আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ রহিত করে যুগোপযোগী ও সময়োপযোগী করে নতুন আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তত্ত্বাবধানে নতুন আইনটির বিষয়ে অবহিতকরণে অংশীজনদের সাথে গণশুনানি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় কর অঞ্চল-২ এ কর কমিশনারের কার্যালয়ে নতুন আইনটি বিষয়ে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেখানে বিভিন্ন স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। নতুন আইনে কী কী পরিবর্তন হলো এবং আয়কর রিটার্ন দাখিলে নতুন করে কী কী সংযোজন ও বিয়োজন হবে তা বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
আয়কর কর্মকর্তাগণ জানান, নতুন আইনে স্বনির্ধারনী রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যেখানে পূর্বের নিয়মে নরমাল রিটার্ন দাখিল করা যেত। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। এর ব্যাত্যয় হলে করদাতা প্রত্যাশিত রিবেট পাবেন না এবং বিলম্ব মাশুলও গুণতে হবে। আয়কর দাতার রিটার্ন প্রস্তুত সহজলভ্য করতে ফি নির্ধারণ করে এজেন্সিকে দায়িত্ব দেয়াসহ নতুন নীতিমালা করা হচ্ছে। নতুন আইন অনুযায়ী প্রত্যেক গণকর্মচারীকে রিটার্ন দিতে হবে।
আয়কর কর্মকর্তা মোঃ জাকির হোসেন জানান, বার্ষিক করযোগ্য আয় পাঁচ লাখ টাকার কম হলে এক পাতার আয়কর বিবরণী জমা দিলেই হবে। এ ছাড়া সম্পদের পরিমাণ ৪০ লাখ টাকার কম হতে হবে, এমন শর্তও রয়েছে। কম আয় ও সম্পদের এই করদাতাদের জন্য এক পাতার একটি ফরম প্রকাশ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কম আয়ের করদাতার রিটার্ন জমা সহজ করতেই এক পাতার রিটার্ন ফরম চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
নতুন আইনের আলোকে এই পাতা সাজানো হয়েছে। এক পাতার ওই ফরমে সব মিলিয়ে ১৬ ধরণের তথ্য দিতে হবে। এগুলো হলো নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন), সার্কেল, কর অঞ্চল, কর বর্ষ, আবাসিক মর্যাদা, মোবাইল নম্বরসহ যোগাযোগের ঠিকানা, আয়ের উৎস, মোট পরিসম্পদ, মোট আয়, আরোপযোগ্য কর, কর রেয়াত, প্রদেয় কর, উৎসে কাটা করের পরিমাণ (যদি থাকে), এই রিটার্নের সঙ্গে প্রদত্ত কর, জীবনযাপন ব্যয়।
এক পাতার রিটার্ন ফরমের সুবিধা হলো এখানে কোন খাত থেকে কত কর আয় হয়েছে, এর বিস্তারিত লিখতে হবে না। শুধু মোট আয়ের তথ্য দিলেই হবে। এভাবে মোট সম্পদ, জীবনযাত্রার খরচ, করের পরিমাণ-এসবের মোট পরিমাণ লিখলেই হবে। এক পাতায় রিটার্ন জমা দিতে হলে কিছু শর্তও দেয়া হয়েছে। যেমন কোন কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার হওয়া যাবে না এবং মোটরগাড়ি থাকবে না। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন এলাকায় গৃহসম্পত্তি বা অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ থাকলেও এক পাতার ফরম প্রযোজ্য হবে না। বিদেশে সম্পদ থাকলেও চলবে না।
কর্মকর্তারা বলেন, আয়কর রিটার্ন ফরমের জটিল হিসাব-নিকাশের কারণে অনেকে বার্ষিক রিটার্ন দিতে চান না। আগেও এক পাতার ফরম ছিল। তবে এবার নতুন আইনের আলোকে আরও সহজ করা হলো। এখন শুধু মোট আয় ও করের পরিমাণ লিখলেই হয়। এক পাতার রিটার্ন ফরমের পাশাপাশি এবার এক পাতার আয়কর বিবরণী জমার প্রাপ্তি স্বীকারপত্র বা প্রত্যয়নপত্র দেয়া হবে। সেই প্রত্যয়নপত্রের অনুলিপিও প্রকাশ করেছে এনবিআর। এর আগে স্লিপের মতো প্রাপ্তি স্বীকারপত্র ছিল। রিটার্ন ফরমের একটি অংশ কেটে দেয়া হতো।
বর্তমানে প্রায় ৯০ লাখ টিআইএনধারী আছেন। তাদের মধ্যে প্রতিবছর ৩০ লাখের মতো নিজেদের আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত জানিয়ে রিটার্ন জমা দেন। নতুন আইনে অনেক কিছু সহজতর হওয়ায় রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন কর্মকর্তাগণ।
অর্থসংবাদ/এমআই