ব্রিটিশ কাউন্সিলের ‘আওয়ার শেয়ারড কালচারাল হেরিটেজ’ (অশ) প্রকল্পের আয়োজনে ১৪-১৫ অক্টোবর রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর প্রাঙ্গনের মনোরম পরিবেশে ‘হেরিটেজ ফেস্টিভ্যাল’ অনুষ্ঠিত হয়। সিসিডি বাংলাদেশ, উড়ন্ত আর্টিস্ট কমিউনিটি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের সহযোগিতায় দুই দিনব্যাপী এই উৎসবটি সফলভাবে শেষ হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক, ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের ডিরেক্টর টম মিশশা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার।
এসময় ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের ডিরেক্টর টম মিশশা বলেন, উৎসব উদযাপন উপলক্ষে রাজশাহী আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে। এখানকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মধ্যে ঐতিহাসিক নিদর্শন ও স্থাপত্যের পাশাপাশি রয়েছে খাবার আর আম। আওয়ার শেয়ারড কালচারাল হেরিটেজ প্রকল্পের মাধ্যমে জাদুঘরগুলোকে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। পাশাপাশি, এই প্রকল্প যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার তরুণদের ঐতিহ্য-খাতে আরও বেশি সম্পৃক্ত করছে। এই প্রকল্প সফল করায় আমাদের সকল অংশীদারদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই। বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরকে সহায়তা করায় ও রাজশাহীর ঐতিহ্য উদযপানকে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়ায় আমি তরুণদের বিশেষভাবে ধন্যবাদ দিতে চাই।
উৎসবে বাংলাদেশ ও রাজশাহীর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি প্রদর্শন করা হয়। আয়োজন থেকে অতিথিরা এই অঞ্চলের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও শিল্পকলা সম্পর্কে বিস্তৃত ধারণা পান। তরুণদের এই কাজে অনুপ্রাণিত ও সম্পৃক্ত করা ছিল উৎসবের মূল আকর্ষণ। ব্রিটিশ কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানে গত দুই বছরে বিভিন্ন সৃজনশীল খাতে দক্ষ হয়ে ওঠা ৩০ তরুণের কাজ এই উৎসবে প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, নানারকম সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পীঠস্থান রাজশাহী; সর্বোচ্চ সংখ্যক জিআই (ভৌগলিক নির্দেশক) পণ্য-সমৃদ্ধ বিভাগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এর। এগুলো আমাদের দেশের গর্ব; আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ করতে ও সবার মাঝে তা ছড়িয়ে দিতে আমাদের অবশ্যই একসাথে কাজ করতে হবে। এই খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। ব্রিটিশ কাউন্সিল, সিসিডি ও উড়ন্তর তরুণদের আগ্রহ আমাদের পথকে আরও প্রশস্ত করেছে। এ ধরনের অনন্য প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়ায় ও তা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করায় সবাইকে ধন্যবাদ।
এই উৎসব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রকাশ ও আদানপ্রদানের এক অনবদ্য প্ল্যাটফর্ম হয়ে ওঠে। এতে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ওপর আলোচনা, নাচ-গান ও অভিনয় উপস্থাপনা, পুঁথিপাঠ, গম্ভীরা, ফটোগ্রাফ ও পেইন্টিং প্রদর্শনী এবং সৃজনশীল কর্মশালার আয়োজন করা হয়। স্টলগুলোতে ছিল মনোমুগ্ধকর অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করবে এমন ঐতিহ্যবাহী পণ্যের সমাহার। এই অঞ্চলের ইতিহাস ও সংস্কৃতি উদযাপন করা এবং বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে তরুণদের আরও দায়িত্বশীল করে তোলাই এই উৎসবের লক্ষ্য।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, ব্রিটিশ হাইকমিশনার হিসেবে আমার প্রথম ভ্রমণে বাংলাদেশের অন্যতম সবুজ শহর রাজশাহীতে আসতে পেরে আমি সত্যিই অভিভূত। আওয়ার শেয়ারড কালচারাল হেরিটেজ প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন করায় ও এই শহরে ঐতিহ্য উৎসবের আয়োজন করতে পারায় আমি আনন্দিত। সুদীর্ঘ ইতিহাস, সংস্কৃতি ও মানুষের সাথে মানুষের গভীর বন্ধনের ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব আরও গভীর হয়েছে। আর এই প্রকল্প ‘ব্রিট বাংলা বন্ধন’ -এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই অঞ্চলের চমৎকার মানুষজন, বিশেষ করে তরুণদের সাথে মিশতে পেরে এবং বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের ঐতিহাসিক বন্ধন ও ভবিষ্যতের অংশীদারিত্ব নিয়ে আলোচনা করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ করতে ও এ বিষয়ে বোঝাপড়া তৈরি করতে, গবেষণা এগিয়ে নিতে এবং মানুষকে সাংস্কৃতিকভাবে সচেতন করে তুলতে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর অত্যন্ত অপরিহার্য। অতীত ও বর্তমানের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনতে এবং সম্মিলিত ইতিহাস ও বৈচিত্রময় সংস্কৃতির মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে এটি। আমরা এই জাদুঘর সংরক্ষণ করতে ও এর গুরুত্ব বৃদ্ধি করতে কাজ করে যাচ্ছি।
অর্থসংবাদ/এসএম
আর্কাইভ থেকে