গতকাল শনিবার বাংলাদেশ অর্থনীতি গবেষণা নেটওয়ার্ক, অ্যাসোসিয়েশন ফর ইকোনমিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ অন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
গবেষণা অনুসারে— সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধিতে শ্রমবাজারে যে নতুন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, বেসরকারি খাতের স্বল্প দক্ষ কর্মীরা তা মানিয়ে নিতে না পারায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, 'দারিদ্র্য ১০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি খাতের কর্মীদের মধ্যে এই হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তারা এখন দারিদ্র্যের হারের প্রায় ৪০ শতাংশ।'
ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (আইএফপিআরআই) গবেষণা বিশ্লেষক মো. আল-হাসান বলেন, 'যদি সরকারি চাকরিজীবীদের মজুরি বাড়ানো হয়, তাহলে তা সরাসরি সরকারি-বেসরকারি মজুরির পার্থক্য অনিচ্ছাকৃতভাবে অনেক বেড়ে যায়।'
অনুষ্ঠানে মো. আল-হাসান 'শ্রমবাজারে হস্তক্ষেপ ও বৈষম্য সৃষ্টি: একটি সাধারণ অভিজ্ঞতা' প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
তিনি জানান—গবেষণায় দেখা গেছে, বেসরকারি খাতের সবচেয়ে দক্ষ কর্মীরা নতুন শ্রমবাজারের পরিস্থিতি অনুযায়ী তাদের মজুরি সমন্বয় করতে পারলেও ন্যূনতম দক্ষ কর্মীরা তা করতে পারেন না। ফলে, তারা দরিদ্র হয়ে পড়েন।
বেসরকারি খাতের স্বল্প দক্ষ কর্মীদের বেতন ও খরচ যদি অপরিবর্তিত থাকে, তবে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ও অন্যান্য কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের মধ্যে দারিদ্র্য বেড়ে যায়।
আইএফপিআরআইর গবেষক মেহরাব বখতিয়ার, ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সৈয়দ আবুল বাশার ও অধ্যাপক সেলিম রশীদ যৌথভাবে গবেষণাপত্রটি তৈরি করেছেন।
গবেষণা বিশ্লেষক মো. আল-হাসান আরও বলেন, তারা সরকারের উদ্যোগের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখতে চেয়েছেন এটি অনিচ্ছাকৃতভাবে মানুষকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছিল কিনা।
তবে তিনি বলেন, গবেষণার ফলাফল এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১০ থেকে ২০১৬-১৭ সালের মধ্যে বেসরকারি খাতে ন্যূনতম দক্ষ কর্মীদের মজুরি প্রায় ৯০ শতাংশ ও সবচেয়ে দক্ষ কর্মীদের ক্ষেত্রে ১৪০ শতাংশ বেড়েছে। মাঝারি দক্ষ কর্মীদের মজুরি প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ৪৫ শতাংশ।
বিপরীতে, একই সময়ে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বেড়েছে ১৩০ শতাংশ থেকে ১৫৫ শতাংশের মধ্যে।
গবেষণা সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমিন মাসুদ আলী দারিদ্র্য বিমোচন ও স্থানীয় সরকার বিভাজন বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
তার পরামর্শ, প্রতিটি জেলায় ইউনিটের সংখ্যা বৃদ্ধি মাঝারি মাপের দারিদ্র্য কমানোর জন্য কার্যকর হাতিয়ার হতে পারে। তবে চরম দারিদ্র্য কমানোর জন্য ততটা কার্যকর নয়। চরম দারিদ্র্য কমানোর জন্য বিভাজন বাড়ানোর সুযোগ নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে সীমাবদ্ধ বলে মনে হয়।
দিনব্যাপী এ সম্মেলনে নয়টি প্রবন্ধ ও একটি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফাহাদ খলিল, সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্যামল চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আতনু রাব্বানী বক্তব্য রাখেন।
এমআই