বুধবার (২০ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের মধ্যস্থতায় সেদেশে নিহত দুই বাংলাদেশির পরিবারের অনুকূলে ক্ষতিপূরণের প্রায় ৩০ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে।
কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানার সাগর পাটোয়ারী ২০০৬ সালের ২৭ জুন অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে দাম্মাম শহরে নিহত হন। দীর্ঘসময় আততায়ীকে শনাক্ত করতে না পারায় যথাসময়ে মামলাটির অগ্রগতি হয়নি।
২০১৮ সালের ১২ আগস্ট বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রমকল্যাণ উইংয়ের প্রতিনিধি দাম্মাম দক্ষিণ থানায় পরিদর্শনকালে জানতে পারেন সেখানে একটি চুরির মামলায় সৌদি নাগরিক উমর আল শাম্মেরি আটক আছেন, যিনি সাগর পাটোয়ারি হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন। থানা থেকে জানানো হয়, প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রসহ উমরকে বিবাদী করে মামলা করলে এ বিষয়ে পুনঃতদন্ত করা হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিহত সাগরের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হয়।
সোশ্যাল মিডিয়া এবং অজ্ঞাত বিভিন্ন লোকের সহযোগিতায় তার পরিবারের ফোন নম্বর সংগ্রহের মাধ্যমে দূতাবাসের অনুকূলে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে শ্রম কল্যাণ উইংয়ের প্রতিনিধি আদালতে অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়ে অভিযোগ দাখিল করেন।
বিচারে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট আদালত ২০২১ সালের ২৪ মার্চ অভিযুক্ত উমর আল শাম্মেরির বিরুদ্ধে শিরশ্ছেদের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করেন। অভিযুক্তের পিতা অর্থের বিনিময়ে মৃত্যুদণ্ডের দাবি প্রত্যাহারের আপোস প্রস্তাব করলে রাষ্ট্রদূতের মধ্যস্থতায় ৫১ লাখ রিয়ালের আপোস প্রস্তাবে নিহত সাগর পাটোয়ারীর ওয়ারিশরা সম্মত হন।
আদালত অভিযুক্তের পরিবারের কাছ থেকে রক্তপণের চেক গ্রহণ করে মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করেন। গত ৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ তারিখে দাম্মামস্থ সৌদি ফ্রান্সি ব্যাংকের ফয়সলিয়া শাখা মারফত দূতাবাসের ব্যাংক হিসাবে ৫১ লাখ রিয়াল জমা হয়।
অন্যদিকে, খুলনার পাইকগাছার গৃহকর্মী আবিরণ বেগম ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ রিয়াদের আজিজিয়াস্থ নিয়োগকর্তার বাসভবনে গৃহকর্ত্রী আয়েশা আহমাদ সগির আল জিজানি কর্তৃক নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আজিজিয়া পুলিশ গৃহকর্ত্রী আয়েশা আল জিজানী, গৃহকর্তা বাসেম সালেম সগির এবং তাদের পুত্র ওয়ালিদ বাসেম সালেমকে গ্রেপ্তার করেন।
দীর্ঘ বিচারকার্য শেষে ২০২১ সালে আদালত প্রধান আসামি গৃহকর্ত্রীর বিরুদ্ধে কেসাস (জীবনের বিনিময়ে জীবন) এবং অন্যান্য আসামিদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে করাদণ্ড ও ৫০,০০০ সৌদি রিয়াল অর্থদণ্ড প্রদান করে মামলার রায় ঘোষণা করেন।
উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের হলে আপিল আদালতের ফুল বেঞ্চ কেসাস বা মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির পরিবার ও সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে রক্তপণের বিনিময়ে আসামিকে ক্ষমা করার জন্য অনুরোধ জানানো হলে নিহতের পরিবার সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে আসামিদেরকে ক্ষমার সম্মতি প্রদান করে রাষ্ট্রদূত বরাবর আবেদন করেন।
সৌদি আরবে সর্বনিম্ন রক্তপণ ৩ লাখ সৌদি রিয়াল হলেও দূতাবাসের প্রচেষ্টায় নিহতের পরিবার ৪৮,৮০,০০০ সৌদি রিয়াল রক্তপণ পরিশোধের বিনিময়ে ক্ষমা করতে সম্মত হয়।
বিচারক গত ১৫ মে প্রধান আসামির হত্যার রায় বাতিল করে আপোস অনুযায়ী নিহত আবিরণ বেগমের বৈধ ওয়ারিশদের নামে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ বাবদ ৪৮,৮০,০০০ সৌদি রিয়াল ক্ষতিপূরণের চেক ইস্যু করেন এবং সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন পর তা দূতাবাসের অ্যাকাউন্টে জমা হয়।