বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) স্থানীয় সময় সকালে দুবাইয়ের এক্সপ্রো সিটিতে এ সম্মেলন শুরু হয়েছে। এ সম্মেলনে ইতোমধ্যে তহবিল অনুমোদন করেছে তেলের অন্যতম বড় উৎপাদক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। তাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে উন্নত আরও কয়েকটি দেশের পক্ষ থেকেও এমন সহায়তার আশ্বাস এসেছে।
সম্মেলনের প্রথম দিনেই এসব দেশগুলো ৪২ কোটির বেশি ডলার তহবিল ভুক্তভোগী অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এর মধ্যে প্রথমেই তহবিলের প্রতিশ্রুতি দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে আছে সম্মেলনের আয়োজক সংযুক্ত আরব আমিরাত। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ১০ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটি। এছাড়া যুক্তরাজ্য ৬ কোটি পাউন্ড, যুক্তরাষ্ট্র ১ কোটি ৭৫ লাখ ডলার ও জাপান ১ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পরে ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) ২৪ কোটি ৫৩৯ লাখ ডলার এবং জার্মানি ১০ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এবারের সম্মেলনে জলবায়ু সংক্রান্ত ক্ষয় ও ক্ষতিকে (লস অ্যান্ড ডেমেজ) সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন জাতিসংঘের শীর্ষ জলবায়ু কর্মকর্তা সাইমন ইমানুয়েল কারভিন স্টিয়েল।
তিনি বলেছেন, এ ব্যাপারে তহবিলে অর্থায়নসহ আমাদের সামনের দিকে এগোতেই হবে। এখান থেকে পেছন ফেরার সুযোগ নেই। উন্নত দেশগুলো বেশ কয়েক বছর আগে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। গরীব দেশগুলোকে তাদের অভিযোজন ও সবুজ জ্বালানির উন্নয়নে এই অর্থ দেওয়া হবে। আমরা আশা করছি, এ বছর আমরা এই প্রতিশ্রুতির কাছাকাছি পৌঁছাতে পারব।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘনঘন বন্যা, খরা, সামুদ্রিক ঝড়, ভূমিধস ও দাবানলের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে। যে দেশগুলো সবচেয়ে বেশি মাত্রায় এগুলোর শিকার হচ্ছে তারা অনেক দিন ধরেই বলে আসছে এর মোকাবিলায় তাদের অর্থ দরকার। এটাকেই বলা হচ্ছে ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’।
কপ-২৮ এর সভাপতি করা হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় তেল কোম্পানি অ্যাডনকের প্রধান নির্বাহী সুলতান আল-জাবেরকে। ইতোমধ্যে সম্মেলন নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
সুলতান আল-জাবেরকে বলেন, আমাদের নষ্ট করার মতো সময় নেই। কার্বন নির্গমন কমাতে আমাদের এখনই জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশ্বব্যাপী স্টকটেকের প্রতিক্রিয়া হিসাবে যেকোনো সিদ্ধান্ত প্রদানের জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। যা মানুষ, জীবন ও জীবিকা রক্ষা করার ভূমিকা রাখবে।
১৭৬০ সালের পর ইউরোপে যখন শিল্পবিপ্লবের সূচনা তখন থেকেই প্রকৃতির বিপদের শুরু। তখন থেকেই পৃথিবীতে কার্বন নিঃসরণ শুরু হয়। এর ফলে দিন দিন বাতাসের উষ্ণতা বেড়েছে; হয়েছে বায়ুদূষণ।
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অন্তত ১ দশমিক ৬২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে একবিংশ শতাব্দী শেষে পৃথিবীর বুক থেকে প্রায় অর্ধশত দেশ সমুদ্রপৃষ্ঠে তলিয়ে যাবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদীভাঙন, বন্যা, খরা ও দাবানল বেশি হচ্ছে। এ কারণে এবারের জলবায়ু সম্মেলনের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।