নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্মদিনে পালন হয় রোকেয়া দিবস। এদিন রোকেয়া পদক দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলেরও জন্মদিন আজ। তার জন্য দোয়া করবেন।
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘রোকেয়া পদক’ অনুষ্ঠানে তিনি দোয়া চান।
শেখ হাসিনা বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে নেতৃত্ব দিতে ছেলেমেয়ে উভয়ে যেন দক্ষ হয়ে গড়ে উঠে সে বিষয়ে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। সে লক্ষ্যে পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছি।
নারীরা প্রতিটি সেক্টরে ভালো করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনীতি, অর্থনীতি, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলায় আমাদের মেয়েরা আছে। বর্ডার গার্ডে ছিল না, আমরা সে সুযোগ করে দিয়েছি। এখন বর্ডার গার্ডেও যাচ্ছে নারীরা। সশস্ত্র বাহিনী, সাংবাদিক ও তথ্যপ্রযুক্তিতেও নারীরা আছে। স্থানীয় সরকারেও তাদের অংশগ্রহণ আছে। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা মেম্বার, সব যায়গায় নারী। কী নির্বাচিত কী মনোনীত, নারীরা সব যায়গায় ভালো করছে। সব ক্ষেত্রে যাতে নারীরা অগ্রগামী থাকে, সে ব্যবস্থা নিয়েছি।
দারিদ্র্য দূরীকরণে তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ ভাগ থেকে ৫.৬ ভাগে নেমেছে আমাদের অতিদরিদ্র্য। এটাও থাকবে না। আমরা অন্তত জমিসহ ঘর করে দিচ্ছি। তাতে তারা এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতার পর নারীদের জন্য যে সুযোগ করে দিয়েছেন, সে পথ ধরে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
সৌদি আরবে নারী সম্মেলনের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সৌদি আরবও যখন এগিয়ে এসেছে নারীরা কর্মক্ষেত্রে যেতে বাধা নেই। তবে শালীনতার সঙ্গে চলবে। তবে, একেবারে ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ডের মতো হয়ে গেলে চলবে না।
তিনি বলেন, আমরা দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ভূমিসহ ঘর করে দিচ্ছি। সেখানেও নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করছি। জমি স্বামী-স্ত্রী দুজনের নামে দিচ্ছি। তবে কেউ নতুন ঘর পেয়ে যদি নতুন বউ আনতে চায়, সেটা কিন্তু পারবে না। সেখানেও সুরক্ষা দিয়েছি। এরকম কিছু ঘটলে নারী হবে বাড়ির মালিক।
মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অনেক অবদান আছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নারীরা যেমন ট্রেনিংয়ে গেছে, তেমনি যুদ্ধক্ষেত্রেও সহযোগিতা করেছে। তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। অনেকে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যায়।
তিনি বলেন, বেগম রোকেয়া নিজের স্বামীর নামে স্কুল করেছেন। সেখানে ছাত্রী পাওয়া যেত না। তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্রী সংগ্রহ করতেন। সেখানেও নানা বাধার সম্মুখীন হন। তিনি তার লেখায় উল্লেখ করেছেন, ‘যাহা পুরুষ পারিবে, তাহা নারীও পারিবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান আমলে নারীদের অনেক বাধা ছিল। সেসময় নারীদের কর্মক্ষেত্রে কোনো সুযোগ দিত না। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু নারীদের সে সুযোগ দিয়েছেন। আইনেই ছিল জুডিশিয়ারিতে মেয়েরা যোগ দিতে পারবে না। জাতির পিতা আইন পরিবর্তন করেন। পরে আমি এসে এর পথ আরও সুগম করে দেই। আমাদের নারী বিচারপতি নাজমুন আরা আপিল বিভাগেও যান। তবে আমার একটা আফসোস রয়ে গেছে, আমার ইচ্ছা ছিল, তাকে প্রধান বিচারপতি করে যাবো। কিন্তু পারিনি।
তিনি বলেন, আমি চাই নারীরা স্বাবলম্বী হোক। তারা স্বাবলম্বী হলে পরিবার ও সমাজে তার অবস্থান সুদৃঢ় হয়। সব যায়গায় তার কথার মূল্যায়ন হয়। আমরা বলতে পারি, বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন আমরা পূরণ করতে পেরেছি।
নিজ মায়ের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবা বেশির ভাগ সময় জেলে ছিলেন। সংসার চালানো, দল সুসংগঠিত করাসহ সব কাজই আমার মা করেছেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা।
এবার বেগম রোকেয়া পদক পেয়েছেন ৫ নারী। তারা হলেন- নারী শিক্ষায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য খালেদা একরাম, মরণোত্তর (ঢাকা জেলা), নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় ডা. হালিদা হানুম আখতার (রংপুর জেলা), নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কামরুন্নেছা আশরাফ দিনা, মরণোত্তর (নেত্রকোনা জেলা), নারী জাগরণে উদ্বুদ্ধকরণে নিশাত মজুমদার (লক্ষ্মীপুর জেলা) এবং পল্লী উন্নয়নে রনিতা বালা (ঠাকুরগাঁও জেলা)।