প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এফবিসিসিআই’র পরিচালনা পর্ষদের সাক্ষাৎ

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এফবিসিসিআই’র পরিচালনা পর্ষদের সাক্ষাৎ
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) পরিচালনা পর্ষদ (২০২৩-২৫) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। বুধবার সকাল ১১টায় এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এই সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল পণ্যের বাজার হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে বাংলাদেশ যা এখন সারা বিশ্বে স্বীকৃত। দেশে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি তরুণ, যাদের বেশিরভাগই শিক্ষিত ও নিজ নিজ ক্ষেত্রে দক্ষ হয়ে উঠছে। জনশক্তি রপ্তানিতে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম প্রধান দেশ আবার অনলাইন আউটসোর্সিং এ বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।

এফবিসিসিআই সভাপতি জানান, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্থাপন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল স্থাপন, পরমাণু ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, সাবমেরিন ক্যাবলে সংযুক্ত হওয়া, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপন- আপনার এসব সাহসী উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে নিজের সক্ষমতাকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক চক্রান্ত মোকাবেলা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণের ন্যায় সাহসী কার্যক্রম বাস্তবায়ন এদেশের জনজীবন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতিশীলতাকে কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে।

মাহবুবুল আলম বলেন, কোভিড সংকট পরবর্তী পরিস্থিতি, বর্তমান বিশ্ব ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যে সংঘটিত যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের ফলে বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এরূপ পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত প্রচেষ্টায় আমাদের বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া জরুরি।

ডলার সংকট নিরসন প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল এবং ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি বেড়ে যাচ্ছে এক্ষেত্রে ডলার সংকট মোকাবেলায় আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হলেও দেশীয় এবং রপ্তানি শিল্পের উৎপাদন সম্পর্কিত এলসি খোলা যাতে স্বাভাবিক থাকে সেদিকে নজর দেয়া জরুরি। তবে বর্তমান ডলার সংকট মোকাবেলায় বিলাসী/ অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। এসময় বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির মধ্যে সমন্বয় করার পরামর্শ দেন তিনি।

এছাড়া চলমান পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় সময়মতো ঋণ পরিশোধ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির ফলে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের উৎপাদন ব্যাহত হলেও সঠিক সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার কারণে ব্যবসায়ীরা যেন ঋণ খেলাপি না হয় সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ প্রসঙ্গে মাহবুবুল আলম বলেন, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ না থাকার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়ে থাকে। নিরবচ্ছিন গ্যাস সরবরাহের শর্তে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করার জন্য আমরা সহমত দিয়েছিলাম। অথচ গ্যাসের দাম বাড়ানো হলেও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস অনেক ক্ষেত্রেই পাওয়া যাচ্ছে না বলে আমরা অভিযোগ পাচ্ছি। ফলে ব্যবসা পরিচালনার খরচ বেড়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এছাড়াও আসন্ন রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য মূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে মাহবুবুল আলম বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদন ও চাহিদার পূর্বাভাস অনুযায়ী পণ্য যথাযথভাবে আমদানি করার পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে রমজান মাসে পেঁয়াজ, ছোলা, ভোজ্য তেল, আলু, বেগুন, বেসন, চিনি, খেজুর ইত্যাদির মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এখনই পদক্ষেপ প্রয়োজন।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সহযোগিতা ব্যতীত বড় শিল্প গ্রুপ টেকসই হয় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

মাহবুবুল আলম বলেন, বাজেটের টার্গেট অনুযায়ী রাজস্ব আয়, করনীতি, কর পদ্ধতির ব্যবস্থাপনা আধুনিকীকরণের মাধ্যমে একই ব্যক্তির উপর আয়করের বোঝা না বাড়িয়ে কর নেট বা কর জাল সম্প্রসারণ করা জরুরি। ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ তথা স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি নির্মাণে আমরা ব্যবসায়ীরা সরকারের সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করছে।

এর জন্য শিল্প কলকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাণিজ্য, কৃষিসহ সকল ক্ষেত্রে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রয়োগ পদ্ধতি নিয়ে গবেষণার উপর জোর দেওয়া জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এসময় মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ আরও সহজতর করতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন ও এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।

প্রধানমন্ত্রী জানান, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বর্তমান সরকার দেশের ব্যবসার উন্নয়নে কাজ করছে। ব্যবসায়ীরা যেন ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারেন এজন্য সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় তিনি রপ্তানি বহুমুখীকরণ, রপ্তানি প্রণোদনা, কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, এলডিসি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী, সহ-সভাপতি খায়রুল হুদা চপল, মোহাম্মদ আনোয়ার সাদাত সরকার, মো. মুনির হোসেন, শমী কায়সার, রাশেদুল হোসেন চৌধুরী রনি, এফবিসিসিআই’র পরিচালকবৃন্দ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অর্থসংবাদ/এমআই

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

পোশাকখাতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে, কমে গেছে চাহিদা
২০২৩ সালে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ
২০২৩ সালে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে ১০ শতাংশ
ইভ্যালিতে বড় অফার আজ, ১০ টাকায় মিলবে পাঞ্জাবি
হিলিতে আদা-সবজিতে স্বস্তি, বাড়তি দামে রসুন
বাংলাদেশে বিনিয়োগের ঐক্যমতে শেষ হলো গ্লোবাল বিজনেস কনফারেন্স
১১ মাসে ৪৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি
২০২৪ সালে ৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর
আইসিএবির নতুন সভাপতি ফোরকান উদ্দীণ
বিসিক শিল্পনগরীতে এক হাজার ৯৮ প্লট খালি