সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে প্রথম ধাপের পরীক্ষায় অনিয়ম-দুর্নীতি ও ডিভাইসের মাধ্যমে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে পরীক্ষা বাতিল চেয়ে রিট আবেদন করেছেন ৫৪ প্রার্থী। তবে, হাইকোর্টের অবকাশের কারণে দ্রুত এ রিটের শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা কম। কার্যতালিকা অনুযায়ী— আগামী ২ জানুয়ারি রিটের শুনানি হতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে আদালত এ নিয়ে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সহকারী শিক্ষক নিয়োগের ফল প্রকাশ ও নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে দুই মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও বিভাগীয় কমিশনারসহ ১৩ দপ্তরে নোটিশ পাঠিয়েছেন রিটকারীদের পক্ষের আইনজীবী মো. দেলোয়ার হোসেন।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) ইস্যু করা এ সংক্রান্ত চিঠি মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে পাঠানো হয়েছে। রিটকারীদের পক্ষের আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নোটিশ পাঠানো ১৩ মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও দপ্তরের মধ্যে রয়েছে— প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, প্রাথমিক শিক্ষা অধিপ্তরের রংপুর, বরিশাল ও সিলেটের উপ-পরিচালক, তিন বিভাগের সব জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং তিন বিভাগের উপ-কমিশনার।
নোটিশে বলা হয়, সংবিধানের ১০২ ধারা অনুযায়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গত ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। এ নিয়োগ পরীক্ষার ৫৪ জন প্রার্থীর পক্ষে ফাতেমা আক্তার নামে একজন প্রার্থী এ রিট আবেদন করেছেন। রিটটি শুনানির জন্য ১৮ ডিসেম্বরের কার্যতালিকার তিন নম্বরে রয়েছে। এটি বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর আদালতে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। হাইকোর্টের অবকাশের কারণে আগামী ২ জানুয়ারির আগে শুনানির সুযোগ নেই। এ সময়ের মধ্যে এ নিয়োগ প্রক্রিয়ার সবধরনের কার্যক্রম স্থগিত রাখার অনুরোধ করছি।
জানতে চাইলে রিটকারীর পক্ষের আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন বলেন, যেহেতু বিষয়টি আদালতে নিষ্পত্তি হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে, এ সময়ের মধ্যে যাতে ফল প্রকাশ ও নিয়োগ প্রক্রিয়ার কোনো কাজ না করা হয়, সেজন্য নোটিশ দিয়েছি আমরা। আশা করি— আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা ও আনুগত্যের জায়গা থেকে সংশ্লিষ্টরা নিয়োগের সব কার্যক্রম রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখবেন।
এ বিষয়ে জানতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি। তবে অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা এ ধরনের কোনো নোটিশ এখনো পাননি।
গত ৮ ডিসেম্বর রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের ১৮ জেলায় একযোগে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে এ পর্যন্ত ১৩৪ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরীক্ষার শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই প্রশ্নপত্র বাইরে চলে যায় বলেও অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।
অনিয়ম-জালিয়াতি এবং হরতাল-অবরোধের মধ্যে পরীক্ষা নেওয়ায় ১ লাখ ৫৮ হাজার প্রার্থী অনুপস্থিত দাবি করে পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন কিছু প্রার্থী। তারা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে লিখিত আবেদন এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচিও করেছেন। পাশাপাশি ৫৪ জন প্রার্থীর পক্ষে ফাতেমা আক্তার নামে একজন প্রার্থী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রথম ধাপে তিন বিভাগের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করেন ৩ লাখ ৬০ হাজার ৬৯৭ জন। তাদের মধ্যে ২৫ শতাংশের মতো প্রার্থী পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলেন। সেই হিসাবেও প্রায় ৯০ হাজার প্রার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নেননি।