চলতি অর্থবছরের প্রথম দু’মাসে (জুলাই-অগাস্ট) বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের পণ্য-বাণিজ্যে ঘাটতি কমেছে। মূলত আমদানির চেয়ে রফতানি বৃদ্ধির হার বেশি এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ ইতিবাচক থাকায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এতে লেনদেনের ভারসাম্যের ওপর চাপও কমে গেছে। উল্লেখিত সময়ে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ৩২৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২০ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২০-২১ অর্থবছরের আগস্ট মাসের বৈদেশিক লেনদেনে চলতি হিসাবে ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট) বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো- নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যালেন্স অফ পেমেন্টের তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে ইপিজেডসহ রফতানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৬৭৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে ৭৪৩ কোটি ২০ লাখ ডলার। সেই হিসেবে অর্থবছরের প্রথম দু’মাসে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ পাঁচ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তিন ভাগের এক ভাগ। গত বছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল ২০৫ কোটি ডলার।
উল্লেখিত সময়কালে পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশের আয় আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেশি হয়েছে। বিপরীতে পণ্য আমদানির ব্যয় আগের বছরের চেয়ে ১৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ কমেছে। দেশের অভ্যন্তরে বিনিয়োগের চাহিদা কম থাকায় আমদানিজনিত চাহিদাও কম ছিল। তাই আমদানি ব্যয় অত বাড়েনি।
তবে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ চাঙা থাকায় বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে। প্রথম দুই মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।
এছাড়া সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতিও কমেছে। গত অর্থবছরের জুলাই-অগাস্ট সময়ে এ খাতের ঘাটতি ছিল ৫০ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আর এ অর্থবছর একই সময়ে তা কমে ১৯ কোটি ৭০ লাখ ডলারে নেমে এসেছে। মূলত বীমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।
গত জুলাই-আগস্ট সময়ে ৩৬ কোটি ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাংলাদেশে এসেছে। গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ৪৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এ হিসাবে দু’মাসে এফডিআই কমেছে ২৪ দশমিক ৭ শতাংশ।
বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে মোট যে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ দেশে নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকেই নিট এফডিআই বলা হয়।
আলোচ্য সময়ে ৪৫৬ কোটি ২০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত বছর এই দু’মাসে পাঠিয়েছিলেন ৩০৪ কোটি ২০ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ। বাংলাদেশের ইতিহাসে দু’মাসে রেমিট্যান্সে এত বেশি প্রবৃদ্ধি কখনওই হয়নি।