দেশে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি তরান্বিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতি সংস্কার ও সমন্বয় অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। তিনি দেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে আরও সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান।
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কক্ষে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পরিপ্রেক্ষিতে বেসরকারি বিনিয়োগ সম্প্রসারণ নিয়ে আয়োজিত এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ কথা বলেন।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সাপোর্ট টু সাস্টেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্প (এসএসজিপি) এই কর্মশালার আয়োজন করে।
কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন এবং ইআরডির সাবেক সিনিয়র সচিব শরিফা খান। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী।
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ প্রক্রিয়াকে মসৃণ ও টেকসই করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তারই অংশ হিসেবে উত্তরণ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির দিকনির্দেশনায় এবং ইআরডির এসএসজিপি প্রকল্পের সহযোগিতায় উত্তরণের সম্ভাব্য প্রভাব পর্যালোচনা এবং তদনুযায়ী সংশ্লিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন খাতভিত্তিক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
সেই প্রেক্ষাপটে উত্তরণের ফলে দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ সম্প্রসারণের কী ধরনের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে এবং সেই সুযোগের সদ্ব্যবহারের জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে তা পর্যালোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুরোধে এসএসজিপি প্রকল্পের আওতায় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের সহযোগিতায় বেসরকার বিনিয়োগ সম্প্রসারণ নিয়ে একটি গবেষণা কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।
এই গবেষণা প্রতিবেদনটির প্রধান প্রধান দিক সংশ্লিষ্ট সব অংশীদারের নিকট তুলে ধরা এবং তা প্রয়োজনীয় পর্যালোচনা করে প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত করার উদ্দেশ্যে কর্মশালাটি আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণ পরবর্তী সময়ের জন্য প্রস্তুত হতে গেলে ব্যবসায়ীদের প্রণোদনার ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে। এক্ষেত্রে তিনি বেসরকারি খাতে ব্যাপকভাবে গবেষণা ও উন্নয়নের ওপর বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী দেশে বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির ওপর জোর আরোপ করেন।
ইআরডির সাবেক সিনিয়র সচিব শরিফা খান বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর পর্যায়ক্রমিক বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, সরকার প্রতি বছর চারটি করে অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু করার লক্ষ্যে কাজ করছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইআরডির অতিরিক্ত সচিব ও এসএসজিপি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ফরিদ আজিজ।
তিনি বলেন, উত্তরণের প্রভাবসমূহের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া, উত্তরণ পরবর্তী সময়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখা এবং জাতীয় জীবনের বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি অভীষ্টসমূহ অর্জনের লক্ষ্যে দেশে বেসরকারি বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি আরও ত্বরান্বিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কর্মশালায় গবেষণাকর্মটির প্রধান দিকগুলো আলোকপাত করে একটি উপস্থাপনা দেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান।
সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে বৃহৎ পরিসরের অবকাঠামো একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। সে কারণে মেগা প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের ওপর ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি ব্যাপকভাবে নির্ভর করবে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য শুল্ক ও কর পদ্ধতি আরও যৌক্তিকীকরণ, আইন, বিধি ও নীতিমালার সময়োপযোগী সংস্কার, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন এবং মানবদক্ষতা উন্নয়ন, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্পকে সুনির্দিষ্ট সহায়তা দেওয়া, আঞ্চলিক পর্যায়ে অর্থনৈতিক সংহতি বৃদ্ধি এবং ন্যাশনাল সিঙ্গল উইন্ডো পদ্ধতি ব্যবস্থার প্রবর্তনের ওপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়।
কর্মশালায় প্যানেলিস্ট হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী সদস্য মহসিনা ইয়াসমিন, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার মো. সামির সাত্তার এবং বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড)-এর চিফ এক্সেকিউটিভ অফিসার ফেরদৌস আরা বেগম।
ব্যারিস্টার মো. সামির সাত্তার বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে দেশেই একটি শক্তিশালী আরবিট্রেশন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এজন্য তিনি বিদ্যমান সালিশি আইনটি যুগোপযোগী করার পরামর্শ দেন।