ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার পরিচালক পদে মো. শাকিল রিজভী নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ডিবিএর প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তার জায়গায় সংগঠনটির সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট শরীফ আনোয়ার হোসেন নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তাছাড়া সংগঠনটির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিওকে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ আলীকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করে ডিবিএর পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত পর্ষদের নেতারা দায়িত্ব গ্রহণের পর গতকাল বিকালে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
বৈঠকে ডিবিএর পক্ষ থেকে ডিএসইর পর্ষদের কাছে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যু তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে বর্তমানে ব্রোকারেজ হাউজগুলো বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় জর্জরিত। পুঁজিবাজার মন্দার কারণে অনেক হাউজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাছাড়া ক্লিয়ারিং ও সেটলমেন্টের জন্য গঠিত নতুন কোম্পানি সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিসিবিএল) কার্যক্রম সম্পর্কে ডিবিএর নেতারা ডিএসইর কাছে জানতে চান।
গতকালের বৈঠকে ডিবিএর প্রতিনিধিরা পুঁজিবাজারে মন্দ আইপিওর তালিকাভুক্তির বিষয়ে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের বিশেষ করে স্বতন্ত্র পরিচালকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তেলেন। তারা স্বতন্ত্র পরিচালকদের নিষ্পৃৃহ ভূমিকার সমালোচনা করে বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে আপনাদের কোনো স্বার্থ জড়িত ছিল না। তাছাড়া ডিমিউচুয়ালাইজড এক্সচেঞ্জে স্বতন্ত্র পরিচালকদের ভূমিকা রাখার সুযোগ সবচেয়ে বেশি। আইনেও আপনাদের সে ধরনের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু আপনারা প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। বিশেষ করে ৬০টি আইপিওর ক্ষেত্রে ডিএসইর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জের (বিএসইসি) কাছে যেসব পর্যবেক্ষণ এর আগে পাঠানো হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশই ছিল ঠুনকো। অথচ এসব কোম্পানির বড় ধরনের অনেক বিচ্যুতি ছিল, যেগুলো ডিএসইর পক্ষ থেকে কমিশনের কাছে তুলে ধরা হয়নি। আমরা যখন কমিশনের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেছি, তখন তারা আমাদের কাছে ডিএসইর পক্ষ থেকে যেসব পর্যবেক্ষণ পাঠানো হয়েছে, সেগুলো দেখিয়ে বলেছেন, দেখুন স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে এসব পর্যবেক্ষণ এসেছে এবং এসব বিচ্যুতি শোধরানোর পরই আইপিও অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
ডিবিএর নেতারা ডিএসইর নতুন এমডি হিসেবে কাজী ছানাউল হকের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়মকানুন মানা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। যে প্রক্রিয়ায় এমডি নিয়োগ দেয়া হয়েছে, সেটি সুখকর হয়নি বলে আমরা মনে করছি। এক্ষেত্রেও স্বতন্ত্র পরিচালকরা তাদের যথাযথ ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন।
ডিবিএর নেতাদের সমালোচনার জবাবে ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল হাশেম জানান, ডিএসইর সব সদস্যের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এর আগে কেএএম মাজেদুর রহমানকে এমডি হিসেবে পুনর্নিয়োগের সুপারিশ করে অনুমোদনের জন্য বিএসইসির কাছে পাঠানো হয়েছিল কিন্তু সেটি তারা প্রত্যাখ্যান করেছে। অন্যদিকে পর্ষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে কাজী ছানাউল হককে এমডি হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব কমিশন অনুমোদন করেছে। এক্ষেত্রে যা হয়েছে, সবকিছুই নিয়মের মধ্যে থেকেই হয়েছে। যদি এক্ষেত্রে নিয়মের কোনো ব্যত্যয় হয়ে থাকে, তাহলে সংক্ষুব্ধদের মামলা করার পরামর্শ দেন ডিএসইর চেয়ারম্যান।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবিএর প্রেসিডেন্ট শরীফ আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা ডিএসইর পর্ষদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমরা বেশকিছু বিষয় তুলে ধরেছি। এর মধ্যে ব্রোকারদের বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। তাছাড়া সিসিবিএলের কার্যক্রম কী হবে, সেটি নিয়ে আমরা ডিএসই পর্ষদের কাছে জানতে চেয়েছি। মন্দ আইপিও এবং নতুন এমডি নিয়োগের বিষয়ে কথা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালকরা যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারেননি। এমডি নিয়োগের ক্ষেত্রে সবকিছুই নিয়ম অনুযায়ী হয়েছে বলে আমাদের জানিয়েছেন ডিএসইর চেয়ারম্যান। যদি এক্ষেত্রে কোনো ধরনের ব্যত্যয় হয়ে থাকে, তাহলে তিনি মামলা করারও পরামর্শ দিয়েছেন আমাদের।
তিনি আরো বলেন, আমরা এর আগেও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইস্যুর বিষয়ে আমাদের মতামত তুলে ধরেছি। কিন্তু সেগুলোর কার্যকর সমাধান আসেনি। আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর কমিশনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছি। আজকে (গতকাল) ডিএসইর সঙ্গে করলাম। আগামী রোববার আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আমাদের পরবর্তী করণীয় কী হবে, সেটি নির্ধারণ করব। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে আইপিওতে যেসব কোম্পানি আসছে এবং এরই মধ্যে যেসব কোম্পানি বাজারে রয়েছে, সেগুলোর আর্থিক পারফরম্যান্সে কোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হলে সেগুলো তৃতীয় কোনো পক্ষ যেমন নিরীক্ষকের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে দেখা। এক্ষেত্রে আইনি কোনো বাধা রয়েছে কিনা, সে বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি।