বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের পরিস্থিতি কী তা জানতে ২০১৭ সাল থেকে গবেষণা করছে আইইডিসিআর। গত জুন পর্যন্ত চলে এই গবেষণা। দীর্ঘ সাত বছরে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মিলিয়ে প্রায় ৪০ হাজার নমুনা নিয়ে এ গবেষণা চলে।
বুধবার আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. জাকির হাবিব এক অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবসায়ী মনোভাব, অপ্রয়োজনে চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্রে অ্যান্টিবায়োটিক লেখার প্রবণতা এবং ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধের দোকানে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি এ ভয়ংকর পরিস্থিতির জন্য দায়ী। সমাধান পেতে সংবেদনশীলতা পরীক্ষা ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
গবেষণা প্রতিবেদন বলা হয়েছে, হাসপাতালের ভর্তি ৬১ শতাংশ রোগীর অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ শতাংশ আইসিইউর রোগী ও ১৩ শতাংশ বহির্বিভাগের রোগী রয়েছে।
ডা. জাকির হাবিব বলেন, দেশে তিন শ্রেণির আন্টিবায়োটিক রয়েছে। এর মধ্যে ওয়াচ গ্রুপ ও রিজার্ভ গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর বেশি হচ্ছে; যা ডায়রিয়া, মূত্রনালি ও ফুসফুসের ইনফেকশনসহ শরীরের বিভিন্ন ক্ষত সারানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়।
অনুষ্ঠানে অন্য একটি গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ডা. ফরহাদ মারুফ বলেন, বিশ্বজুড়ে সুপারবাগ ইনফেকশনে বছরে মারা যাচ্ছে ৫০ লাখ মানুষ। বাংলাদেশে প্রায় ২ লাখ মানুষ এই রোগে মারা যায়। বাংলাদেশে দীর্ঘস্থায়ী রোগীর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিস রেজিস্ট্যান্স বেশি হচ্ছে।
ডা. মোহাম্মদ এম এ সামাদ বলেন, সবচেয়ে বেশি খুঁজে পাওয়া জীবাণু ই-কোলাইয়ের বেলায় পোলট্রি শিল্পে ব্যবহৃত ১২ অ্যান্টিবায়োটিকের আটটিই অকার্যকর হয়েছে অন্তত ৪০ শতাংশ। অ্যাম্পিসিলিন, টেট্রাসাইক্লিন ও সিপ্রোফ্লোক্সাসিলিনের ক্ষেত্রে তা প্রায় ৯০ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটু মিয়া বলেন, দেশে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। সঙ্গে রোগীর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে উঠেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশিদ আলম বলেন, ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধক হয়ে ওঠা একটি নীরব ঘাতক। তাই আমাদের এই সমস্যা থেকে উত্তরণে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। রোগ প্রতিরোধে যেসব নিয়ম মানা উচিত সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
নিপসমের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা বিপজ্জনক আমরা সবাই জানি, তবে মানি না। অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকরাও প্রয়োজন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছে– এ জন্য অবশ্যই ওষুধ কোম্পানিগুলোর অতিরিক্ত ব্যবসায়ী মনোভাবের কারণেও হচ্ছে।
স্বাস্থ্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার কমাতে ল্যাব সুবিধা বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলে আমরা ব্যবস্থা নেব।
অর্থসংবাদ/এমআই