভাবে রপ্তানি করতে পারলে দেশ তাদের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হবে।
তিনি আরও লেখেন, প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালের ১৫ ডিসেস্বর বন্ড কমিশনারেটে (ঢাকা দক্ষিণ) বন্ড লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন করেছে। কিন্তু অনেক দিন পেরিয়ে গেলেও তারা বন্ড লাইসেন্স পায়নি। প্রতিষ্ঠানটির বিপরীতে ২৬০ কোটি টাকার ব্যাংকঋণ রয়েছে যার বিপরীতে তাদের বিপুল পরিমাণ সুদ ও কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে। শিগগিরই বন্ড সুবিধার মাধ্যমে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম শুরু করতে না পারলে তাদের পক্ষে কোনোভাবেই এই বিপুল পরিমাণ ব্যাংক সুদ ও কিস্তি পরিশোধ করা সম্ভব হবে না। ফলে ব্যাংকঋণগুলো মন্দ ঋণে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানে নিয়োগকৃত এবং কর্মরত এলাকার ছেলে-মেয়েরা কর্মসংস্থান হারাবে ও বেকার হয়ে পড়বে। এমতাবস্থায় নতুন বন্ড লাইসেন্স ইস্যু করতে আপনার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্ড লাইসেন্স পেতে হলে কোনো প্রতিষ্ঠানকে রপ্তানিমুখী শিল্প হিসেবে কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। এগুলো যাচাই বাছাই করে যথাযথ পাওয়া গেলে স্বাভাবিকভাবেই বন্ড লাইসেন্স দেওয়া হয়। এজন্য এমপির তদবিরের প্রয়োজন হয় না। তদবির করা হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থা এতে চাপ বোধ করে।
এ বিষয়ে আনোয়ারুল আশরাফ খান বলেন, এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের কথা ভেবে সুপারিশ করেছি। আমার চিঠিতে আমি কোথাও লিখিনি যে এটা দিতেই হবে, দেওয়ার অনুরোধ করা যেতেই পারে। আমার এলাকায় একটা ফ্যাক্টরি চালু হলে কর্মসংস্থান হবে। আইনগত কোনো বাধা না থাকলে দিলে অসুবিধা কী?
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, বন্ড লাইসেন্স পেতে আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের ২৩ ধরনের শর্ত পূরণ করতে হয়। এরমধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান যখন বন্ড লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে তখন দেখা যায় অনেক ডকুমেন্ট অসম্পূর্ণ থাকে। আবার অনেক ডকুমেন্ট চাহিদা মতো হয় না। পরে চিঠি দিলে সেটা আবার পাঠাতে হলেও একটা সময় লাগে। সর্বসাকুল্যে এ প্রক্রিয়ার যাচাই-বাছাইয়ে সময়ের প্রয়োজন হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার মো. আহসানুল হক বলেন, সংসদ সদস্য তার এলাকার মানুষদের জন্য সুপারিশ করতেই পারেন। আমরা আমাদের আইনমতো, বিধি মোতাবেক যতটুকু দরকার সেভাবে হিসাব-নিকাশ করে দেই। তবে একটু সময় লাগে।
বন্ড লাইসেন্সের অধীনে প্রতিষ্ঠানগুলো কাঁচামাল শুল্কমুক্ত আমদানির সুবিধা পায়। রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) সরাসরি রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য বন্ড লাইসেন্সের মেয়াদ ৩ বছর। ইপিজেডের বাইরের প্রতিষ্ঠানের জন্য বন্ড লাইসেন্সের মেয়াদ প্রদানের তারিখ থেকে দুই বছর।
অর্থসংবাদ/এসএম