সূত্র মতে, একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট। গতকাল (শুক্রবার) সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়। বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করার কথা উল্লেখ করা হয়। দেশের শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। ফলে বিএসইসি বা এর কোন কর্মকর্তার ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ বা নিষেধাজ্ঞার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র কোন ব্যক্তির নাম উল্লেখ না করলেও কিছু ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে বিভিন্ন জনের নাম উল্লেখ করে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে একটি চক্র। এর প্রেক্ষিতে Jamil Ahmod নামের একটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে বিএসইসি চেয়ারম্যানকে নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। ওই আইডির একটি পোষ্টে দাবি করা হয়, অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের মার্কিন ভিসা বাতিল করা হয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার হারিয়েছেন বলে গুজব ছড়ানো হয়। অথচ যুক্তরাষ্ট্র কারও ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলে কোথাও তাঁর নাম প্রকাশ করে না, তবে ব্যক্তিগতভাবে তাকে অবগত করা হয়। সুতরাং এ বিষয়টি সম্পূর্ণ মনগড়া, বানোয়াট ও গুজব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
জামিল আহমদের পোস্টের মন্তব্যে (কমেন্ট) এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। জহিরুল ইসলাম জাহি (Jahirul Islam Jahi) নামের একজন ওই পোস্টের মন্তব্যে লিখেছেন- ‘উনাকে কেন উনি কি নির্বাচন টেম্পারিং করেছে নাকি’। আল রিয়াদ (Al Riad) নামের একজন মন্তব্য করেছেন- ‘ভূয়া।।উনি কখনো এর আওতায় আসবেন না’। শাহজাহান নামের আরেকজনের মন্তব্য- ‘সম্পুর্ণরূপে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গুজব । রুবাইয়াত সাহেব তো নির্বাচন সম্পর্কে কিছুই জানেন না।’। এছাড়াও বেশ কয়েকজন পোস্টটির মন্তব্যে গুজব ও অপপ্রচারকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
জানা গেছে, গত ২৪ মে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওইদিন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এক বিবৃতিতে বলেন, নতুন নীতির আওতায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল (শুক্রবার) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানান, ভিসা নীতির আওতায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের সদস্যরা অন্তর্ভূক্ত রয়েছেন।
মূলত বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও ম্যাথিউ মিলারের বিবৃতি অনুযায়ী আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের সদস্যরা মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবেন। শেয়ারবাজার বা এর নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোনভাবেই বাংলাদেশের নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। সুতরাং বিএসইসি চেয়ারম্যান বা শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় কোনভাবেই আসবেন না বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান অর্থসংবাদকে বলেন, নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য না পেলে এগুলো গুজব। বিএসইসির তো নির্বাচনের সাথে কোন সম্পৃক্ততা নেই। বিএসইসি সরকারের সরাসরি কোনো প্রতিষ্ঠান না। সরকারের নির্বাচন বা অপারেশনাল ইস্যুর সাথে বিএসইসি জড়িত না। তাহলে তাদেরকে কেন ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হবে? আমার কাছে মনে হচ্ছে, এটি পুরোপুরি গুজব। বিনিয়োগকারীদের উচিৎ এসব গুজবে পেনিক না হয়ে সঠিক তথ্যের বিবেচনায় বিনিয়োগ করা।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক অর্থসংবাদকে বলেন, বিএসইসি চেয়ারম্যানের ওপর মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগ করা হবে বলে মনে করি না। কারণ তিনি দেশের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নয়। আবার কখনো রাজনৈতিক কোনো বক্তব্যও দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। হতে পারে কোন চক্র নিজেদের সুবিধা আদায়ের জন্য এ ধরণের গুজব ছড়াচ্ছে।
বিনিয়োগকারী পরিষদের এই নেতা আরও বলেন, বিএসইসির চেয়ারম্যান পদে আমলা, শিক্ষক বা যে কাউকেই দেওয়া হোক না কেন, কেউই শতভাগ সঠিকভাবে কাজ করতে পারবেন না। তবে বর্তমানে যিনি বিএসইসির চেয়ারম্যান আছেন, তিনি ভালো কাজ করছেন।