বুধবার (৬ ডিসেম্বর) ‘গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে আমাদের সরকার দেশে গণতন্ত্রের ভিত্তিকে শক্তিশালী করতে এবং প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ হয়েছে। দেশে গণতন্ত্র আরো সুসংহত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ৬ ডিসেম্বর ‘গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ইতিহাসে এক তাৎপর্যপূর্ণ দিন। দীর্ঘ ৯ বছরের স্বৈরাচারবিরোধী অব্যাহত লড়াই-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের এই দিনে তৎকালীন স্বৈরশাসকের পতনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়। জনগণ ফিরে পায় ভোটাধিকার। এ মহান দিবসে গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী সংগ্রামী দেশবাসীকে তিনি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাঙালি জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ছিনিয়ে এনেছিল আমাদের মহান স্বাধীনতা। সদ্য স্বাধীন যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যখন সোনার বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে নিয়োজিত, তখনই স্বাধীনতা বিরোধী-যুদ্ধাপরাধী চক্র তাকে পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ হত্যা করে। ইতিহাসের এই বর্বরতম হত্যার মাধ্যমে অসাংবিধানিক ও অবৈধ সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে। মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে বিকৃত করে দেশে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য কায়েম করে। ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স জারি করে জাতির পিতার হত্যার বিচারের পথ বন্ধ করে দেয়।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, জনগণের ভোট ও মৌলিক অধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ আবারো দীর্ঘ সংগ্রাম করে যেখানে দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে জানিয়ে তিনি বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এই সংগ্রামে যুবলীগ নেতা নূর হোসেন, নূরুল হুদা, বাবুল, ফাত্তাহ, ছাত্রলীগ নেতা সেলিম-দেলোয়ার, পেশাজীবী নেতা ডা. শামসুল আলম খান মিলন, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের ক্ষেতমজুর নেতা আমিনুল হুদা টিটোসহ আরো নাম না জানা অগণিত গণতন্ত্রকামী মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার রাজপথ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অব্যাহত আন্দোলনের ফলে স্বৈরাচারী শাসক গণআন্দোলনের কাছে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর নতি স্বীকার করে পদত্যাগে বাধ্য হয়। বহু শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় ভোটের অধিকার। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় জাতি সব শহীদের অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। তিনি গণতন্ত্র মুক্তি দিবসে গণতন্ত্র ও অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জীবন উৎসর্গকারী সব শহীদের আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করেন।
স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রবিরোধী চক্র এখনও নানাভাবে গণতন্ত্র ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দিবো না- গণতন্ত্র মুক্তি দিবসে এই হোক আমাদের সুদৃঢ় প্রত্যয়। আসুন, সবাই মিলে গণতন্ত্র ও দেশবিরোধী সব চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে গণতন্ত্রের ভিত্তিকে আরো শক্তিশালী করি এবং দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি।