দেশের তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি আজ রবিবার চূড়ান্ত করা হবে। এ ব্যাপারে মজুরি বোর্ডের শেষ বৈঠক শ্রম মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকের পর চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করা হবে।
নিম্নতম মজুরি বোর্ড গত ৭ নভেম্বর গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য সাড়ে ১২ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করে।
এই মজুরিতে মালিক-শ্রমিক কোনো পক্ষই সন্তুষ্ট হতে পারেনি। এ জন্য গতকাল শনিবার পর্যন্ত ১৬৮ জন গার্মেন্টস মালিক মজুরি বোর্ডে আলাদা চিঠি দিয়ে মজুরি কমিয়ে ১০ হাজার থেকে সাড়ে ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে আবার ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। গতকাল পর্যন্ত ২৪টি শ্রমিক সংগঠন মজুরি বোর্ডে চিঠি দিয়ে ২০ হাজার টাকার ওপর মজুরি নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে।
মজুরি বোর্ডে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান গতকাল বলেন, ‘ঘোষিত মজুরি ও খসড়া গেজেট চূড়ান্ত করতেই আমরা রবিবার শেষ বৈঠকে বসব।
এই বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার পর সেটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আইন মন্ত্রণালয় থেকে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে বিজি প্রেস থেকে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরির চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করা হবে।’
বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন এবং বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে মজুরি আরো বাড়িয়ে পুনর্নির্ধারণের দাবি তোলা হয়েছে, রবিবারের বৈঠকে এর কোনো প্রতিফলন থাকবে কি না—এ ব্যাপারে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে মাত্র ২৪টি চিঠি দেওয়া হয়েছে; কিন্তু মজুরি কমানোর জন্য ১৬৮ জন গার্মেন্টস মালিক চিঠি দিয়েছেন মজুরি বোর্ডে। সে অনুযায়ী তো মজুরি কমানোর কথা।
তবে রবিবারের বৈঠকে পূর্বঘোষিত মজুরির তেমন কোনো নড়চড় হবে বলে মনে হয় না। আমি আশা করছি, যে খসড়া গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে সেটিকেই চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে। তার পরও যেহেতু আমরা বৈঠকে বসব, কিছু বিষয়ে তো আলোচনা হবেই।’
অবশ্য মজুরি বোর্ডে শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ও জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, ‘পূর্বঘোষিত ন্যূনতম মজুরিই হয়তো ঠিক থাকবে। এখান থেকে বাড়ার হয়তো কোনো সুযোগ নেই তবে কমার তো প্রশ্নই আসে না। তবে এই বৈঠকে নিচের গ্রেডে যে বেতন বাড়ানো হয়েছে, সেই আনুপাতিক হারে ওপরের গ্রেডগুলোতে যাতে বেতন বাড়ানো হয়, আমি সে ব্যাপারে জোরালোভাবে কথা বলব। কারণ প্রকাশিত খসড়া গেজেটে দেখা গেছে, নিচের গ্রেডের সমান হারে ওপরের গ্রেডে বেতন বাড়েনি। তাই আমি আশা করছি, ওপরের গ্রেডে বেতন কিছুটা বাড়িয়ে মজুরি চূড়ান্ত করা হবে।’
গত ৭ নভেম্বর গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করে ঘোষণা দেয় সরকার। বর্তমান মজুরির চেয়ে ৫৬.২৫ শতাংশ বাড়িয়ে এই মজুরি নির্ধারণ করা হয়। এতে বলা হয়, মোট মজুরির মধ্যে মূল বেতন বা বেসিক হবে সাত হাজার ৮৭৫ টাকা। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে নতুন মজুরি বাস্তবায়ন করা হবে এবং আগামী বছরের জানুয়ারিতে শ্রমিকরা নতুন মজুরি কাঠামোতে বেতন পাবেন।
ওই দিন সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এই মজুরি কাঠামো ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি জানান, মজুরি বোর্ড ছয়টি বৈঠক করে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে এসেছে। পরে মজুরির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবগত করে এবং তাঁর মতামত নিয়েই সাড়ে ১২ হাজার টাকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এরপর ১২ নভেম্বর মজুরি বোর্ড খসড়া গেজেট প্রকাশ করে।
শ্রমিক নেতা বাংলাদেশ অ্যাপারেল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘মজুরি ঘোষণার পর থেকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), ইন্ডাস্ট্রিঅল গ্লোবাল ইউনিয়ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী ও মজুরি বোর্ডকে চিঠি দিয়ে মজুরি আরো বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। আশা করব, বিদেশি এসব সংস্থার মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে মজুরি বোর্ড শ্রমিকদের মজুরি আরো বাড়িয়ে পুনর্নির্ধারণ করে গেজেট চূড়ান্ত করবে। কারণ যে মজুরি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তা দিয়ে এই উচ্চমূল্যের বাজারে শ্রমিকের সংসার চলবে না।’
অবশ্য গার্মেন্টস মালিক ও বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘সাড়ে ১২ হাজার টাকার যে মজুরি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তা-ই ৮০ শতাংশ গার্মেন্টস মালিকের পক্ষে দেওয়া সম্ভব হবে না। তাই এর বেশি বাড়ানোর তো প্রশ্নই আসে না। বরং আরো কমিয়ে মজুরি নির্ধারণ এবং এই মজুরি যাতে ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা না হয়, সে বিষয়গুলো জানিয়ে আমরা মজুরি বোর্ডে চিঠি দিয়েছি। আশা করি, আমাদের প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে মজুরি চূড়ান্ত করা হবে।’