বৃহস্পতিবার স্পিকার সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে সফররত ভিয়েতনামের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি প্রেসিডেন্ট ট্র্যান দাই কোয়াং এর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান।
শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ভিয়েতনাম বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। ভিয়েতনাম-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ৫০ বছর সম্পন্ন করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভিয়েতনামের ঐতিহাসিক নেতা হো চি মিন দুজনেই সাধারণ মানুষের কল্যাণে আমৃত্যু কাজ করেছেন। দুই জাতিরই ঐতিহাসিক সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে।
বৈঠকে বাংলাদেশ ভিয়েতনাম সুদীর্ঘ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, দুদেশের ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক সাদৃশ্য, বাংলাদেশের চলমান অভূতপূর্ব উন্নয়ন, ভিয়েতনাম-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন, পারস্পরিক সফর বিনিময়ের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভিয়েতনামের বিনিয়োগ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়।
স্পিকারের আমন্ত্রণে সংসদ ভবন পরিদর্শন ও দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের বিষয়টি ঐতিহাসিক উল্লেখ করে ভুওং ডিন হুয়ে বলেন, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক স্থিতিশীলতা ও চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম অত্যন্ত প্রশংসনীয়। দারিদ্র্য দূরীকরণ, অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ইত্যাদিসহ ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ অর্জনে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দুদেশের সংসদ তথা দুদেশের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও সুদৃঢ় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
স্পিকার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পৃথিবীতে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন বিস্ময়। তার নিরলস প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। তার নেতৃত্বে দেশে নারীর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনজীবন সুরক্ষা, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিবেচনায় ডেল্টা প্লান ২১০০ গ্রহণসহ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ নির্মাণে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। দেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজমান থাকায় বর্তমানে দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বিদ্যমান। এ সময়, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে চামড়া শিল্প, সিরামিক শিল্প, হিমায়িত খাদ্য প্রসেসিং ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভিয়েতনাম সরকারের প্রতি বিনিয়োগের আহ্বান জানান স্পিকার।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের পারস্পরিক ব্যবসা-বাণিজ্যের বহু সম্ভাবনা বিদ্যমান। ভিয়েতনাম বাংলাদেশ থেকে ফার্মাসিউটিক্যালস, ইলেকট্রনিক, চামড়াজাত পণ্য এবং বিভিন্ন খাতে দক্ষ জনবল আমদানি করতে পারে। ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি ইত্যাদি ক্ষেত্রে দুদেশের পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি জরুরি। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসনে ভিয়েতনামের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
ভুওং ডিন হুয়ে বলেন, দুদেশের সংসদ, সরকার ও দুদেশের মানুষের মাঝে সম্পর্কন্নোয়নে ভিয়েতনাম সরকার অত্যন্ত আন্তরিক। দুদেশের নারী ও তরুণ সংসদ সদস্যদের পারস্পরিক সফর বিনিময়ের মাধ্যমে উভয় দেশ উপকৃত হতে পারে। এ সময় স্পিকারকে ভিয়েতনাম সফরের আমন্ত্রণ জানান তিনি।
এরপর, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের সংসদ এবং দুদেশের সংসদ সচিবালয়ের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।
বৈঠকে ভিয়েতনাম ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটি চেয়ারম্যান ভু হায় হা, ভিয়েতনাম ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ বিষয়ক কমিটি চেয়ারম্যান লি কুয়াং হিউ, সেক্রেটারি অব দ্য প্রভিন্সিয়াল পার্টি কমিটি থাই থান কিউ, পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী লি থি থু হাং, জনসুরক্ষা উপমন্ত্রী লি ভান তুয়েন, ভিয়েতনামের শিল্প ও বাণিজ্য উপমন্ত্রী ফান থি থাং, পরিকল্পনা উপমন্ত্রী ত্রান কুয়োক ফুওং, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও পর্যটন উপমন্ত্রী তা কুয়াং ডং উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, হুইপ ইকবালুর রহিম ও মেহের আফরোজ অংশগ্রহণ করেন।
বৃহস্পতিবার সকালে ভিয়েতনামের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি প্রেসিডেন্ট ট্র্যান দাই কোয়াং এর নেতৃত্বে ভিয়েতনামের প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসে ৷
অর্থসংবাদ/এমআই