পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের পাশাপাশি এই প্রকল্প দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরেকটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। এই রেল সংযোগ সম্পূর্ণরূপে চালু হয়ে গেলে এটি ঢাকা থেকে যশোর, খুলনা এবং অন্যান্য জেলার মধ্যে যাতায়াতের সময় অর্ধেক কমিয়ে আনবে, দেশের রেল যোগাযোগকে এটি বড় ধরনের উৎসাহ দিতে সহযোগিতা করবে।
তিনি বলেন, এই রেল সংযোগ দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে, কারণ দেশের ৬৪টি জেলাকে পর্যায়ক্রমে রেলওয়ে নেটওয়ার্কেও আওতায় আনা হবে। এই রুট দিয়ে প্রথম ধাপে সুন্দরবন, বেনাপোল ও মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। মধুমতি এক্সপ্রেস পদ্মা উত্তর পাড়ি দিয়ে ভাঙ্গা হয়ে রাজশাহী যাবে। সুন্দরবন এক্সপ্রেস পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা যাবে এবং বেনাপোল এক্সপ্রেস পদ্মা সেতু হয়ে যশোরের বেনাপোল যাবে।
ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ১০টি স্টেশন রয়েছে এবং স্টেশনগুলোর আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এরই মধ্যে ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনতলা বিশিষ্ট দেশের বৃহত্তম ভাঙ্গা রেলস্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। এই স্টেশনটি ১২টি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে গঠিত একটি হাব এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা এবং পরিষেবা নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। স্টেশন ভবনের নিচতলা দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে।
ভাঙ্গা নতুন রেলওয়ে স্টেশনটি অত্যাধুনিক কম্পিউটার ভিত্তিক ইন্টারলিঙ্ক সিস্টেমে সজ্জিত করা হয়েছে, যা ট্র্যাকের ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ট্রেন চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
মো. আফজাল হোসেন জানান, এই রেলপথ নির্মাণের ফলে ঢাকা থেকে খুলনার যাতায়াতের দূরত্ব প্রায় ২১৫ কিলোমিটার এবং ঢাকা থেকে যশোরের দূরত্ব কমে ১৯৩ কিলোমিটার হবে। নতুন রেলপথটি অভ্যন্তরীণ রুটের পাশাপাশি আন্তঃদেশীয় রুট হিসেবে যুক্ত হবে। শুধু অভ্যন্তরীণ সংযোগই নয়, নতুন এই রেললাইনটি আন্তর্জাতিক রুট হিসেবেও ব্যবহৃত হবে। ট্রান্স-এশিয়ান করিডোরে একীভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা ভবিষ্যতে বাড়বে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে সরকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ১৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ করছে।
আফজাল আরও বলেন, অত্যাধুনিক রেলপথ দেশের তিনটি সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা এবং দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলের সাথে পণ্যের নির্বিঘ্ন পরিবহন তৈরি করবে এবং এটি সরাসরি ঢাকার সাথে যুক্ত হবে।
ইতোমধ্যে মাওয়া-ভাঙ্গা সেকশনের ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশ, ঢাকা-মাওয়া অংশের ৮৫ শতাংশ এবং ভাঙ্গা-যশোর সেকশনের ৮০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে এবং ৮৫ শতাংশের বেশি কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। বাকি কাজ আগামী বছরের জুনের মধ্যে শেষ হবে। এই রেলওয়ে প্রকল্পে ২০টি স্টেশন রয়েছে। স্টেশনের সব কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, ঢাকা-ভাঙ্গা সেকশনের ১০টি স্টেশনই ১ নভেম্বর থেকে চালু হবে। যাত্রীসেবার জন্য লিফট ও এসকেলেটরের কাজসহ যাত্রীসেবা জন্য কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।
অর্থসংবাদ/বাসস/এসএম