এর আগে কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) অর্থায়নে এবং নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের সহযোগিতায় ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত “কাঁঠালের সংগ্রহত্তোর ক্ষতি প্রশমন ও বাজারজাতকরণ কৌশল” শীর্ষক তিন বছর মেয়াদি একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পোস্ট-হারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী এই গবেষণা প্রকল্পের নেতৃত্ব দেন।
ড. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী জানান, প্রকল্পের আওতায় সেই সময়ে তারা কাঁঠালের চিপস, আচার, ফ্রেশকাট ও ড্রাইড-প্রোডাক্ট এই চারটি পণ্য নিয়ে গবেষণা শুরু করলেও তারা কাঁঠাল থেকে আরও অনেক বেশি পণ্য উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখতে পান। তার মতে, কাঁঠাল থেকে ৩০টিরও বেশি পণ্য উৎপাদন সম্ভব।
কাঁঠালের তৈরি পণ্যের বাজার বিস্তারে কাজ করছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা। বাণিজ্যিকভাবে কাঁঠালের রেসিপি নিয়ে কাজ করতে উৎসাহী হয়েছে পিকেএসএফ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তাও মিলেছে। সংস্থাটি তার কৃষি বাণিজ্যিকীকরণ এবং উদ্যোগ প্রচার প্রকল্পের অধীনে ১২৯ মিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদান করছে।
জাতিসংঘের এজেন্সি-সহায়তা প্রকল্পের অধীনে বাস্তবায়িত হওয়া ছোট আকারের প্রকল্পগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের কাঁঠালের বার্গার অন্যতম। ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট ইনোভেশন অ্যান্ড প্র্যাকটিস (সিডিআইপি) নামের এনজিও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এনজিওটি বিনিয়োগ পেয়েছে ১.৮৯ কোটি টাকা; এরমধ্যে পিকেএসএফ ১.৪৪ কোটি টাকা এবং সিডিআইপি বাকি অর্থ প্রদান করেছে।
সিডিআইপির নির্বাহী পরিচালক মিফতা নাইম হুদা বলেন, “কাঁঠালের বার্গার উৎপাদন কারখানায় পিকেএসফ শুধু অর্থায়নই করছে না, আইসল্যান্ড থেকে যে রপ্তানি অর্ডার এসেছে, তাতেও পিকেএসএস সহায়তা করছে। আইসল্যান্ডের প্রতিষ্ঠানটি পিকেএসএফর মাধ্যমে কারখানা পরিদর্শন করতে চেয়েছে। সিডিআইপি বিষয়টি মাথায় নিয়েই প্রস্তুতি নিচ্ছে।”
বার্গারে পেটিতে ব্যবহৃত মাংসের বিকল্প উপকরণ কাঁঠাল ব্যবহার করে বার্গার তৈরি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ডইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (বিসিএসআইআর)-এ এর খাদ্যমান যাচাই করা হয়েছে।
বিসিএসআইআর থেকে ডায়েটারি ফাইবার অ্যানালাইজারের মাধ্যমে পরীক্ষায় প্রতি ১০০ গ্রাম কাঠালের পেটিতে ৯.৭৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১০.৮৭ গ্রাম প্রোটিন, ৮.৪৭ গ্রাম ফ্যাট, ১৯.৩২ গ্রাম ডায়েটারি ফাইবার এবং ১৫৯ কিলোক্যালরি এনার্জি রয়েছে।
পিকেএসএফের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের বলেন, “স্বাদ, গন্ধ কিংবা রসালোভাবের দিক দিয়ে মাংসের পেটির বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে কাঁঠালের পেটি। সারাবিশ্বে ভেজিটেরিয়ানদের (নিরামিষভোজী) কাছে এর চাহিদা থাকার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়ছে, ফলে রপ্তানিতেও তৈরি হয়েছে সম্ভাবনা।”
কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরীও একই মতামত ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, “ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনামসহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশকিছু দেশে এবং ইউরোপের অনেক দেশে কাঁঠাল দিয়ে তৈরি নানা ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাদ্যদ্রব্যের জনপ্রিয়তা রয়েছে। সেসব দেশে কাঁঠালজাত পণ্য রপ্তানিতে জোর দিলে দেশের অর্থনীতিতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা যুক্ত হবে বলে প্রত্যাশা করি।” -বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ঢাকা ট্রিবিউন