শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রোড সেইফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশ এ তথ্য জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশ পুলিশের তথ্যমতে ২০২২ সালে দেশে ৫ হাজার ৮৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৬৩৬ জন নিহত এবং ৪ হাজার ৪৪৪ জন আহত হয়েছেন। আর ২০২১ সালে ৫ হাজার ৪৭২টি টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৮৪ জন নিহত এবং ৪ হাজার ৭১৩ জন আহত হয়েছেন।
এছাড়া নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর তথ্যমতে ২০২২ সালে দেশে ৭ হাজার ২৪টি দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ১০৪ জন নিহত এবং ৯ হাজার ৭৮৩ জন আহত হয়েছেন। আর ২০২১ সালে ৪ হাজার ৯৮৩টি দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৬৮৯ জন নিহত এবং ৫ হাজার ৮০৫ জন আহত হয়েছেন।
অপরদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হিসাবে বিশ্বে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ১৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। প্রতি দিন প্রাণ হারান ৩ হাজার ৫০০ জন ও প্রতি ঘণ্টায় ১৫০ জন। এর মধ্যে ৩০ শতাংশের বয়স ২৫ বছরের নিচে। অর্থাৎ বিশ্বে তরুণরা যেসব কারণে বেশি হতাহত হন তার মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা সবার শীর্ষে।
অবকাঠামোগত উন্নয়নের পরও সড়ক দুর্ঘটনার সার্বিক হার কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এবং বিষয়টি উদ্বেগজনক উল্লেখ করে রোড সেইফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশ জানায়, এই সব অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য, কিন্তু এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাই কতটা আন্তরিক প্রশ্ন থেকে যায়। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার জন্য উন্নত দেশগুলো সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচের (মাল্টিমডাল ট্রান্সপোর্টেশন, নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ যানবাহন, নিরাপদ সড়ক ব্যবহারকারী ও সড়ক দুর্ঘটনা পরবর্তী ব্যবস্থাপনা) আলোকে নিজেদের আইনি ও নীতি কাঠামো প্রণয়ন ও এর যথাযথ বাস্তবায়নে সুফল পেয়েছে।
সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো মানুষ বা সড়ক ব্যবহারকারী ভুল করলেও সড়ক ব্যবস্থাপনা এমন হবে যার ফলে মানুষকে তার ভুলের সর্বোচ্চ মাশুল অর্থাৎ মৃত্যু বা পঙ্গুত্বের শিকার যেন হতে না হয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, আমাদের বর্তমান আইনি ও নীতি কাঠামোতে এই দর্শন সম্পূর্ণ অনুপুস্থিত। তবে আশার কথা হলো বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতায় গৃহীত বাংলাদেশ রোড সেইফটি প্রকল্পে সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচের কিছু ব্যবহার শুরু হয়েছে।
সংগঠনটি এই বিজ্ঞানভিত্তিক প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানায় এবং সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচের আলোকে নিরাপদ সড়কের জন্য আলাদা আইনি কাঠামোর জোর দাবি
জানায়।
এসময় নিসচা’র চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, আমাদের বর্তমান সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এবং সড়ক পরিবহন বিধিমালা-২০২২ মূলত সড়কে পরিবহনের জন্য আইন এবং সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিধিমালা। তাই পরিবহন ব্যবস্থাপনার জন্য তৈরি এই আইনে সাম্প্রতিক সংশোধনীর সময়ে গতি নিয়ন্ত্রণ, হেলমেট ও সিটবেল্টের মতো কিছু বিষয় সংযোজন করা হলেও তা সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু ও বড় ধরনের আঘাত থেকে রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত নয়। সুতরাং সড়কে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচের আলোকে নিরাপদ সড়ক সংক্রান্ত আলাদা আইন প্রণয়ন ও এর যথাযথ বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। এসব পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন বাংলাদেশকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাই নীতি নির্ধারণ পর্যায়ের সবার আশু পদক্ষেপ কামনা করছি।