কিছু ব্যাংক নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি মূল্যে ডলার ক্রয়-বিক্রয় করছে। এতে বাজারের শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এমন পরিস্থিতিতে ডলারের রেট নিয়ে সব ব্যাংকগুলোকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। যদি কেউ বেশি দামে ডলার বেচাকেনা বা কোনো প্রকার কারসাজি করে তাহলে তাকে শাস্তির আওতায় পড়তে হবে।
রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এমন হুঁশিয়ারি দেন। বৈঠকে ডেপুটি গভর্নর ও সংশ্লিষ্ট নির্বাহী পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় এবিবির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন।
বৈঠকে বর্তমান দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, মূল্যস্ফীতি চাপ, রিজার্ভ, এক্সচেঞ্জ রেট, আমদানি রপ্তানিতে অর্থপাচার রোধ এবং ব্যাংক খাতের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে থাকা একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, ব্যাংক খাতের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ডলার রেটের বিষয়ে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে বলেছেন গভর্নর। আমদানি রপ্তানির মাধ্যমে যেন অর্থপাচার না হয়, সেদিকে কোঠর নজর রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া এসএমইতে ঋণ বাড়াতেও তাগিদ দিয়েছেন গভর্নর।
এর আগে বেশি দামে ডলার বিক্রি করার কারণে ১০ ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পদক্ষেপের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংক মালিকদের সঙ্গেও একটি সভা করা হয়। ওই সভায়ও ডলার কারসাজির বিষয়ে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন গভর্নর।
ওই সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে ডলারের বাজার পরিস্থিতি, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ ও ব্যাংকের সার্বিক তারল্য পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়।
গভর্নর জানান, ডলারের সংকট এখন কমে এসেছে, সরবরাহ আগের চেয়ে বেড়েছে। তাই কোনো ব্যাংক যাতে ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে ডলার কেনাবেচা না করে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
বিএবির পক্ষ থেকে ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এতে সায় দেননি গভর্নর। ব্যাংক উদ্যোক্তাদের জানানো হয়, বর্তমানের মূল্যস্ফীতি চাপ নিয়ন্ত্রণ এখন ডলারের দাম বাড়ানো সম্ভব নয়। আর এখন প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম বাড়ানো হলে হুন্ডিতে ডলারের দামও বাড়বে।
রেমিট্যান্স-রপ্তানি ডলারের এক রেট
রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে ডলারের মূল্য এখন থেকে এক রেটে ধরা হয়েছে। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে রপ্তানিকারকরা প্রতি ডলার ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা পাচ্ছেন। আগে যা ছিল ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা। রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ে ডলারের মূল্য ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে। এছাড়া আমদানিতে ডলারের দর হবে ১১০ টাকা। আগে যা ছিল ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু অভিযুক্ত ব্যাংকগুলোতে প্রতি ডলারে ১১৪-১১৫ টাকা দাম নিয়েছিল। এজন্য শাস্তির আওতায় পড়েছেন ডলার কেনাবেচার দায়িত্বে থাকা ট্রাজারি প্রধানরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আন্তঃব্যাংক ব্যবস্থায় ডলার লেনদেন হচ্ছে ১১০ টাকায়।
তবে কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে নগদ এক ডলার কিনতে গ্রাহকদের গুনতে হচ্ছে ১১৭ টাকা থেকে ১১৮ টাকা। চিকিৎসা, শিক্ষা বা ভ্রমণের জন্য যারা বিদেশে যাচ্ছেন তাদের নগদ প্রতি ডলার কিনতে দেশি মুদ্রা খরচ করতে হচ্ছে ১১৮ টাকা পর্যন্ত।
অর্থসংবাদ/এসএম